বিলের ধারে বিরল বৃক্ষ

চয়ন বিকাশ ভদ্র, ময়মনসিংহ
প্রকাশ : ১২ মে ২০২২, ০৭: ০০
আপডেট : ১২ মে ২০২২, ১০: ৩১

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ইউনিয়নের বাঁশতলী গ্রাম। এ গ্রামের কালিয়াদহ বিলের ধারে বিরল এক বৃক্ষ দাঁড়িয়ে আছে। প্রায় তিন শ বছর ধরে দুই বিঘা জমির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল এ গাছের উচ্চতা প্রায় ১০০ ফুট। ঝড়-বৃষ্টি-রোদে মানুষকে আগলে রাখলেও স্থানীয় মানুষ এর নাম জানত না। তাদের কাছে গাছটি ‘অচিন বৃক্ষ’ নামে পরিচিত ছিল। দীর্ঘদিন গাছটির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করে বিপন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী সংরক্ষণ ফাউন্ডেশন ২০১৫ সালের ২২ মে আনুষ্ঠানিকভাবে গাছটির নাম দেয় সাদা পাকুড়। সম্প্রতি গাছটি দেখতে গিয়েছিলাম কালিয়াকৈর উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের বাঁশতলী গ্রামে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ গাছটি দেখতে আসেন।

গাছটির বৈশিষ্ট্যগত ভিন্নতা আছে। প্যাঁচানো অস্থানিক মূল কাণ্ডকে বেষ্টন করে থাকে। বটগাছের মতোই বিশাল ও বিস্তৃত এর ডালপালা। ঝুড়ি বা অস্থানিক মূল বের হয়ে ঝুলতে ঝুলতে মাটিতে পৌঁছেছে। ঝুড়িগুলো গাছের গোড়ার চারদিকে এমনভাবে পেঁচিয়ে রেখেছে যে গাছের আসল কাণ্ডকেই আর খুঁজে পাওয়া যায় না।

গাছটিতে সাধারণত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ডুমুরের মতো ছোট গোলাকার সাদা রঙের ফল ধরে। এই বৈশাখে ফলের সংখ্যা খুব কম। সাধারণত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় এই গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম ফিকাস ভিরেন্স ভার. সাবল্যান্সিওলেটা। এটি মরেসিই গোত্রের গাছ। ইংরেজিতে এটি হোয়াইট ফিগ নামে পরিচিত। বাংলাদেশ ও এর আশপাশের দেশগুলোতে এটি বিরল বৃক্ষ। চৈত্র-বৈশাখ মাসে এ গাছের পাতা ঝরে গিয়ে নতুন পাতা গজায়।

সাদা পাকুড়ের সাদা রঙের ফল পাখিদের প্রিয় খাবার। এর শিকড় বিশাল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। এর মসৃণ ও অনেকটা ডিম্বাকৃতি পাতার রং গাঢ় সবুজ। তবে কচি পাতার রং হালকা সবুজ। পাতার শিরা স্পষ্ট, বাকল মসৃণ ও লালচে আভাযুক্ত ধূসর রঙের। সাদা পাকুড় ক্ষীরিবৃক্ষ হওয়ায় এদের ডাল-পাতা-ফল কাটলে সাদা আঠা বের হয়। নতুন পাতা গজানোর পরপরই গাছে ফুল আসে। কিন্তু ডুমুরজাতীয় গাছের পুষ্পমঞ্জরির মতো গর্ভে লুকিয়ে থাকে। পরাগায়নের জন্য ফুলগুলো এক ধরনের পোকার ওপর নির্ভরশীল। ফুল থেকেই ফল হয়। হেমন্তকাল পর্যন্ত গাছে থাকে সাদা রঙের মসৃণ, গোলাকার ও ছোট ফল। পাকা ফলের রং হালকা হলুদ। ফলের ভেতর সরিষার বীজের মতো ছোট ছোট অনেক বীজ থাকে, যা পাখিদের খুবই প্রিয় খাবার। আশপাশের কোনো গ্রামে এই বৃক্ষ পাওয়া যায়নি। তা থেকে বোঝা যায় পাখির বিষ্ঠার মাধ্যমে এর বংশবৃদ্ধি হয় না।

গাজীপুরের এই গাছ ছাড়া ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা উপজেলার বাতিয়া গ্রামে, দিনাজপুর-পঞ্চগড় মহাসড়কের সদর উপজেলার চেহেলগাজী ইউনিয়নের গোপালগঞ্জ হাটের রাস্তার পাশে এবং কুড়িগ্রাম জেলা সদরের তিন কিলোমিটার পশ্চিমে টোগরাইহাট রেলওয়ে স্টেশনের দক্ষিণে পাউলা বিলের ধারে সাদা পাকুড়গাছ রয়েছে। সে গাছগুলোও কয়েক বছর আগে অচিন বৃক্ষ নামে পরিচিত ছিল।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত