প্রত্যাশা আকাশছোঁয়া, প্রস্তুতিও ব্যাপক

নাজমুল হাসান সাগর, ঢাকা
প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২২, ০৭: ০৮
আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২২, ১১: ০৪

করোনার কারণে গত দুই বছরে প্রত্যাশা অনুযায়ী উৎসবকেন্দ্রিক ব্যবসা করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। এবার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পয়লা বৈশাখ ও ঈদুল ফিতরে সেই আক্ষেপ ঘুচানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন তাঁরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শেষ পর্যন্ত সবকিছু ঠিক থাকলে এবার তাঁদের ব্যবসা পুরোনো সব রেকর্ড ভাঙবে। অবশ্য গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত খুব বেশি ক্রেতার আনাগোনা দেখা যায়নি। তবে ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, আজ শুক্রবার ছুটির দিন থেকে শুরু হবে উৎসবকেন্দ্রিক বিকিকিনি।

গতকাল রাজধানীর নিউমার্কেট ও আশপাশের শপিং মল ঘুরে দেখা যায়, কেনাকাটা খুব একটা জমেনি এখনো। কিছু মানুষ এসেছেন, তবে এখনই কেনাকাটা করছেন না তাঁরা। ঈদ ও পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে বিশেষ কী আয়োজন এসেছে, মূলত তা দেখছেন তাঁরা। মার্কেটের সামনে ফুটপাতে অল্পবিস্তর ক্রেতার চাপ দেখা গেছে। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জিনিসপত্রের দাম নিয়ে পাওয়া গেল বিস্তর অভিযোগ। তাঁরা বলছেন, এবার উৎসবের বাজারেও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে।

নিউ সুপার মার্কেটের সুরমা গার্মেন্টের সুপারভাইজার মো. রুবেল বললেন, নিত্যপণ্যের বাড়তি দামের প্রভাব তো স্বাভাবিকভাবেই ঈদ ও পয়লা বৈশাখের বাজারেও পড়বে। এ কারণে মার্কেটে মানুষের আনাগোনাও কম। আগের বছরগুলোয় এমন সময়ে বিশেষ করে বাচ্চাদের জামাকাপড় কেনার ধুম পড়ে যেত। কিন্তু এবার সেই ব্যস্ততা নেই।

নিউ সুপার মার্কেটে বাচ্চার কাপড় কিনছিলেন আজমেরী রহমান নামের এক নারী। তিনি বলেন, ‘অন্যবারের তুলনায় এসব দোকানে একেকটি জামায় অন্তত ৫০০ টাকা বেশি দাম চাইছেন বিক্রেতারা। এর নিচে কেউই বিক্রি করতে রাজি হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের বাজেট তো আগের মতোই রয়েছে। তাই এবার জিনিসপত্র কম কিনতে হবে।’

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বাজারে কিছুটা অস্বস্তি থাকলেও গত দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যবসায়ীরা এবার ঈদ ও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বাড়তি পুঁজি খাটিয়েছেন বলে জানালেন নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল এরপর পৃষ্ঠা ২ কলাম ৪

ইসলাম। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুধু ঈদ বা পহেলা বৈশাখ নয়। ঈদের পরে একটা বিয়েসাদির বিষয়ও থাকে আমাদের দেশে। সেটাও এবারের বাজার চাঙা রাখবে। এখনো তেমন বিক্রি শুরু না হলেও ১০ রোজার পর থেকে আমাদের ব্যবসা ভালো হবে। যদি কোনো দুর্যোগ না আসে তাহলে আশা করছি, এবার আমরা ভালো ব্যবসা করতে পারব। এবার ব্যবসাটা হলে আমরা গত কয়েকবারের হারানো পুঁজি ফিরে পাব।’

ছোট ছোট বিপণিবিতানগুলোয় কিছু লোকসমাগম দেখা গেলেও একেবারেই বিপরীত চিত্র দেখা গেছে বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের মতো অভিজাত বিপণিবিতানে। গতকাল বিকেলে সেখানে গিয়ে উৎসবকেন্দ্রিক কোনো আমেজ বা আয়োজন চোখে পড়েনি। পরিচিত ব্র্যান্ডের কিছু শোরুম বাদে অন্য দোকানগুলোয় অলস সময় পার করতে দেখা গেছে কর্মচারীদের। একাধিক দোকানের কর্মচারীরা জানালেন, তাঁদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। এখন শুধু ক্রেতাদের অপেক্ষা। তবে এই কয় দিনেও ক্রেতাদের তেমন সারা না পেয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তার কথা শোনালেন অনেকেই।

তিন তলার এ ব্লকের দীপ্তমনি ফেব্রিক্সের স্বত্বাধিকারী ধীরেন চন্দ্র পাল বলেন, ‘ক্রেতা সমাগম নেই বললেই চলে। শুক্রবার (আজ) যদি বিক্রি শুরু না হয় তাহলে এটা চলে যাবে ১০ রোজার পর। করোনার কারণে বর্ডার বন্ধ থাকায় মালামাল আনার খরচ বেড়ে যাওয়ায় ড্রেসের দাম এবার অনেক বেশি। এটার প্রভাব পড়বে বাজারে, তাই আমরা কিছুটা চিন্তিত। তবে একই কারণে আমরা আবার কিছুটা সুবিধাও পাব। কারণ, দেশের বড় একটা অংশ ঈদের আগে ইন্ডিয়ায় যায় কেনাকাটা করতে। কিন্তু এবার সেই সুযোগ নেই। তাই এসব ক্রেতারা বড় বড় অভিজাত বিপণিবিতানেই আসবেন। দেরিতে হলেও আমরা এসব ক্রেতাদের পাব।’

শুরুর দিকে এসব শপিং মলে ক্রেতা ও ব্যবসা কম হওয়ার জন্য অনলাইনে বিভিন্ন পেজে রেপ্লিকা ড্রেস বিক্রি হওয়াকেও দায়ী করছেন অনেকেই। বাহির থেকে যেসব ড্রেস বিভিন্ন দোকানে ৫ হাজার টাকায় আনে সেসব ড্রেসের রেপ্লিকা অনলাইন পেজগুলো আড়াই-তিন হাজার টাকাতেই বিক্রি করছে। তাই স্থায়ী ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

তবে শেষ পর্যন্ত সব আশঙ্কা উড়িয়ে বিগত দুই বছরে ঈদকে কেন্দ্র করে যে অর্থনৈতিক লেনদেন হয়েছে, এবার তারচেয়ে অন্তত ২০ শতাংশ বেশি লেনদেন হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এবার বিগত কয়েক বছরের থেকে অনেক ভালো ব্যবসা হবে। ইতিমধ্যেই আমরা সেটার লক্ষণ দেখেছি। আমাদের যে লক্ষ্য ছিল সেটা পূরণ হবে এবং আমরা সে অনুযায়ী মালও মজুদ রেখেছি। আমরা আশা করছি, এবার সারা দেশে ঈদকে কেন্দ্র করে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত