একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হেনেছে। তছনছ করেছে সবকিছু। খাবার মিলছে না, রাত কাটাতে হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে। কয়েক বছর পরপর এমন হয়েছে সাতক্ষীরা-৩ আসনের ভোটের মাঠ আশাশুনি, দেবহাটা ও কালীগঞ্জ উপজেলার মানুষদের সঙ্গে। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, নেতারা শুধু নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলেই খাতির জমাতে চান।
আগামী নির্বাচনের আগে সাতক্ষীরা-৩ আসনের ভোটের মাঠ ঘুরে জানা গেছে ভোটারদের এ মনোবেদনা। এবার তাই ভোট পেতে বেশ ঘাম ঝরাতে হবে নেতাদের, সেটা যে দলেরই হোক। ভোটে জিততে এবার বড় চ্যালেঞ্জের নাম তাই ‘দুর্যোগ’, এ কথা এবার বলা যেতেই পারে। তবে এলাকার রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, নির্বাচন কোন সরকারের অধীনে, সেটাই আসলে মুখ্য বিষয়।
সাতক্ষীরার-৩ আসনকে বলা হয় ভিআইপিদের আসন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা রয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায়। এ ছাড়া প্রার্থী হতে চান শিল্পপতিরাও। জামায়াতে ইসলামীর অসংখ্য কর্মী-সমর্থক রয়েছে বলেও জানা গেছে। যদিও মাঠে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোনো দলের কর্মী-সমর্থকদের দেখা যাচ্ছে না।
আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য প্রখ্যাত শল্যচিকিৎসক অধ্যাপক আ ফ ম রুহুল হক। আগামী নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। তবে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, তিনি এলাকায় তেমন আসেন না। এতে সাংগঠনিক কার্যক্রমে কিছুটা ধীরগতি। অনেকেই চাচ্ছেন, এলাকায় থাকেন এমন কাউকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হোক।
এ ক্ষেত্রে আলোচনায় আছেন দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা, বিশিষ্ট শিল্পপতি, প্রাসাদ গ্রুপ অব কোম্পানিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহ। বিএনপি নির্বাচনে গেলে দলটির একমাত্র পছন্দ হতে পারেন প্রখ্যাত হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ড্যাব নেতা ডা. সহিদুল আলম। জেলা জামায়াতের আমির মুহাদ্দিস রবিউল বাশার মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে জানা গেছে।
২০০৮ সালের নির্বাচনে এমপি হন আ ফ ম রুহুল হক। তবে এলাকায় সাধারণ জনগণের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ কম, এমনটাই অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এ বিষয়ে আশাশুনির প্রতাপনগর এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ২০১৯ সালে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে লন্ডভন্ড হয় পুরো উপকূলীয় এলাকা। এরপর বুলবুল, আম্পান ও ইয়াসের মতো ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছিল এলাকার লোকজন। অথচ এমন দুর্যোগে স্থানীয় সংসদ সদস্যের দেখা এক দিনও পাননি তাঁরা। এ ব্যাপারে গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘এমপি এলাকায় তেমন আসেন না। এলাকার মানুষের সুখ-দুঃখে তিনি থাকেন না।’
অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক বলেন, ‘আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করি এলাকার মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে।’
২০১৮ সালে মনোনয়ন চেয়েছিলেন আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহ। দল না করেও মনোনয়ন চাইছেন কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি নীল দলের শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। এ ছাড়া এলাকার মানুষের জন্য আমি দীর্ঘদিন বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও দুস্থ মানুষের জন্য বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত।’
জামায়াতের সাংগঠনিক ভিত্তি এখনো খুবই মজবুত। প্রকাশ্য তৎপরতা কম থাকলেও নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। নির্বাচনের বিষয়ে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুল আজিজ বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবিতে আন্দোলনই এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ভোট হবে না।’
এলাকায় বিএনপি নেতা সহিদুল আলমের বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মোস্তাকিম (আওয়ামী লীগ), জাতীয় পার্টির দেবহাটা উপজেলার সাধারণ সম্পাদক আবুল ফজল ও ছাত্রসমাজের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট স ম আলিফও (জাতীয় পার্টি) মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।