রোহিঙ্গা শিবিরে ফের উৎকণ্ঠা

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ মে ২০২২, ০৭: ০৮
আপডেট : ১১ মে ২০২২, ১৫: ৪৮

প্রাকৃতিক দুর্যোগে রোহিঙ্গা শিবিরে বেশ কয়েকবার প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এরপর থেকে প্রকৃতির চোখরাঙানি দেখলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে শিবিরে। তিন দিন ধরে ঘূর্ণিঝড় অশনির খবরে বেশির ভাগ রোহিঙ্গার মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।

তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অশনি মোকাবিলায় রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা, ভূমিধস ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি শিবিরে নিয়ন্ত্রণকক্ষ স্থাপনের নির্দেশনাসহ ৯টি কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কার্যালয়।

জানা গেছে, উখিয়া ও টেকনাফে ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবির গড়ে উঠেছে। বেশির ভাগই পাহাড়ের উঁচু-নিচু ঢালুতে ঝুপড়ি তৈরি করে বসবাস করছে রোহিঙ্গারা। যেকোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ তারা ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে।

২৬ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরের মাঝি নুরুল বশর জানান, তাঁর শিবির পাহাড়ে না হওয়ায় তেমন ঝুঁকি না থাকলেও পাহাড়ের শিবিরগুলো ভীষণ ঝুঁকিতে রয়েছে। পার্শ্ববর্তী ২৭ নম্বর শিবিরে একাধিক পরিবার ঝুঁকিতে রয়েছে। বাতাস-বৃষ্টি দেখলে রোহিঙ্গাদের নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব নিরাপত্তা মোকাবিলা করতে প্রস্তুতি রয়েছে বলেও জানান তিনি।

২২ নম্বর উনছিপ্রাং পুটিবনিয়া রোহিঙ্গা শিবিরের প্রধান মাঝি মো. রফিক জানান, তাঁর শিবিরে ২২ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে। তাদের বেশির ভাগ রোহিঙ্গা পাহাড়ে ও ঢালুতে। তবে প্রশাসনের কর্মকর্তারা প্রায় ৭০ পরিবারকে ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন; বিশেষ করে উখিয়া উপজেলার বালুখালী, থাইংখালী পাহাড়ে গড়ে ওঠা শিবিরগুলো বেশি ঝুঁকিতে।

এদিকে অশনিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মিকন তংচংগ্যার সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পাহাড়ের ওপর যেসব রোহিঙ্গা ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে, সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় তাদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি কন্ট্রোল রুম স্থাপনের নির্দেশনা দিয়ে প্রতিটি ক্যাম্পে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির মোবাইল নম্বর সবাইকে জানিয়ে দিতে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে নিরাপত্তার লক্ষ্যে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে মোবাইল টিম প্রস্তুত, শেল্টারের ক্ষয়ক্ষতি ঠেকাতে শেল্টার-সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে আলোচনাক্রমে ঘূর্ণিঝড়সহনীয় শেল্টার কিট বিতরণে ব্যবস্থা গ্রহণ, দুর্যোগকালীন জরুরি খাবার বিতরণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া, শিবিরে অবস্থিত স্লোপ প্রোটেকশন, রিটেইনিং ওয়াল ও গাইড ওয়াল মেরামত, প্রয়োজন হলে জরুরি ভিত্তিতে মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ করা, বৃষ্টি ও বন্যার পানি নিরাপদে নির্গমনের জন্য ক্যাম্পের অভ্যন্তরে অবস্থিত ড্রেনসমূহ পরিষ্কারের ব্যবস্থা করা, ক্যাম্পে কর্মরত সিপিপি-ডিআরআর স্বেচ্ছাসেবকদের দুর্যোগকালীন এবং দুর্যোগ-পরবর্তী প্রস্তুতি বিষয়ে বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার সামসুদ্দৌজা নয়ন কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে এবং জানমাল রক্ষায় আগাম বিভিন্ন প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তরের ২২ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরের বেশ কিছু পরিবারকে ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এভাবে প্রায় শিবিরে ঝুঁকিপূর্ণ রোহিঙ্গা পরিবার রয়েছে বলে জানা গেছে। রোহিঙ্গা নেতারা আরও বলেন, বর্ষা এলেই রোহিঙ্গাদের বেশির ভাগের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। সারা রাত নির্ঘুম কাটিয়ে উদ্বেগ-আতঙ্কে থাকতে হয়।

একাধিক জনপ্রতিনিধি জানান, রোহিঙ্গারা আসার পর থেকে প্রতিটি বর্ষা মৌসুমে প্লাবন ও পাহাড়ধসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গেল বর্ষা মৌসুমে শিশুসহ ৫ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। পাহাড়ে ও ঢালুতে যারা বসবাস করছে, তারা ঝুঁকিতে বলে উল্লেখ করেন এই জনপ্রতিনিধিরা।

গতকাল মঙ্গলবার আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার সব নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচলের পাশাপাশি গভীর সমুদ্রে বিচরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত