Ajker Patrika

মানিকগঞ্জে দাম ও কদর বেড়েছে তালের শাঁসের

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
আপডেট : ২১ মে ২০২২, ০৯: ৪৬
Thumbnail image

মানিকগঞ্জের ঘিওরে দাম ও কদর বেড়েছে তালের শাঁসের। গরমে স্বস্তি পেতে প্রায় সবারই পছন্দের তালিকায় আছে তালের শাঁস। কচি তালের শাঁস যেমন পুষ্টিকর, তেমনি প্রশান্তিদায়ক।

উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন হাটবাজারের মোড়ে বিক্রেতারা হরদম বিক্রি করছেন তালের শাঁস। এ ছাড়া ভ্যানে করে ভ্রাম্যমাণ তালের শাঁস বিক্রেতাদের সংখ্যাও কম নয়। উপজেলায় শতাধিক পরিবারের লোকজন তালের শাঁস বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। অনেকেই মৌসুমি ব্যবসা হিসেবে কেনাবেচা করছেন তালের শাঁস।

বর্তমানে একেকটি তালের শাঁস ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী বাসস্ট্যান্ডের পাশে মৌসুমি ব্যবসায়ী আনু মিয়া বলেন, ‘তিনটি গাছের তাল ৪ হাজার ৫০০ টাকায় কিনেছি। গাছ থেকে তাল নামাতে লেগেছে ১ হাজার টাকা আর ভ্যান ভাড়া লেগেছে ৬০০ টাকা।’ সব খরচ বাদে তিনি এ তালগুলো ১০-১২ হাজার টাকা বিক্রি করার ব্যাপারে আশাবাদী। প্রতিটি (তিন শাঁসের) তাল বিক্রি করেন ২৫-৩০ টাকায়। পেশায় রিকশাচালক আনু মিয়ার এটি মৌসুমি ব্যবসা। তিনি আরও বলেন, ‘এক থেকে দেড় মাস পর্যন্ত তালের শাঁস বিক্রি করা যাবে। এই এক-দেড় মাসে তালের শাঁস বিক্রি করে আয় করা যাবে ২০-৩০ হাজার টাকার মতো।’

সাইংজুরী গ্রামের বাসিন্দা এবং তালের শাঁস বিক্রেতা সাইজুদ্দিন মিয়া বলেন, ‘প্রতি বছর বিভিন্ন গ্রাম থেকে পাইকারি দরে তালের শাঁস কিনে ঘিওরের হাট-বাজারে বিক্রি করি। পরিশ্রম একটু বেশি হলেও লাভ বেশ ভালোই হয়। চলতি মৌসুমে তালের ফলন কম হওয়ায় উপজেলার সব জায়গাতেই তালের সংকট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া প্রচণ্ড গরমের কারণে চড়া মূল্যে তালের শাঁস বিক্রি করতে হচ্ছে।’

একসময় মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বিপুল পরিমাণ তালগাছ ছিল। প্রতি বছর শত শত তালগাছ কেটে গৃহস্থালি, ইট পোড়ানো, তালের ডোঙা তৈরি এবং জ্বালানিসহ নানা কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়া গাছের অজ্ঞাত রোগ, প্রয়োজনীয় পরিচর্যা এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বহু তালগাছ অকালে মারা যাচ্ছে। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এই গাছ সংরক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।

শৌখিন ক্রেতা থেকে শুরু করে শিশু-বৃদ্ধ এবং শিক্ষার্থীরা প্রচণ্ড গরমে একটু তৃপ্তির পরশ পেতে ভিড় করছেন তালের শাঁস বিক্রেতাদের কাছে। গত সপ্তাহ থেকে দেখা গেছে ঘিওর বাসস্ট্যান্ড, তরা, গিলন্ড, জাবরা বাজার, বানিয়াজুরী বাসস্টেশনে বিক্রেতারা তাল বিক্রি করছেন।

এ সময় বানিয়াজুরী বাসস্ট্যান্ডে তালের শাঁস কিনতে আসা স্কুলশিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, ‘আমার ছেলেমেয়েদের তালের শাঁস খুব পছন্দ। দাম বেশি হলেও মৌসুমের শুরুতে তালের শাঁসের কদর বেশি থাকে। এই বাজারে বিক্রেতা একজন, কিন্তু ক্রেতা অনেক। তাই সিরিয়াল ধরে কিনতে হচ্ছে।’

পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন নেত্রী লক্ষ্মী চ্যাটার্জি এ বিষয়ে বলেন, ‘পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এ অঞ্চলের তালগাছ এখন বিলুপ্তপ্রায়। ফলে ঐতিহ্যবাহী তালের রস, তালের গুড় ও তালের পাটালি এখন অনেকটাই বিলুপ্ত।’

ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সুজিত কুমার সরকার বলেন, ‘তালের শাঁস পুষ্টিকর এবং প্রশান্তিদায়ক। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। বিশেষ করে গরমের দিনে তালের শাঁসে থাকা জলীয় অংশ পানিশূন্যতা দূর করে। প্রাকৃতিকভাবে দেহকে রাখে ক্লান্তিহীন। তালে থাকা ভিটামিন সি ও বি কমপ্লেক্স পানি পানের তৃপ্তি বাড়িয়ে দেয়।’

ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ বিপুল হোসেন বলেন, ‘চলতি মৌসুমে তালের ফলন কম হওয়ায় বিক্রেতাদের আনা তালের শাঁস মুহূর্তের মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। সরকারি পর্যায়ে তালগাছ রোপণ করতে কাজ করা হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারী সহকর্মীর সঙ্গে রাতযাপন: হাইটেক পার্কের ডিডি আতিক বরখাস্ত

বাংলাদেশসহ ৩ দেশে উন্নয়ন সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্ত সুইজারল্যান্ডের

বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের পদত্যাগ

পদ্মা সেতু ও ড. ইউনূসকে নিয়ে ভারত থেকে শেখ হাসিনার ভাষণ! ভাইরাল ভিডিওর পেছনের ঘটনা জানুন

২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন কর্মসূচি শুরু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত