কোনো নির্বাচনই কি বিতর্কমুক্ত হবে না

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২৪, ০৭: ২০

জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর শনিবার ময়মনসিংহ এবং কুমিল্লা সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকারের আরও ২২৯টি নির্বাচন ও উপনির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিরও। কেমন হয়েছে এই নির্বাচনগুলো?

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি যথারীতি অংশ নেওয়া থেকে বিরত থেকেছে। তবে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নিয়ে কোথাও কোথাও জয়ও পেয়েছেন দলটির স্থানীয় পর্যায়ের দু-চারজন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছে।এই নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা নিয়ে নানা নাটকীয়তা হয়েছে। হামলা-মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেছেন, ‘গত ৭ জানুয়ারি যা দেখেছিলাম, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে যা দেখেছি এবং শনিবার কুমিল্লা ও ময়মনসিংহে যা দেখেছি, তার সবকিছুই নির্বাচনের নামে প্রহসন। আমরা শুধু এ প্রত্যাশা করব, সরকার তাদের এই জবরদখল করা নির্বাচনের ধ্যানধারণা থেকে বের হয়ে আসবে এবং বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেবে।’

অন্যদিকে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল মনে করেন, সব ঠিকঠাকই আছে। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমাদের দৃষ্টিতে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। কোনো অভিযোগ আমরা এখনো পাইনি যে প্রভাব খাটানো হয়েছে, হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। কেন্দ্রের বাইরে গোলাগুলি হয়েছে, তবে কেন্দ্রের ভেতরে ভোট প্রভাবিত হয়নি।’

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, শনিবার সারা দেশে স্থানীয় সরকারের আরও যেসব নির্বাচন হয়েছে, তাতে বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু অনিয়ম-দুর্নীতি ও ভুলের খবর পাওয়া গেছে। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নে ব্যালট পেপারে আপেলের জায়গায় কদম ফুল মুদ্রিত হয়েছে। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে এ ঘটনা ঘটেছে।

এই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মনসুর আহমেদের মৃত্যুতে উপনির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আপেল মার্কার জায়গায় কদম ফুল প্রিন্ট হওয়ায় নির্বাচন কমিশন ভোট স্থগিত করেছে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে নির্বাচনী সহিংসতায় একজন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সাধারণত ভোটার উপস্থিতি বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু শনিবারের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কমই ছিল। তাহলে কি এটা ধরে নিতে হবে যে ভোটের ওপর আর সাধারণ ভোটারদের আগ্রহ নেই? বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা দরকার। সাধারণ মানুষ ভোটকেন্দ্র বিমুখ হয়ে পড়লে সেটা গণতন্ত্রের জন্য খুব সুখকর কিছু হবে না।

ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা জয় পেলেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে বিজয়ী প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান অনেক। বলা যায়, এই নির্বাচনও অনেকটা একতরফাই হয়েছে।

কেন এমন হচ্ছে? সহজ উত্তর—একদিকে বিরোধী দল নেই, আরেকদিকে নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুষের আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাই প্রহসনে পরিণত হয়েছে। এটা কাম্য নয়। আমরা যদি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রাখি, তাহলে নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের এই নেতিবাচক মনোভাব দূর করতে হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত