Ajker Patrika

সুই-সুতার বাঁধনে বাঁধা মমতা দিদির জীবন

মো. নাজমুল ইসলাম বীরগঞ্জ (দিনাজপুর)
আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২২, ০৯: ৪৭
সুই-সুতার বাঁধনে বাঁধা  মমতা দিদির জীবন

দুই ছেলে আর এক মেয়ে রেখে স্বামী কালীপদ রায় মারা গেলেন ২০০৫ সালে। তিন শিশুসন্তানকে নিয়ে যেন অথই সাগরে পড়লেন মমতা রায়। এই অকূলে তাঁকে কূল দেখাল সুই-সুতার কাজ। এ কাজ করেই তিনি টেনে নিলেন চারজনের সংসার। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করালেন। করলেন বাড়িঘর। পথ দেখালেন গ্রামের অন্য নারীদেরও, তাঁদের কাছে হয়ে উঠলেন ‘মমতা দিদি’। সব মিলিয়ে সেই থেকে সুই-সুতার বাঁধনে বাঁধা পড়ল তাঁর জীবন।

হস্তশিল্পের কারিগর মমতার বাড়ি দিনাজপুরের বীরগঞ্জের নিজপাড়া ইউনিয়নের নতুনহাট এলাকার মাস্টারপাড়া গ্রামে।

মমতা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন স্বামী। ছোট ছোট তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াব, সেই চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। সুই-সুতার কাজ জানতাম। জীবিকার তাগিদে পড়ে হাতে তৈরি পাখা বানিয়ে পাড়া-মহল্লায় বিক্রি করা শুরু করলাম। খুবই কষ্টে সংসার চলত। সন্তানদের পড়ালেখার ও সংসারের খরচ জোগাড় করতে হিমশিম অবস্থা।’

তবে দিন ফিরল মমতার। আরডিআরএসের মাধ্যমে হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ নিলেন। পাটের তৈরি পাপোশ, পাটের ব্যাগ, পাটের ড্রাম, কুশন কভার, সুতার ম্যাট, নকশিকাঁথা, হাতপাখা বানিয়ে বেশ প্রশংসা কুড়ালেন। ২০০৭ সালে ক্ষুদ্রঋণ ও অন্যের কাছ থেকে ধারদেনা করে পরিসর বাড়ালেন। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি।

মমতা বলেন, ‘গ্রামের নারীদের দিয়ে তৈরি করা হস্তশিল্প সামগ্রী এখন দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম এবং ঢাকার বড় বড় শপিং মলে বিক্রি করা হচ্ছে। সেই কাজ দেখে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এসে আমাকে অর্ডার দিয়ে যান। ক্রেতাদের প্রশংসা মনোবল ও সাহস বাড়িয়ে দেয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অর্ডার বাড়তে থাকে।’

শুধু নিজের জীবনের গল্পই নয়, সুই-সুতার কারুকাজে বদলে দিয়েছেন বিভিন্ন গ্রামের আরও সহস্রাধিক নারীর জীবন। সংসারের পাশাপাশি বুননের কাজ করে বাড়তি আয় করছেন তাঁরা।

মমতার প্রতিবেশী পুলিন রায় জানান, ‘হস্তশিল্পের কাজ করেই তিন সন্তানকে পড়ালেখা করিয়েছেন মমতা। তাঁদের বিয়ে-শাদিও দিয়েছেন। করেছেন পাকা বাড়িঘর।’

মমতার উপলব্ধি, ‘সংসারের পাশাপাশি নারীদেরও কিছু করা উচিত। হাতের কাজটা সময়-সুযোগমতো করা যায়। এটা করলে নিজেরাও স্বাবলম্বী হতে পারবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত