দুদকের তদন্ত: নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের শামসুদ্দোহা দম্পতির স্থাবর সম্পদ ক্রোক

মারুফ কিবরিয়া, ঢাকা
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৪, ০৮: ৪২

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সাবেক চেয়ারম্যান ড. শামসুদ্দোহা খন্দকার ও তাঁর স্ত্রী ফেরদৌসী সুলতানা খন্দকারের নামে থাকা সব স্থাবর সম্পদ ক্রোক করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আদালতের নির্দেশে সম্প্রতি এসব সম্পদ ক্রোক করা হয়। 

দুদক সূত্র বলছে, এই দম্পতির ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা ১ হাজার ২৭ শতক স্থাবর সম্পদ (জমি) ক্রোক করা হয়েছে। দলিলে এসব জমির মূল্য ৭০ কোটি টাকার বেশি হলেও বর্তমান বাজারমূল্য সাড়ে তিন শ কোটি টাকার বেশি। মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে তাঁদের সম্পদ ক্রোকের জন্য গত ১১ ফেব্রুয়ারি দুদকের সহকারী পরিচালক খোরশেদ আলম আদালতে আবেদন করলে ১৪ ফেব্রুয়ারি তা মঞ্জুর হয়। 

ক্রোকের বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের সহকারী পরিচালক খোরশেদ আলম অপারগতা জানিয়ে জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। আকতারুল ইসলাম বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার জানা নেই। দুদকের আইনজীবী বলতে পারবেন।’ 

দুদকের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (বিশেষ পিপি) মোশাররফ হোসেন কাজল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বিআইডব্লিউটিএর সাবেক চেয়ারম্যান ড. শামসুদ্দোহা খন্দকার ও তাঁর স্ত্রীর স্থাবর সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেন। তবে সম্পদের পরিমাণ এ মুহূর্তে বলতে পারছি না।’

২০১১ সালের অক্টোবরে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান পদে যোগ দেওয়ার আগে শামসুদ্দোহা খন্দকার পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ছিলেন। বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠলে ২০১৫ সালে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। 

দুদকের সূত্র জানায়, অতিরিক্ত আইজিপি ও বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান থাকাকালে নানা অনিয়মের মাধ্যমে শামসুদ্দোহা খন্দকারের বিরুদ্ধে বিপুল সম্পদ গড়ার অভিযোগ উঠলে ২০১৮ সালে অনুসন্ধানে নামে দুদক। সম্পদের তথ্য চেয়ে একাধিকার নোটিশ দিলেও জবাব দেননি শামসুদ্দোহা খন্দকার। এ কারণে ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর দুদকের উপপরিচালক শাহীন আরা মমতাজ বাদী হয়ে এই দম্পতির বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। মামলার পর তাঁরা আদালতের মাধ্যমে সম্পদ বিবরণী জমা দেন। পরে মামলা তদন্তকালে দুদক একাধিকবার বিভিন্ন তথ্য চেয়ে চিঠি দিলেও সাড়া দেননি শামসুদ্দোহা। 

দুদক ও আদালত সূত্র জানায়, তদন্তকালে শামসুদ্দোহা খন্দকারের নামে রাজধানীর খিলক্ষেত ও ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলায় ৩৫টি দলিলে ৫৬৩ শতকের বেশি জমির খোঁজ পাওয়া গেছে। এসব জমির বেশির ভাগই নবাবগঞ্জের কলাকোপায়। দলিলে এসব স্থাবর সম্পদের মূল্য ৪০ কোটির মতো হলেও বর্তমান বাজারমূল্য আড়াই শ কোটি টাকার বেশি। এর বাইরে একটি অরগানিক অ্যাগ্রো ফার্ম ও ওয়ান্ডারেলা গ্রিন পার্ক রয়েছে। দলিলে এ দুটির মূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা। 

দুদকের তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ফেরদৌসী সুলতানা খন্দকারের নামে রাজধানীর নিকুঞ্জে ৩ কাঠা, খিলক্ষেতে ২২ কাঠা, গুলশানের বিভিন্ন মৌজায় ৫৩ কাঠা জমির তথ্য পাওয়া গেছে। এগুলোসহ গাজীপুর ও নবাবগঞ্জের বিভিন্ন মৌজায় সর্বমোট ৩২টি দলিলে তাঁর নামে ৪৬৪ শতক জমি রয়েছে। দলিলে এসব জমির মূল্য ৩০ কোটি টাকার কিছু বেশি হলেও বর্তমান বাজারমূল্য শতকোটি টাকার ওপরে। 
জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর সাবেক চেয়ারম্যান শামসুদ্দোহা খন্দকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুদকের তদন্ত ও ক্রোকের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আমার আইনজীবী জানেন।’ তবে আইনজীবী সম্পর্কে তিনি কোনো তথ্য দেননি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত