Ajker Patrika

বড় ভূমিকম্পের আভাস দিচ্ছে ছোট ভূমিকম্প

সৌগত বসু, ঢাকা
বড় ভূমিকম্পের আভাস দিচ্ছে ছোট ভূমিকম্প

ঢাকায় গতকাল শুক্রবার ভোরে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। সকাল ৫টা ৫৭ মিনিটের এ ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল ঢাকার খুব কাছের উপজেলা দোহারে। মাত্রা কম হলেও ঝাঁকুনি অনুভূত হয়েছে বেশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার আশপাশে ২২ বছর আগেও এমন ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল, যার ফলে দেশে দুই ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। আবার ছোট ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের আভাস।

বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে এক গবেষণায় দেখা গেছে, মধুপুর ফল্টে দিনের বেলা ৬ দশমিক ৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হলে রাজধানীতে কমপক্ষে ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৬১৯ ভবন ধসে পড়তে পারে এবং ২ লাখ মানুষ নিহত হবে। আর আর্থিক ক্ষতি হবে প্রায় ২ লাখ ৬৬ হাজার ২১৪ কোটি টাকা।

অন্যদিকে সিলেটের ফল্ট লাইনে দিনের বেলা ৭ দশমিক ১ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হলে কমপক্ষে ৪০ হাজার ৯৩৫ ভবন ধসে পড়তে পারে। ১৬ হাজার মানুষ মারা যেতে পারে। আর্থিক ক্ষতি হবে প্রায় ৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা।

দুই ধরনের ভূমিকম্প হচ্ছে দেশে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ড. সুব্রত কুমার সাহা আজকের পত্রিকাকে বলেন, এই ধরনের ভূমিকম্প আগেও হয়েছে। ২০০১ সালে একটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল বুড়িগঙ্গার কাছে। ২০০৮ সালে মানিকগঞ্জে হয়েছে। এরপর চাঁদপুর ও ময়মনসিংহে হয়েছে।

সুব্রত কুমার আরও বলেন, ‘আমাদের ভূমিকম্পের মূল যে জায়গা ধরা হয়, সেটা হচ্ছে উত্তর-পূর্ব অঞ্চল, যা সিলেটের অন্তর্গত। এটা টেকটোনিক প্লেটের কাছাকাছি। এ ছাড়া আসাম, শিলংয়ে প্লেট আছে। এসব জায়গায় ভূমিকম্প হলে সেটার প্রভাব দেশে ও ঢাকায় পড়বে। আর একটা ভূমিকম্প হয় প্লেট বাউন্ডারি ছাড়া ফল্ট লাইনে।’

গতকাল ঢাকায় ভূমিকম্প ছিল ফল্ট লাইনে উল্লেখ করে সুব্রত কুমার বলেন, এর মধ্যে একটা আছে মধুপুর ফল্ট লাইন। আর ২০০১ থেকে যদি দেখা হয়, তাহলে বুড়িগঙ্গা, পদ্মা, মেঘনা আর ব্রহ্মপুত্রের আশপাশে উৎপত্তিস্থল। তবে যমুনাতে একটা ফল্ট লাইন আছে।এখন দেখার বিষয় পদ্মা বা মেঘনার আশপাশে ফল্ট লাইন আছে কি না। সেটা এখনো জানা যায়নি।

বড় ভূমিকম্পের আভাস
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এবং বর্তমানে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, এমন ছোট ছোট ভূমিকম্প মূলত বড় শক্তি নিয়ে ভূমিকম্প হওয়ার প্রাথমিক ধাপ। এই অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে। আর বড় কোনো কিছু হলে আগে ছোট কিছু বিষয় ধরা পড়ে।

হুমায়ুন আখতার বলেন, বাংলাদেশ তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। এগুলো হলো ইন্ডিয়া প্লেট, বার্মা প্লেট ও এশিয়া প্লেট। ইন্ডিয়া ও বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলে ৮০০ থেকে ১০০০ বছর আগে ভূমিকম্প হয়েছিল। ফলে এই অংশে শক্তি জমা আছে, সেটা যদি একসঙ্গে বের হয়, তাহলে ৮ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নগর-পরিকল্পনাবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর-অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, ভূমিকম্প হবে ধরে নিয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। জাতীয় ভবন নির্মাণ নীতিমালা মেনে দালানকোঠা নির্মাণ করতে হবে। ঢাকায় নিচু এলাকা ও বালু ভরাট করে যে ভবন তৈরি হয়, সেখানে প্রকৌশলগত দিক থেকে ঘাটতি রাখা যাবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত