ঈদ ঘিরে কর্মমুখর তাঁতপল্লি

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২২, ১৪: ০৯
Thumbnail image

ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে কর্মমুখর হয়েছে উঠেছে টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী তাঁতপল্লি। মাকুর ও সানাইয়ের খটখট শব্দে মুখরিত তাঁতপল্লির প্রতিটি ঘর। করোনাকে পাশ কাটিয়ে ঈদকে কেন্দ্র করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন কারিগর ও ব্যবসায়ীরা। তবে নির্ধারিত মজুরি না পাওয়ার অভিযোগ তাঁতশ্রমিকদের। আর ব্যবসায়ীরা বলছেন বিক্রি কয়েক গুণ বেড়েছে।

এদিকে ঈদকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শাড়ি কিনতে টাঙ্গাইলে আসছেন ক্রেতারা। সব মিলে শ্রমিক, ক্রেতা ও বিক্রেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন।

শাড়ি ব্যবসায়ীরা জানান, করোনার কারণে গত দুই বছর তাঁতের শাড়ির ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়েছিল। বন্ধ ছিল অধিকাংশ তাঁত। এ বছর করোনার প্রভাব তেমন না থাকলেও আগের ক্ষতির কারণে অনেক তাঁত এখনো বন্ধ রয়েছে। যেগুলো টিকে আছে, ঈদকে কেন্দ্র করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।

টাঙ্গাইল সদরের বাজিতপুর, দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল, চণ্ডী, নলশোধা, ধুলটিয়া, কালিহাতীর বল্লা রামপুরের তাঁতের শাড়ি তৈরি হলেও দেলদুয়ারের চণ্ডী-পাথরাইল মূলত তাঁতপল্লি হিসেবে পরিচিত। এখানকার উৎপাদিত তাঁতের শাড়ি সারা দেশের চাহিদা পূরণ করে দেশের বাইরেও রপ্তানি হয়ে থাকে। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলছে সেই চিরচেনা তাঁতের খটখটি শব্দ। ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে গত শবে বরাতের পর থেকে বাড়তি কাজে চাপ পড়েছে তাঁতপল্লিতে।

তাঁরা আরও জানান, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে তাঁতপল্লিতে পাইকার ও খুচরা ক্রেতারা আসতে শুরু করেছেন। ঈদকে সামনে রেখে টাঙ্গাইল শাড়িতে যোগ হয়েছে বাহারি রং আর নতুন সব কারুকাজ। রংবাহারি, মাসলাইস কটন, কিটকট, সিল্ক, হাফ সিল্ক, মিক্সড ও কটন সিল্কসহ নানা ধরনের শাড়ি বুনছেন তাঁতিরা। তাঁতের সংখ্যা কমে গেলেও এখনো প্রায় চার হাজার তাঁত সচল রয়েছে এই তাঁতপল্লিতে। রাতভর কাজ করেও তাঁতিদের ক্লান্তি নেই। সুতা রং করা থেকে শুরু করে শাড়ি বিক্রি করা পর্যন্ত কাজের প্রতিটি ধাপে পরিবারের সব বয়সের সদস্যরা জোগান দিচ্ছেন। শাড়ির বুটি কেটে পরিবারের নারী ও শিশুরাও সহযোগিতা করছে। সব মিলিয়ে উৎপাদন ও বাজার উভয়ই ভালো যাচ্ছে। এখানে তিন শ থেকে লাখ টাকা দামের শাড়িও তৈরি হয়।

তাঁতশ্রমিক শমশের আলী, আলতাব হোসেন ও সাদ্দাম বলেন, ‘আমাদের এই পল্লিতে শ্রমিক আগের চেয়ে অনেক কম। আগে আমরা ৪৫ জন কাজ করলেও এখন ২০ জন কাজ করছি। এ ছাড়া মালিকেরা লকডাউনের সময়ে আমাদের মজুরি কমিয়ে দিয়েছিলেন। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও মজুরি আর বাড়েনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও কমিয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়লেও আমাদের মজুরি বাড়েনি। আগে যে কাপড়ে ১ হাজার ২০০ টাকা মজুরি পেতাম। সেই কাপড়ে এখন ৯০০ টাকা মজুরি পাচ্ছি।’

রাজশাহী থেকে আসা ক্রেতা আশরাফ হোসেন বলেন, ‘টাঙ্গাইলের শাড়ি দেশের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যায়। তবে পাথরাইল থেকে শাড়ি কিনলে অনেক ভালো মানের ও দামে কম পাওয়া যায়।’

তারাপদ শাড়ির স্বত্বাধিকারী পলাশ বসাক বলেন, ‘গত দুই বছরে আমাদের ব্যবসার অনেক ক্ষতি হয়েছে। তবে এ বছর বেচাবিক্রি বেশ ভালো। সামনের কয়েক দিন যদি ব্যবসা এমন চলতে থাকে, তবে আমরা আমাদের ক্ষতি অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পারব।’

টাঙ্গাইল তাঁতপল্লির শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সোহরাব হোসেন বলেন, লকডাউনে অনেকেই শাড়ির ব্যবসা বাদ দিয়েছেন। তাঁতশ্রমিকেরাও অন্য পেশায় চলে গেছেন। করোনার পর ঈদকে কেন্দ্র করে বিক্রি ভালো হচ্ছে।

শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক বলেন, ‘ঈদকে সামনে রেখে গত দুই বছরে শাড়ি ব্যবসার মন্দাবস্থা অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে। আমাদের ধারণা, এবার টাঙ্গাইল শাড়ির সর্বোচ্চ বিক্রি হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত