নেছারাবাদে নার্সারি বিপ্লব

মো. হাবিবুল্লাহ, নেছারাবাদ (পিরোজপুর)
প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯: ১৭

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার স্বরূপকাঠি-বরিশাল মহাসড়ক দিয়ে গেলে যে কারও মন জুড়াবে নানা রঙের ফুলে। সড়কের দুই পাশে তাকালে চোখে পড়বে অসংখ্য ফুল, ফল ও নানা ধরনের কাঠের চারার নার্সারি।

উপজেলার ৩৮টি গ্রামে ৫০০ হেক্টর জমিতে কয়েক শ নার্সারি গড়ে উঠেছে। তবে নার্সারি গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে স্বরূপকাঠি সদর ইউনিয়নের অলংকারকাঠি। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত নার্সারিতে ফোটা বাহারি ফুলে ঢেকে যায় শতাধিক নার্সারি। গ্রামটি দেখে মনে হতে পারে, যেন পুরো গ্রাম ফুলের গালিচায় মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

খ্যাতি ছড়ানো এসব নার্সারিতে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজারো মানুষের। দিন দিন এই ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় ক্রমেই বদলে যাচ্ছে উপজেলার নিম্নআয়ের মানুষের জীবনধারা। এখানকার প্রায় সব মানুষ নার্সারি করে বারো মাস ফল, ফুল ও কাঠের চারা উৎপাদন 
করছে। এই আয় থেকে তারা স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি হয়ে উঠছে সচ্ছল।

স্থানীয় নার্সারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এবারের শীতের মৌসুমে প্রায় শতকোটি টাকার ফুল ও ফুলের চারা বিক্রি হবে। তাঁরা নার্সারি দিয়ে নিজে সচ্ছল হওয়ার পাশাপাশি অন্যজনকে দিয়েছেন কর্মের সন্ধান। যে কারণে নার্সারিসমৃদ্ধ এলাকায় কমে গেছে বেকার ও দরিদ্রের সংখ্যা।

অলংকারকাঠি গ্রামের বাসিন্দা হাসি বেগম বলেন, ‘স্বামীর একার আয়ে সংসার চালাতে খুব কষ্ট হতো। এ জন্য আগে সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকত। এখানে নার্সারিতে কাজ করি। প্রতিদিন দুই শ টাকা মজুরি পাই। বাড়তি এই আয় দিয়ে সংসার ভালোই চলছে।’

নার্সারি ব্যবসায়ী মাইনুদ্দীন সিকদার সুজন বলেন, ‘আমি ২০ বছর ধরে নার্সারি পেশায় যুক্ত। একসময় অন্যের নার্সারিতে কাজ করতাম, এখন অন্যের জমি বর্গা নিয়ে নার্সারি তৈরি করেছি। সেখানে ১৫-২০ ধরনের ফুল, ফল ও কাঠের চারা আছে। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ফুলের ভরা মৌসুম। এই পাঁচ মাস নার্সারি থেকে তিন লাখের বেশি টাকার ফুল ও চারা বিক্রির আশা করছি।’

সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, অলংকারকাঠি গ্রামের রাস্তার দুই ধারে মাঠজুড়ে সারি সারি নার্সারি। সব নার্সারিতে রয়েছে ফুল, ফল, কাঠ এবং ঔষধি গাছের চারা। তবে শীত মৌসুম হওয়ায় প্রতিটি নার্সারি বাহারি ফুলে সজ্জিত। দেখে মনে হয়, এ যেন ফুলের চাদরে ঢাকা গ্রাম। এ সময় নার্সারিতে বেচাবিক্রির ধুম পড়ে। প্রতিনিয়ত স্থানীয় লোকজনসহ দূরদূরান্ত থেকে নার্সারি দেখতে আসেন নানা বয়সী মানুষ। কেউ ছবি তোলেন, কেউ আবার ঘুরে ঘুরে দেখে ফুল ও ফলের চারা কিনে নিয়ে যান। চলে খুচরা পাইকারি বেচাকেনা।

মো. শাওন নামের এক নার্সারি ব্যবসায়ী বলেন, ‘অলংকারকাঠি গ্রামে সড়কের দুই পাশে  দেড় শতাধিক নার্সারি রয়েছে। প্রতিটি নার্সারিতে ৫-৭ জন শ্রমিক প্রতিনিয়ত কাজ করেন। সব মিলিয়ে গ্রামটির নার্সারিতে হাজারেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এখানে বেকারত্বের হার অনেক কম।’

নার্সারিতে বেড়াতে আসা তাহমিনা ফ্লোরা নামের এক আমেরিকাপ্রবাসী বলেন, ‘আমেরিকায় বাসার সামনে বাগান আছে। ফুলের চারা কেনার জন্য ঢাকায় এসেছিলাম। কিন্তু ঢাকায় অনেক দাম। পরে অলংকারকাঠি গ্রামের খবর পেয়ে এখানে আসি।’

নেছারাবাদ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা চপল কৃষ্ণ নাথ বলেন, ‘উপজেলায় মোট ৫০০ হেক্টর জমিতে নার্সারি রয়েছে। সব মিলিয়ে এই পেশায় ৬-৭ হাজার লোক যুক্ত রয়েছে; বিশেষ করে এসব নার্সারিতে অনেক নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত