ধানের ফলন কম, খরচ ওঠা নিয়ে শঙ্কায় কৃষক

ফয়সাল পারভেজ, মাগুরা
প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১২: ১৬

মাগুরা জেলায় এ মৌসুমের ধান কাটা ও মাড়াই চলছে। নানা রকম প্রতিকূলতায় এবার দেরিতে আবাদ হওয়ায় ধান মাঠ থেকে উঠতে কিছুটা সময় লেগেছে।

কৃষি বিভাগ বলছে, এ বছর জেলার ৪ উপজেলায় ৫৮ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ হয়েছে। ৯০ ভাগ ধান এখন কাটা শেষ। তবে নতুন ধান চাষে যে খরচ হয়েছে, তা ওঠা নিয়ে কৃষকের মাঝে শঙ্কা কাজ করছে।

জেলা সদরের নালিডাঙ্গার কৃষক সবুর আলী ধান চাষ করেছেন চার বিঘা জমিতে। সময়মতো পানি ও যত্নের অভাবে বিঘাপ্রতি ধান পেয়েছেন ১০ মণ, যা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম। তিনি গতকাল রোববার আজকের পত্রিকাকে বলেন, অন্যবার প্রতি বিঘায় ধান পেয়েছি ১৭-২০ মণ। সেই একই জমিতে এবার ধানের ফলন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে ধানের খরচের টাকা বাজার থেকে আনা কঠিন হবে বলে শঙ্কা এই কৃষকের।

এবার ধান রোপণ করা থেকে পরে সার ও সেচে খরচ বেশি হওয়ায় ধানের দাম নিয়ে চিন্তায় আছেন নীজনান্দুয়ালী গ্রামের কৃষক তৌহিদ রহমান। তিনি জানান, এবার ধান চাষে তেলের দাম বাড়ায় সেচ খরচ বেশি হয়েছে। সেই সঙ্গে সার, ওষুধ, দিনমজুরির খরচও বেশি।

মণপ্রতি খরচের বিষয়ে এই কৃষক জানান, এক বিঘা জমি চাষে খরচ পড়ে ১৫০০ টাকা। ধান লাগানো ৩২০০, সার দেওয়ার খরচ ৩৫০০ টাকা। এবার ধানে ওষুধ দেওয়া ও আগাছা পরিষ্কার করার খরচ দিনমজুরি ধরে খরচ আরও ৩০০০ টাকা। এরপর ধান পাকলে তা বিঘা প্রতি কাটতে শ্রমিক খরচ ২৫০০ টাকা। তাহলে এক বিঘা জমিতে খরচ হচ্ছে প্রায় ১৩৫০০ টাকা। বাজারে এখন বিক্রি হচ্ছে স্বর্ণা ধান মণ প্রতি ১১২০ টাকায়। প্রতি বিঘায় ১১ মণ ধানের মূল্য দাঁড়াচ্ছে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা। এখানে কোনোরকমে উৎপাদন খরচ উঠে আসছে। ধানের ফলন বেশি হলে খরচ পুষিয়ে লাভ থাকতে পারত।

এদিকে মাগুরা নতুন বাজারের ধানের পাইকারি আড়তে এ মৌসুমের ধান আসতে শুরু করেছে। ধানের বাজার নিয়ে আড়তদার নিশিকান্ত সরকার আজকের পত্রিকাকে জানান, ধান এখন প্রতিদিন সকাল-বিকেল কৃষকেরা নিয়ে আসছেন। এক সপ্তাহ আগে স্বর্ণা ছিল ১১৫০ টাকা মণ, এখন দাম কমে বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১০৫০ টাকা।

ধানের আড়তদার কালা চাঁদ বলেন, এখন স্বর্ণা ১০৫০ টাকা মণ, বিনা বিভিন্ন জাতের ধান ১২০০ থেকে ১৩৬০ টাকা মণ বেচাবিক্রি চলছে।সুবলতা জাতের ধান কিছুটা চিকন হওয়ায় তা ১৪০০ থেকে ১৫৫০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। ধানের বাজার আরও কমতে পারে বলে এই ব্যবসায়ী মনে করেন। তিনি আরও বলেন, এখন প্রচুর ধান আসছে বাজারে। ফলে সরবরাহ বেশি হলে ধানের দাম এই অবস্থায় থাকবে না।মণপ্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা কমে গেলে কৃষকদের লাভ করা কঠিন হবে বলে তিনি মনে করেন।

মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে জানান, এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে, তা বলা যাবে না। পানির অভাবে অনেক এলাকায় দেখেছি, ধানের ফলন আশানুরূপ হয়নি। তবে ধান কাটা এখনো কিছু এলাকায় চলছে, যা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে উঠে যাবে। বাজারে কৃষক ধান আনা শুরু করেছেন। জাতভেদে দাম আলাদা হওয়ার কথা।কৃষকেরা যেন সঠিক দাম পান, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, ধানের দাম এই অবস্থায় চললে কৃষকের সমস্যা হবে না।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত