Ajker Patrika

চট্টগ্রামে অবৈধ অস্ত্র: ৫ বছরে গুলিতে নিহত ৩, হোতারা সবাই অধরা

সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১২: ৫৮
চট্টগ্রামে অবৈধ অস্ত্র: ৫ বছরে গুলিতে নিহত ৩, হোতারা সবাই অধরা

চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া এলাকায় ২০১৯ সালের ১১ মে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় এক যুবককে না পেয়ে তাঁর বোনকে গুলি করে হত্যা করেন শাহ আলম নামের এক যুবক। দুই হাতে দুটি পিস্তল উঁচিয়ে দলবল নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তিনি। পরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শাহ আলম নিহত হন। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি পিস্তল জব্দ করে পুলিশ। ওই বছরই মামলার তদন্ত শেষ করে পুলিশ অভিযোগপত্র দেয়। কিন্তু তদন্তে অস্ত্রের মালিক কে, সে বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি।

শুধু ওই ঘটনা নয়, চট্টগ্রাম মহানগরীতে গত পাঁচ বছরে সিটি নির্বাচন, সংসদ নির্বাচন এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একাধিকবার আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে। এগুলোর মধ্যে তিনটি ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন তিনজন; আহত হয়েছেন অনেকে। পৃথক আরও কয়েকটি ঘটনায় প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে। এসব ঘটনায় ব্যবহৃত সব অস্ত্র আজও উদ্ধার হয়নি। অস্ত্রধারী অনেকে গ্রেপ্তার হননি। পেছনের কারিগরেরাও রয়ে গেছেন অধরা।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি-বন্দর ও পশ্চিম) মুহাম্মদ আলী হোসাইন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অস্ত্র দিয়ে কে গুলি করেছে বা কার নির্দেশে গুলি করা হয়েছে, সেটা একপ্রকার ঘটনার সময় স্থানীয়সহ সবাই জানে। কিন্তু আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সময় সাক্ষ্যপ্রমাণের দরকার পড়ে।’ তিনি বলেন, ‘আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, যার হাতে অস্ত্র পাওয়া যাচ্ছে বা যিনি গুলি করেছেন বা যার দ্বারা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, তাঁকে গ্রেপ্তারের পর দেখা যায়, তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে অন্য জড়িতদের নাম বলতে চান না।

নাম যদি না আসে, আমরা তো জোর করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারি না।’

পুলিশের এই উপকমিশনার আরও বলেন, ‘নাম না বলার পেছনে অবশ্য একটা কারণ আছে। যিনি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে, সেই মামলার খরচসহ অন্যান্য নিশ্চয়তার বিষয়টি কে দেখবে? এসব চিন্তা থেকে মূলত গ্রেপ্তারকৃতরা পেছনের লোকদের নাম বলেন না। আর তাতে অস্ত্রবাজিতে পেছনে থাকা লোকজন পার পেয়ে যাচ্ছেন।’

২০১৯ সালে বাকলিয়া এলাকায় বুবলী হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বিষয়ে বাকলিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন গত সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনার পর পুলিশ অস্ত্র দুটি উদ্ধার করেছিল। এটা আসামি শাহ আলমের সংগ্রহ করা অবৈধ অস্ত্র ছিল। কিন্তু বন্দুকযুদ্ধে সে মারা যাওয়ায় অস্ত্র দুটির মালিকানার বিষয়ে আর বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।’

তবে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িত একাধিক সূত্র দাবি করেছে, পুলিশ ওই ঘটনায় নাইনএমএম যে পিস্তল উদ্ধার করেছে, তা বাকলিয়া ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারদলীয় একজন প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির। ওই ব্যক্তির অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন শাহ আলম।

চট্টগ্রাম মহানগরীতে নজিরবিহীনভাবে সবচেয়ে বেশি আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে গত সিটি নির্বাচনে। ২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারি নির্বাচনী প্রচারের সময় নগরের ২৮ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আজগর আলী নামের এক মহল্লার সরদার মারা যান। গুলিবিদ্ধ হন আরও দুজন। এ ঘটনায় পুলিশ বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী যুবলীগ নেতা আবদুল কাদেরসহ ২৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল। বর্তমানে সবাই জামিনে আছেন। গত তিন বছরেও ওই ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। ডবলমুরিং থানায় হওয়া ঘটনার মামলাটি শুরু থেকেই তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ।

জানতে চাইলে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (বন্দর ও পশ্চিম) মুহাম্মদ আলী হোসাইন বলেন, ‘মামলাটির তদন্ত একেবারে শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। যার হাত দিয়ে গুলির ঘটনা ঘটেছে, তাঁকে আমরা গ্রেপ্তারে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে তিনি জামিনে আছেন। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি অস্ত্রটি উদ্ধারের জন্য, কিন্তু পাওয়া যায়নি। তবে সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এ ঘটনার পেছনে যাঁদের নাম উঠে এসেছে, তাঁদের আসামি করা হয়েছে। খুব শিগগির অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।’

২০২১ সালে সিটি নির্বাচনের দিন ২৭ জানুয়ারি নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের আমবাগান এলাকায় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী এবং একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মাহমুদুর রহমানের সমর্থকদের মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এ সময় আলাউদ্দিন (২৫) নামের এক রাজমিস্ত্রি নিহত হন। এ ঘটনায় করা মামলাটি শুরুতে চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানা-পুলিশ তদন্ত করে। বর্তমানে সিআইডি পুলিশ মামলাটি তদন্ত করছে। রেলওয়ে থানার কাছে তদন্ত থাকাকালীন ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার হয়নি বলে জানান রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম।

এ ছাড়া ওই নির্বাচনের দিন নগরীর ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীর সমর্থকদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া এবং গুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় নগর ছাত্রলীগের এক নেতার প্রকাশ্যে গুলি ছোড়ার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ওই ছাত্রলীগ নেতাকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তাঁর ব্যবহৃত অস্ত্রটিও জব্দ হয়নি। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১০ আসনে পাহাড়তলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ভোটকেন্দ্রের সামনে বর্তমান সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু ও সাবেক মেয়র মনজুর আলমের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার হয়। এ সময় দুজন গুলিবিদ্ধ হন। ওই ঘটনায় শামীম আজাদ নামের ছাত্রলীগের এক কর্মীর অস্ত্র হাতে প্রকাশ্যে গুলি করার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত হয়।

এই সংঘর্ষের ঘটনায় আহতদের পক্ষ থেকে দুটি মামলা হয়। খুলশী থানায় হওয়া একটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক জায়েদ আবদুল্লাহ বিন ছরওয়ার আজকের পত্রিকাকে বলেন, এই মামলায় এখন পর্যন্ত শামীম আজাদ ছাড়া আর কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। শামীমকে র‍্যাব গ্রেপ্তার করেছিল। তাঁর কাছ থেকে অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছে। র‍্যাব তখন জানায়, গ্রেপ্তার শামীম ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে ভোটের মাঠে নিয়োজিত ছিল।

কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শামীম আমাদের কলেজ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সে আমার কর্মী, এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। কিন্তু সে কোথায় কী করল, কার হয়ে নির্বাচনে প্রচারণায় ছিল বা কাকে গুলি করল, সেই বিষয়ে আমি জানি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আমিনুল ইসলাম নন, শিক্ষা উপদেষ্টা হচ্ছেন অধ্যাপক আবরার

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোঁড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

উপদেষ্টা হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

বসুন্ধরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে ২ বিদেশি নাগরিককে মারধর

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত