Ajker Patrika

যানজটে-দাবদাহে নাকাল ক্রেতা

ফয়সাল পারভেজ, মাগুরা
যানজটে-দাবদাহে নাকাল ক্রেতা

তীব্র দাবদাহে মাগুরা জেলায় এক সপ্তাহ ধরে জনজীবনে নেমে এসেছে ভোগান্তি। এতে অস্বস্তি নিয়েই শেষ মুহূর্তে ঈদের কেনাকাটা করে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে মাগুরাবাসীকে। গতকাল শনিবার মাগুরা শহরের বিভিন্ন সড়কে  একদিকে মানুষের ভিড়, অন্যদিকে ইজিবাইকের মতো ছোট ছোট যানবাহনের দৌরাত্ম্য। তাই মাগুরা শহরের প্রধান সড়কগুলো ছিল কার্যত অচল।

গতকাল শনিবার মাগুরা শহরের বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, কাপড়ের দোকানগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। প্রধান সড়ক সৈয়দ আতর আলী, কলেজ রোড থেকে ভায়না মোড়, নতুন বাজার, ঢাকা রোড এলাকার দোকানপাটে পা ফেলার জায়গা ছিল না।

জেলার চারটি উপজেলার ৩৬টি ইউনিয়ন থেকে আসা মানুষ এদিন জেলা শহরে ভিড় করেন ঈদের শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায়। মানুষের ভিড়ের কয়েক গুণ ছিল ইজিবাইক থেকে অটোরিকশার উপস্থিতি; যা প্রতিটি সড়কে ঘণ্টাব্যাপী যানজটের সৃষ্টি করে।

মাগুরা জেলার শ্রীপুর থেকে আগত রায়মা হাসনাত এক গৃহিণী বলেন, ‘ঢাকা থেকে অনেক কষ্টে শুক্রবার বাড়ি এসেছি। আজ (শনিবার) মাগুরা শহরে এলাম বাড়ির সবার জন্য কিছু কিনতে। কিন্তু এসে দেখি হাঁটার রাস্তা তো নেই-ই, তার ওপর এত ইজিবাইক যে গায়ের ওপরে চলে আসছে। এতটা সহ্য করা মুশকিল। ভালো শহরগুলোতে দেখি প্রধান সড়কে ইজিবাইক এই সময়টাতে চলতে দেয় না। আমাদের মাগুরায় তো ভয়াবহ অবস্থা।’

টুপি কিনতে আসা প্রবাসী আকমল হোসেইন বলেন, ‘বাড়ি এলাম আট বছর পর। সন্তানেরা এসেছে। বাড়ির সবার জন্য কেনাকাটা করেছি আগেই। আজ টুপি ও বাজার সদাই করতে হবে। হেঁটে আসতে গিয়ে একটা অটোগাড়ি পেছনে মেরে দিয়েছে। ব্যথা করছে। কিন্তু ঈদের আনন্দ বলে কথা। যানজট নিরসনে প্রশাসনের তেমন কোনো ভূমিকা দেখিনি। তবে এত বেশি ইজিবাইক শহরের ভেতরে এই সময় ঢুকতে দেওয়া ঠিক না।

মানুষ রোজা রেখে কত কষ্ট নিয়ে কেনাকাটা করছে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মারুফ মুনশি বলেন, ‘মাগুরা আমার জন্মস্থান। এখান থেকে কেনাকাটা করব বলে ঢাকা থেকে তেমন কিছু কিনিনি। আমার জেলার ব্যবসায়ীরা তাতে যদি কিছুটা এগিয়ে যায়—এই চিন্তায়। কিন্তু মাগুরা শহরের অবস্থা ঢাকার থেকে খারাপ মনে হচ্ছে। যত্রতত্র ইজিবাইক। কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। দেখে খুব খারাপ লাগল যে, আমাদের শহরটা এখনো শৃঙ্খলিত হয়নি।’

অন্যদিকে ঈদের শেষ মুহূর্তে টুপি, সুগন্ধি থেকে মেয়েদের মেহেদির চাহিদা বেশি জানিয়ে পুরোনো বাজারের ব্যবসায়ী সোহাগ মিয়া বলেন, ‘টুপি আজ বেশি বিক্রি হচ্ছে। পাঞ্জাবির রঙের সঙ্গে মিল রেখে অনেকে টুপি চাইছেন। আমার দোকানে সৌদি, ইরান, কাতারসহ নানা মুসলিম দেশের টুপি আছে। দাম বেশি হলেও মানুষ কিনতে আগ্রহী আছে।’

শহরের জুতাপট্টি এলাকায় রাস্তার পাশেই মেহেদি বিক্রি করছে নয়ন। তিনি বলেন, ‘মেহেদি সাধারণ ঈদের আগের দিন বেশি বিক্রি হয়। নানা ব্র্যান্ডের মেহেদি বিক্রি করছি। আজ (শনিবার) দেখছি মেহেদি কেনার জন্য ভিড় হচ্ছে। আশা করি সোমবার ঈদের আগেই আমার বিক্রি ভালো হবে।’ 
ঈদের যানজট নিয়ে পুলিশের দায়িত্বে থাকা একাধিক ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, ‘শহরে ইজিবাইক ঢোকা কার্যত আইন নেই। তবে মাগুরা পৌরসভার অনুমতি নিয়ে অনেকে চালায়। আমরা বিষয়টা বুঝি যে একটা দরিদ্র মানুষ এই আয় দিয়ে সংসার চালায়। তবু মানবিক কারণে ছাড় দিলেও এখন এই ভোগান্তি চরমে উঠেছে; যা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা একা পুলিশের পক্ষে কঠিন।’

মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসির উদ্দীন বলেন, ঈদে যানজট যেন মানুষের জন্য কোনো ক্ষতিকর না হয়, সে জন্য ভিড়ের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ রয়েছে। প্রতিটি মার্কেটের সামনে, প্রধান সড়কে পুলিশের পাহারা রয়েছে। মানুষ যেন নিরাপত্তাহীনতায় না থাকে, সে জন্য পুলিশ সব সময় প্রতিটি বিষয় নজর রাখছে বলে এই কর্মকর্তা জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত