ডিমলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টাকা ছাড়া সেবা মেলে না

মাসুদ পারভেজ রুবেল ডিমলা (নীলফামারী)
প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১: ২৫
আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১: ২৭

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে আসা সব রোগীকে পদে পদে টাকা গুনতে হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগে ৩ টাকা মূল্যের টিকিট ৫ ও জরুরি বিভাগে ৭ টাকা মূল্যের টিকিট ১০ টাকা করে নেওয়া হয়। এ ছাড়া বিনা মূল্যে ড্রেসিং সেবা পাওয়ার কথা থাকলেও রোগীদের খরচ হয় ৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। 

সেবাগ্রহীতারা বলেন, বিনা মূল্যে যেসব সেবা পাওয়ার কথা, টাকা খরচ না করলে এর সামান্যও এই হাসপাতালে মেলে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় এমনটি হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।

সূত্রে জানা গেছে, এই হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ রোগী টিকিট কেটে চিকিৎসা নেন। এখানে বহির্বিভাগে রোগী দেখার জন্য সরকারিভাবে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩, আর জরুরি বিভাগের জন্য ৭ টাকা। সম্প্রতি সরেজমিনে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অন্তত ২০ জন রোগী ও তাঁদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টিকিটের মূল্য হিসাবে কারও কাছ থেকে ১০, কারও কাছ থেকে ৭, আবার কারও কাছ থেকে ৫ টাকা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যেসব রোগী ড্রেসিং করেছেন তাঁদের সবাইকে ৫০ থেকে ২০০ টাকা দিতে হয়েছে। সেলাই বা প্লাস্টারের ধরনের ওপর নির্ভর করে টাকার পরিমাণ। তবে সে ক্ষেত্রেও ৩০০ টাকার কম নয়। 

পিঠে ফোঁড়া রোগ নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন এক ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাঁকে ড্রেসিংরুমে পাঠানো হয়। সেখানে কর্তব্যরত অফিস সহায়ক আব্দুল হালিম এই সেবার জন্য তাঁর কাছ থেকে ১০০ টাকা নেন। উপজেলার কালীগঞ্জ থেকে আসা ফজলুল হক তাঁর পায়ের দুটি সেলাই কাটতে ৫০ টাকা দিয়েছেন। তিনি জানান, পায়ের ক্ষতস্থানে ড্রেসিং করতে তাঁকে পরপর দুদিন আসতে হয়েছে। বিনা মূল্যে ড্রেসিং সেবা পাওয়ার কথা থাকলেও ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বকশিশ দিতে হয়েছে। টাকা না দিলে প্রকৃত সেবা মেলে না। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ড্রেসিং করার দায়িত্ব মূলত সিনিয়র স্টাফ নার্সদের। কিন্তু সেটিও করেন হাসপাতালের অফিস সহায়ক ও ওটিবয়। ড্রেসিংরুমে দায়িত্ব পালন করা অফিস সহায়ক আব্দুল হালিম ও ওটিবয় ফরিদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, ‘রোগীর লোকজন খুশি হয়ে, আবার কেউ জোর করে ৫০-১০০ টাকা দেন।’ 

বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা অফিস সহায়ক জমশেদ আলী ও মামুন ইসলাম বলেন, ‘খুচরা দিতে ঝামেলা হয়। তাই টিকিটের দাম ৫ টাকা করেই নেই। বিষয়টি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবাই জানেন। তবে যাঁদের কাছ থেকে ৫ টাকার বেশি রাখি, তাঁদের টিকিটের পেছনে লিখে দেই। পরে তাঁদের টাকা দিয়ে দেওয়া হয়।’ তবে মামুন দাবি করে বলেন, ‘পাশের সব উপজেলায় বহির্বিভাগের টিকিটের দাম ১০ টাকা নেয়। সে হিসেবে আমরা কম নিচ্ছি।’ এটা অনিয়ম কি না জানতে চাইলে মামুন বলেন, ‘আমি যোগদান করার পর থেকে দেখি এভাবে নিচ্ছে।’ 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ হাসপাতালে সব সেবাই বিনা মূল্যে পাওয়া যায়। কেবল এক্স-রে, প্যাথোলজি এবং বহির্বিভাগ-জরুরি বিভাগের জন্য সরকারনির্ধারিত ফি দিতে হয়। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রাশেদুজ্জামান বলেন, বিষয়টি জানা নেই। তবে বহির্বিভাগে টিকিটের দাম ৩ টাকার বেশি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি বেশি নিয়ে থাকে, তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ড্রেসিং সেবা কক্ষে কেউ টাকা নিলে তার বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত