আইনি জটিলতায় বন্ধ ক্যাফে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২২, ০৭: ২৩
আপডেট : ২২ আগস্ট ২০২২, ১৩: ১০

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) স্টুডেন্ট ক্যাফেটেরিয়া ইজারায় প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র বাস্তবায়ন করেও আইনি জটিলতায় পড়ে কর্তৃপক্ষ। এতে ক্যাফেটেরিয়া চালু করতে পারছে না চমেক। ফলে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

চলতি বছরের এপ্রিল থেকে চমেক হাসপাতালে ই-দরপত্র চালু করে কর্তৃপক্ষ। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে হাসপাতালে কেনাকাটা ও সরবরাহে দুর্নীতি, ইজারায় অনিয়মের বিষয়টি উঠে আসার পর এ ব্যবস্থা চালু করা হয়।

জানা গেছে, গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর চমেকের স্টুডেন্ট ক্যাফেটেরিয়া (সিএমসি ক্যাফে) দ্বিবার্ষিক ইজারার দরপত্র আহ্বান করা হলে কাগজপত্র জমা দেয় আটটি প্রতিষ্ঠান। এতে পুরনো ইজারাদার মেসার্স ভাণ্ডার ট্রেডার্সসহ কোনো প্রতিষ্ঠানই যথাযথ কাগজপত্র না দেওয়ায় চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি পুনরায় দরপত্র চাওয়া হয়।

দ্বিতীয় পর্যায়েও আটটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। যাচাই-বাছাই শেষে দারুল আমান হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট নামের প্রতিষ্ঠানকে যোগ্য নির্বাচিত করে দরপত্র কমিটি। দরপত্র আহ্বানের ৪ মাস পর গত ২৮ মে প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যাদেশ (ওয়ার্ক অর্ডার) দেয় চমেক কর্তৃপক্ষ। তবে কার্যাদেশ পাওয়ার এক মাস পর গত ৪ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির দেড় দশকের পুরনো ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করে দেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) রাজস্ব বিভাগ। নগরের কোতোয়ালি মোড়ে অন্তত ১৫ বছর ধরে ব্যবসা চালিয়ে আসছে রেস্টুরেন্টটি।

জুলাইয়ের শুরুতে দারুল আমান রেস্টুরেন্টকে কার্যাদেশের অনুকূলে জামানত জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে ক্যাফের চাবি বুঝিয়ে দেয় দরপত্র কমিটি। পরে চমেকের অধ্যক্ষ, চসিক মেয়র, দরপত্রে অংশ নেওয়া সব প্রতিষ্ঠানের মালিককে আসামি করে মামলা করেন আগের ইজারাদার।

এদিকে ট্রেড লাইসেন্স বাতিলের কথা উল্লেখ করে কার্যাদেশ বাতিলের অনুরোধ জানিয়ে চমেক অধ্যক্ষ বরাবর তিনটি চিঠি দেন চকবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুর মোস্তাফা টিনু। এতে আছে অসংগতি। চিঠিতে শামসুল তাবরিজকে চসিকের ‘প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা’ উল্লেখ করা হলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি ‘রাজস্ব কর্মকর্তা’।

চসিকের কাউন্সিলরের এমন চিঠি প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, এতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, কাউন্সিলরের যোগসাজশে চসিক থেকে ‘ট্রেড লাইসেন্স’ বাতিল করানো হয়েছে চমেকের দরপত্র প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করার জন্য।

এদিকে একাধিক সূত্র ও প্রতিবেদকের হাতে আসা নথিতে দেখা যায়, সর্বোচ্চ দরদাতা ও পরিপূর্ণ সংযুক্তি জমা দেওয়ার পরও দারুল আমান হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টকে কার্যাদেশ পেতে সময় লেগেছে দীর্ঘ ৪ মাস। এর মধ্যে ওই কার্যাদেশ বাতিলের জন্য তদবির করতে থাকে পুরনো সিন্ডিকেটের লোকজন। এতে বিএমএ নেতাসহ চসিকের এক কাউন্সিলর যুক্ত হন।

এর মধ্যেই জুলাইয়ের শুরুতে দারুল আমান রেস্টুরেন্টকে কার্যাদেশের অনুকূলে জামানত জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে ক্যাফের চাবি বুঝিয়ে দেয় দরপত্র কমিটি। পরে চমেকের অধ্যক্ষ, চসিক মেয়র, দরপত্রে অংশ নেওয়া সব প্রতিষ্ঠানের মালিককে আসামি করে চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী জজ পঞ্চম আদালতে মামলা করেন ক্যাফেটেরিয়ার আগের ইজারাদার মেসার্স ভাণ্ডার ট্রেডার্সের একাংশের মালিক মো. নুরুন নবী বাচ্চু। এতে আইনি জটিলতায় ক্যাফেটেরিয়া চালুই করতে পারছে না চমেক কর্তৃপক্ষ।

চমেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাহেনা আক্তার বলেন, ‘সব কাগজপত্র দিয়ে বৈধভাবে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে দারুল আমান হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টকে নির্বাচিত করে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু একটি পক্ষ মামলা করার কারণে ক্যাফেটেরিয়া বুঝিয়ে দিতে পারিনি। মামলা নিষ্পত্তি হলেই ক্যাফেটেরিয়া চালু করা যাবে।’

এদিকে ২৪ জুলাই দারুল আমান হোটেলের মালিক সৈয়দ আহমদ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলে চসিকের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেন আদালত।

এ বিষয়ে চসিকের কর কর্মকর্তা (লাইসেন্স) মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘হাইকোর্ট ট্রেড লাইসেন্স বাতিলের আদেশ স্থগিত করলেও রায় হয়নি। রায় হলে বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে।’ 
চমেকের স্টুডেন্ট ক্যাফেটেরিয়ার আগের ইজারাদার মেসার্স ভাণ্ডার ট্রেডার্স পরিচালনা করতেন প্রতিষ্ঠানের একাংশের মালিক ফারুক চৌধুরী। তবে তাদের বিপরীতে চমেক ক্যাফেটেরিয়ার সর্বশেষ দরপত্রে অংশ নিয়ে জেতায় দারুল আমান হোটেল অস্তিত্বসংকটে পড়েছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির মালিক সৈয়দ আহমদ।

 প্রতিষ্ঠানটির নামে ভ্যাট, ট্যাক্স পরিশোধের নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সরকারের নীতিমালা মেনে ব্যবসা করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। চসিকের লাইসেন্স নবায়ন করা হয়েছে নিয়মিত।

সৈয়দ আহমদ বলেন, ‘টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ না নেওয়ার জন্য ‘ফারুক’ শুরু থেকেই হুমকি দিয়ে আসছিলেন।’

হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করে ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘সরকারিভাবে টেন্ডার হয়েছে, এখানে হুমকি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।’ তবে মেসার্স ভাণ্ডার ট্রেডার্স পার্টনারশিপে চলত বলে তিনি স্বীকার করেন। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত