‘মিনি কক্সবাজারে’ পর্যটকের সঙ্গে বাড়ছে রেস্তোরাঁ

শরীফ হাসান, দোহার (ঢাকা)
প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২২, ০৫: ৪৫
আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২২, ১৭: ১৪

মৈনট ঘাট থেকে দূরে তাকালে সমুদ্রের বেলাভূমির খানিকটা আভাস মেলে। দিগন্ত ছুঁয়ে থাকা পদ্মার উত্তাল ঢেউয়ের মাথায় দুলতে থাকা নৌকা, ডুবুডুবু স্পিডবোটের ছুটে চলা, পাড়ে সারিবদ্ধ ছাতার তলায় পেতে রাখা হেলান-চেয়ার। সেই সঙ্গে পদ্মার পাড়ে শেষ বেলায় সূর্য ডোবার দৃশ্য। ঘাটের কাছাকাছি দুই পাশে হোটেলের সারি। সেগুলোর সাইনবোর্ডে ঘাটের পরিচিতি ‘মিনি কক্সবাজার’।

ঢাকার দোহার উপজেলার পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীর কোলে মৈনট ঘাটখ্যাত ‘মিনি কক্সবাজার’। দোহারের জয়পাড়া থেকে দূরত্ব প্রায় আট কিলোমিটার। নদীর অপর পারে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন এলাকা। পদ্মা নদী ভাঙতে ভাঙতে দোহারের প্রান্তে এখন চরমোহাম্মদপুরে এসে ঠেকেছে। আর এখান থেকেই ফরিদপুরের উদ্দেশে যাত্রীরা ট্রলার বা স্পিডবোট দিয়ে পার হন। এটি মৈনট ঘাট নামে পরিচিত। ঢাকার গুলিস্তান থেকে সরাসরি পাকা সড়ক চলে এসেছে ঘাট পর্যন্ত। এই রুটে বাস সার্ভিসও চালু আছে।

বাড়ির কাছেই সমুদ্রসৈকতের আবহ উপভোগ করতে প্রচুর লোকসমাগম হতো এখানে। তবে করোনার পর থেকে লোকসমাগম অনেকটাই কমে গেছে। গড়ে উঠেছে বেশ কিছু খাবার হোটেল। শুকনো মরিচসহযোগে ডুবো তেলে ইলিশ ভাজার সৌরভ ছড়িয়ে পড়ছে পদ্মার বুক ছুঁয়ে ধেয়ে আসা ঘাটপাড়ের ভেজা হাওয়ায়।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. রাসেল জানান, নদীর পাশের এই নিচু জমি ২০১৪ সালে বন্যায় তলিয়ে যায়। উত্তর পাশে বালু পড়লেও দক্ষিণের অংশে পুরু হয়ে পলি পড়ে। পানি নেমে যাওয়ার পর পলিমাটি জমে থাকা জায়গাটি অনেকটা সমুদ্রসৈকতের মতো দেখায়। বালু না থাকায় চলাফেরাও বেশ সুবিধাজনক। নদী পারাপারের সময় অনেকে এখানে এসে ছবি তোলেন। ফেসবুকে সেই ছবি দিতে থাকেন। সেই ছবি দেখে লোকে এখানে বেড়াতে আসতে থাকে। লোকসমাগম দিন দিন বাড়তে থাকে। তা ছাড়া বিশেষ ছুটির দিনে এখানে হাজারো মানুষের সমাগম হয়। শুক্র-শনিবার আর ছুটির দিনেও ২-৪ হাজারের মতো মানুষ এখানে বেড়াতে আসে।

লোকসমাগম বাড়তে থাকায় বেশ কিছু খাবার হোটেল হয়েছে নদীপাড়ে। নদীতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য ছাউনি দেওয়া নৌকাও আছে ঘাটে দাঁড়িয়ে। নৌকায় মোটামুটি ভালোই আয় হচ্ছে। নৌকার মাঝি সিদ্দিকুর রহমান জানান, ‘নৌকায় পরিবারসহ ঘুরতে গেলে ভাড়া পড়ে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। শতকরা ৩০-৪০ টাকা টোল দিতে হয় বলে আমরা ভাড়া বেশি নিই। এ কারণে ঘাট পার হতে যাত্রীভাড়াও বেশি।’ ছাতার তলায় পাতা চেয়ারগুলো আগে ভাড়া নেওয়া যেত প্রতিটি ৫০-১০০ টাকা ঘণ্টায়। এখন হোটেলে খাবার খেলেই এ সুবিধা পাওয়া যায়।

মৈনট ঘাটের চরটি এখন প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ। অনেকে হাঁটাহাঁটি করছেন, কেউবা হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দেখেন পদ্মা। সাহস করে নেমেওss পড়েন কেউ কেউ। তবে প্রহরারত পুলিশ সদস্যরা তাঁদের সতর্ক করে দেন, ‘সাঁতার না জানলে পানিতে নামবেন না।’ জানা যায়, কয়েক বছরে নদীতে নেমে প্রায় ১২ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

পদ্মার পাড়ে এসে ইলিশের স্বাদ না নিয়ে ফিরলে মনে যেন আক্ষেপ না হয়, সেই ব্যবস্থা করে রেখেছেন হোটেলমালিকেরা। আস্ত ইলিশ ভাজা থেকে শুরু করে ইলিশভর্তাসহ ইলিশের হরেক রকম পদ পাওয়া যায় হোটেলগুলোতে।

পদ্মা বিলাস খাবার হোটেলের মালিক শেখ কামাল জানান, তিনি ২০১১ সাল থেকে এখানে হোটেল ব্যবসা করছেন। তাঁর হোটেলসহ আগে এখানে মোটে তিনটি হোটেল ছিল। আস্তে আস্তে লোকসমাগম বাড়ায় হোটেল হয়েছে ১৪টি। এ ছাড়া আছে অনেক চায়ের দোকান। বিকেলে নদীর চরে ফুচকা-চটপটিওয়ালারা যান। সব মিলিয়ে বেশ জমজমাট পরিবেশ।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত