এমপির ভুয়া চিঠিতে টিকিট জালিয়াতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২২, ১২: ৪০

রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আয়েনউদ্দিনের নামে ভুয়া আধা সরকারি (ডিও) চিঠি দিয়ে ট্রেনের টিকিট জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিকভাবে বিষয়টি ধরা পড়ায় এ ব্যাপারে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কে বা কারা এ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত, তা জানতে কমিটি করে তদন্ত করা হবে।

রেল সূত্র জানায়, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের গ্রেড-২-এর পার্সেল সহকারী ও রেলওয়ে শ্রমিক লীগের ওপেন লাইন শাখার সাধারণ সম্পাদক আকতার আলী গত রোববার রাত ১১টার দিকে রাজশাহী স্টেশনের বুকিং সহকারী ফয়সাল কবিরের কাছে ডিও লেটারটি দিয়ে যান। সংসদ সদস্যের প্যাডে ওই ডিওতে লেখা ছিল, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সংসদ সদস্য ঢাকা যাবেন। তাই একটি ডাবল কেবিনের টিকিট বরাদ্দ দেওয়ার জন্য তিনি জোর সুপারিশ করছেন। এতে সংসদ সদস্যের নকল স্বাক্ষর ও সিল ব্যবহার করা হয়।

এই ডিও পাওয়ার পর স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী আবদুল মোমিন গত সোমবার রাতের ঢাকা-রাজশাহী রুটের ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনের ‘ক’ বগির ৭, ৮, ৯ ও ১০ নম্বর আসনের ডাবল কেবিনের টিকিট বরাদ্দ করেন। এসব টিকিট রাখা হয় আব্দুর রশিদ নামের আরেক বুকিং সহকারীর কাছে। রাতে যাত্রার আগে এক ব্যক্তি ওই টিকিট নিতে কাউন্টারে যান। এ সময় রেল শ্রমিক নেতা আকতার বুকিং সহকারী আবদুর রশিদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে টিকিটগুলো দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

এরপর সংসদ সদস্য আয়েনউদ্দিন পরিবার নিয়ে আসছেন বলে স্টেশনে প্রস্তুতি রাখা হয়। ভালোভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় কেবিনটি। উপস্থিত থাকেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদারও। কিন্তু দেখা যায়, যাত্রা শুরুর আগেও সংসদ সদস্য আসছেন না।

এ অবস্থায় প্রধান বুকিং সহকারী মোমিন ফোন করেন সংসদ সদস্য আয়েনের ব্যক্তিগত সহকারী ইকবাল হোসেনকে। সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে ইকবাল জানান, আগের দিনই তিনি ঢাকা থেকে এসেছেন। আবার যাওয়ার জন্য তিনি কোনো ডিও দেননি, এটি ভুয়া।

এদিকে ট্রেনের যাত্রা শুরুর সময় হলে দেখা যায়, ওই কেবিনে গিয়ে উঠেছেন তিন ব্যক্তি। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মোহনপুরের কেশরহাট পৌরসভা মেয়র মো. শহিদুজ্জামান ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শফিকুল ইসলাম। মহাব্যবস্থাপক অসীম তাঁদের এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তাঁরাও ওই ডিওর ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দেননি।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য গতকাল মঙ্গলবার পার্সেল সহকারী আকতারের ফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি তা ধরেননি।

জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শফিকুল জানান, ওই কেবিনে করে তিনি ঢাকা গেছেন। কিন্তু টিকিট কীভাবে বরাদ্দ হয়েছে তা জানেন না। ভুয়া ডিও লেটারের বিষয়েও তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেন।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক বলেন, ‘ডিও লেটারটি ছিল ভুয়া। আমরা এটি তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাঁরা ভ্রমণ করেছেন, তাঁদের ফোন নম্বরও রেখেছি। তাঁদের বলেছি, ডাকা হলে যেন তাঁরা আসেন। তাঁরা আসতে চেয়েছেন। তদন্ত করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত