মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন চা-শ্রমিকেরা

ইয়াহ্ইয়া মারুফ, মৌলভীবাজার থেকে ফিরে
প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১১: ০০
আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১১: ৪৭

লড়াইটা সমানে সমান হওয়ারই কথা। মৌলভীবাজার-১ আসনে আওয়ামী লীগ আর বিএনপি কেউ কাউকে ছাড় দেয় না। এমনকি জাতীয় পার্টিরও রয়েছে ভোটব্যাংক। তবে সীমান্তবর্তী উপজেলা জুড়ী ও বড়লেখা নিয়ে গঠিত এ আসনের ভোটের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংক আসলে এখানকার চা-বাগান। বড়লেখায় ১৮টি ও জুড়ীতে ১৬টি চা-বাগানে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার ভোট রয়েছে। এমনিতে চা-শ্রমিকদের একচেটিয়া ভোট পড়ে নৌকায়। তবে আওয়ামী লীগের অবস্থান একচেটিয়া নয়। বিএনপিরও আছে ‘বড় ভোটব্যাংক। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকার কারণে বিএনপির কর্মী-সমর্থকেরা এখন অনেকটাই নীরব। তবে সুযোগ পেলে এই ‘নীরব’ সমর্থকেরাই ঘুরিয়ে দিতে পারেন ভোটের মোড়।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো অন্তত এক বছর বাকি। এরই মধ্যে জেলার গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। জুড়ী ও বড়লেখার ভোটাররা জানান, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। তবে বিএনপির তেমন প্রস্তুতি নেই। নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, কারা প্রার্থী হচ্ছেন তা নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ ততই বাড়ছে। এখন প্রশ্ন একটাই—কারা হচ্ছেন বড় দলগুলোর প্রার্থী।

নব্বই-পরবর্তী সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি শুধু একবারই জিতেছে। সেটা ২০০১ সালে। আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন। তিনি টানা তিনবারসহ চারবারের এমপি। আগামী নির্বাচনে দলটির সম্ভাব্য প্রার্থী। তবে মনোনয়ন পেতে তোড়জোড় শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য এস এম জাকির হোসাইন এবং বড়লেখা উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সুন্দর।

বিএনপি থেকে সক্রিয় অবস্থানে রয়েছেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি নাসির উদ্দিন মিঠু এবং কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শরীফুল হক সাজু (কাতারপ্রবাসী)। জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা আমিনুল ইসলাম এবং জাতীয় পার্টির আহমেদ রিয়াজউদ্দিন দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলের হাইকমান্ডে লবিং এবং তৃণমূল পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। এ আসন নিয়ে বিরোধ না থাকলেও কোন্দল দেখা গেছে দলে। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের ভাগনে সোয়েব আহমদ ঘোড়া প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন। রফিকুল ইসলাম সুন্দর সে নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে পরাজিত হন। আওয়ামী লীগ থেকে অভিযোগ আছে, মন্ত্রী সরাসরি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম সুন্দরের বিরুদ্ধে কাজ না করলেও ভাগনে সোয়েব আহমদকে মৌন সমর্থন দেন। তাঁকে জয়ী করতে কাজ করেন। মন্ত্রীর সময়ে এলাকায় দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হয়নি। ব্যক্তিগতভাবে শান্ত ও সজ্জন বলে পরিচিত এই নেতা মন্ত্রী হওয়ার পর এলাকায় সময় কম দেন। কিছু রাস্তাঘাট বেহাল এবং অন্য উন্নয়নকাজে ধীরগতি নির্বাচনী দৌড়ে কিছুটা পিছিয়ে দিতে পারে তাঁকে।

ময়দান চষে বেড়াচ্ছেন এস এম জাকির হোসাইন। গত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত দুই উপজেলার বন্যাদুর্গত এলাকায় তিনি মানুষের ঘরে ঘরে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে গেছেন। মাঠে সক্রিয় থাকার কারণে এ নেতা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। জাকির হোসাইন বলেন, ‘শেখ হাসিনা এখন তরুণদের প্রাধান্য ও মূল্যায়ন করছেন। জুড়ী ও বড়লেখার জনগণ চাইলে দলও আমাকে মূল্যায়ন করবে। নৌকা হারানোর পেছনে যাদের অবদান রয়েছে, নেত্রী তাদের হাতে আর নৌকা তুলে দেবেন বলে মনে হয় না।’

গুঞ্জন রয়েছে, রফিকুল ইসলাম সুন্দর এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে জোরেশোরে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দলীয় নেতা-কর্মীরা পরিবর্তন চায়। তারা চায় আমি নির্বাচনে প্রার্থী হই। বর্তমান এমপির সময় সারা দেশের তুলনায় জুড়ী ও বড়লেখার দৃশ্যমান তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। চা-শ্রমিকদের জীবনমানের পরিবর্তন হয়নি।’

এদিকে টানা ১৪ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকায় জেলাজুড়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রকাশ্য কোন্দল রয়েছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপির সমঝোতার ভিত্তিতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। নির্বাচন ঘিরে বিএনপির তৎপরতা নেই বললেই চলে। নেতা-কর্মীরা অগোছালো কাজ করছেন। তবে এর মধ্যেই নাসির উদ্দিন মিঠু নির্বাচনী এলাকায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করছেন। শরীফুল হক সাজুর অনুসারীদের মাঝেমধ্যে মাঠে দেখা যায়। তবে প্রবাসী হওয়ায় স্থানীয় নেতা-কর্মী ও জনসাধারণের সঙ্গে তেমন সম্পৃক্ততা নেই তাঁর।

নাসির উদ্দিন মিঠু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শতভাগ নিরপেক্ষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে দল নির্বাচনে যাবে। আমাদের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সব সময় প্রস্তুত। আমরা তো সারা বছর কাজ করছি। আমাদের সাংগঠনিক কোনো ত্রুটি নেই।’

নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, মৌলভীবাজার-১ আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৬৫ হাজার ৮০৯। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩২ হাজার ৭৩৬ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭৩ জন। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত