পানি নেই, পাট জাগ যেন কৃষকের ‘গলার কাঁটা’

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২২, ১৪: ১৯

ফলন ভালো হলেও পাট পচাতে গিয়ে খরচ বেড়েছে চাষিদের। বর্ষা মৌসুমেও পানির অভাব। তাই বাধ্য হয়ে শ্যালো মেশিনে পানি তুলে পাট জাগ দিতে হচ্ছে তাঁদের। এভাবে চলতি মৌসুমে পাটের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গার ৪ উপজেলাতেই পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। এবার ৪ উপজেলায় ২০ হাজার ৭২৯ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে বেশি পাটের চাষ হয়েছে এবার। কিন্তু তাতেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। এবারের বর্ষা মৌসুমে প্রয়োজনমতো বৃষ্টি হয়নি। তাই খালবিলে পাট জাগ দেওয়ার মতো পানি না থাকায় কৃষকেরা বিপাকে পড়েছেন।

এদিকে পানির জন্য অপেক্ষা করে খেতের পাট শুকিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ গাড়িতে করে দূরে মাথাভাঙ্গা বা চিত্রা নদীতে জাগ দিতে পাট নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ পাশের পুকুর-ডোবা-নালায় শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি জমিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন।

তাতে পাট চাষে খরচ বাড়ছে তিন-চার গুণ। অনেক কৃষক পাট কেটে ধান লাগানোর আশায় আগাম পাট চাষ করে বিপাকে পড়েছেন।

সদর উপজেলার কুলচারা গ্রামের কৃষক আব্দুল আলিম বলেন, তিন বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। বৃষ্টির অপেক্ষায় থেকে শেষমেশ ৭ টাকা আঁটি দরে সড়কের পাশের গর্তে পলিথিন বিছিয়ে শ্যালো মেশিনের পানিতে পাট পচাতে দিয়েছেন। এতে তাঁর বিঘাপ্রতি বাড়তি ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।

সদর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের পাটচাষি আবুল হোসেন বলেন, ‘আমার ১৫ বিঘা জমিতে পাট রয়েছে। পাট কেটে মিষ্টিকুমড়ার আবাদ করব। কিন্তু পানির অভাবে পাট কাটতে পারছি না। শ্যালো মেশিনের মালিকেরা গর্তে পানি দিয়ে ৭ টাকা করে আঁটি চাচ্ছে। এতে অনেক বাড়তি খরচ হয়ে যাবে। এদিকে পাট জমিতেও রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ২-১ দিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে আর রাখা যাবে না। তখন ৭ টাকা আঁটি দরেই পচাতে হবে।’

দামুড়হুদার মুক্তারপুর গ্রামের সেলিম উদ্দীন বলেন, ‘আমার আড়াই বিঘা জমিতে পাট রয়েছে। কিন্তু কীভাবে পাট পচাব, সেই চিন্তায় আছি। নদীতেও পচাতে দিচ্ছে না। কোথাও পানি নেই। শ্যালো মেশিনের পানি দিয়ে পচাতে গেলে অনেক বেশি খরচ হয়ে যাবে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, ‘চলতি মৌসুমে মাঠে ভালো পাট হয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় খাল, বিল, ডোবায় পানি না থাকায় পাট জাগ দেওয়ার পানি নেই। সে কারণে চাষিরা পাট কাটতে পারছেন না। অনেক উঁচু জমিতে পাট শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। অনেকে নিচু এলাকায় শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি কিনে জাগ দিচ্ছে। সহজে পাট পচাতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে আমরা পাট পচানোর পরামর্শ দিচ্ছি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত