৬ সমন্বয়ককে ডিবিতে আটকে রাখা বেআইনি, মন্তব্য আইনজ্ঞদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক বেশ কয়েক দিন ধরে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) হেফাজতে রয়েছেন। নিরাপত্তা হেফাজত নাম দিয়ে তাঁদের এভাবে ডিবিতে আটকে রাখা বেআইনি ও সংবিধানপরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন আইনজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, আইনে নিরাপত্তা হেফাজত বলে কিছু নেই। আইন অনুযায়ী তাঁদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিকটস্থ আদালতে সোপর্দ করার বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্তু তা না করায় আইনের ব্যত্যয় হয়েছে।

গত ২৬ জুলাই বিকেলে ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে তুলে আনা হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকেরকে। নাহিদ ও আসিফ তখন চিকিৎসাধীন ছিলেন। আর বাকের তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। পরদিন সন্ধ্যায় সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি। আর দুই দিন পর রোববার ভোরে মিরপুরের এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তুলে নেওয়া হয় আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুমকে। এর পর থেকেই তাঁরা মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে আছেন। ডিবির দাবি, তাঁদের নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে।

তবে আইনজীবী ও মানবাধিকার-কর্মীরা বলছেন, এইভাবে কাউকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে আটকে রাখা বেআইনি। এটি আইন ও সংবিধানপরিপন্থী। এ ছাড়া ৬ জনের অবিলম্বে মুক্তি ও গুলি না করতে রিট করা হয়েছে হাইকোর্টেও। দুই দিন এই বিষয়ে শুনানিও হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্টও।

জানতে চাইলে ড. শাহদীন মালিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আইনে আছে, কাউকে গ্রেপ্তার করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে নিতে হবে। এরপর আদালত যদি আটক রাখার আদেশ দেন, তাহলে আটক রাখতে পারবে। নিরাপত্তা হেফাজত বলে আইনে কিছু নেই। তাই ৬ জনকে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখার কথা বলে আটকে রাখা সম্পূর্ণ বেআইনি। 

উল্লেখ্য, সংবিধানের ৩৩(১) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘কোন গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের কারণ জ্ঞাপন না করিয়া প্রহরায় আটক রাখা যাবে না এবং উক্ত ব্যক্তিকে তাঁর মনোনীত আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শের ও তাঁর দ্বারা আত্মপক্ষ-সমর্থনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাইবে না।’ ৩৩(২) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘গ্রেপ্তারকৃত ও প্রহরায় আটক প্রত্যেক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে (তাঁহাকে আদালতে আনয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সময় ব্যতিরেকে) আদালতে হাজির করা হইবে এবং আদালতের আদেশ ব্যতীত তাঁহাকে তদঅতিরিক্তকাল আটক রাখা যাইবে না।’ ফৌজদারি কার্যবিধির ৬১টি ধারাতেও বলা আছে, ‘ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ছাড়া আটককৃত ব্যক্তিকে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় আটক রাখা যাবে না।’ 

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, সংবিধান ও ফৌজদারি কার্যবিধিতে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, কাউকে আটক করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে নিতে হবে। যদি সন্দেহবশত কাউকে ৫৪ ধারায় আটক করা হয়, সে ক্ষেত্রেও তাঁকে ২৪ ঘণ্টার বেশি পুলিশি হেফাজতে রাখা যাবে না। এই বিষয়ে উচ্চ আদালতেরও নির্দেশনা রয়েছে। তাই ৬ সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে যেভাবে রাখা হয়েছে, তা সংবিধান ও আইনপরিপন্থী। এমনকি সংবিধানেরও লঙ্ঘন বলে মনে করেন তিনি।

এ ছাড়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, নিরাপত্তার কথা বলে এভাবে হেফাজতে রাখা কোনো আইন সমর্থন করে না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিকটস্থ আদালতে সোপর্দ করতে হবে। এখানে পুরোপুরি আইনের ব্যত্যয় হয়েছে। 

রিটের শুনানি হয়নি 
এদিকে এক বিচারপতি অসুস্থ থাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি না করা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ককে অবিলম্বে মুক্তি দিতে করা রিটের শুনানি হয়নি গতকাল। বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলন অসুস্থ থাকার বিষয়টি বেলা পৌনে ১১টার দিকে জানান বেঞ্চ কর্মকর্তা। 

এর আগে গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মানজুর-আল-মতিন ও আইনুন্নাহার সিদ্দিকা রিট করেন। সোম ও মঙ্গলবার দুই দফা রিটের ওপর শুনানি শেষে গতকাল দিন ধার্য ছিল। গতকালও শুনানিকে কেন্দ্র করে বিপুলসংখ্যক আইনজীবী ও গণমাধ্যমকর্মী ওই বেঞ্চে উপস্থিত হন। সেই সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আবেদনকারীদের আইনজীবী ও অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনসহ রাষ্ট্রপক্ষের অন্যান্য আইনজীবী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত