ধান কেটে বাড়ি ফেরা হলো না নাটোরের ৫ শ্রমিকের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৭ মে ২০২২, ০৬: ৫৯
আপডেট : ২৭ মে ২০২২, ১৮: ০২

ধান কেটে বাড়তি টাকা আয় করতে ১৫ দিন আগে টাঙ্গাইলে গিয়েছিলেন নাটোরের ৫ শ্রমিকসহ আরও কয়েকজন। গত মঙ্গলবার কাজ শেষে তাঁরা বাড়ি ফিরছিলেন। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে তাঁরা সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা এলাকায় পৌঁছালে একটি ট্রাকের সঙ্গে তাঁদের বহন করা লেগুনার সংঘর্ষ হয়। এতে পাঁচ কৃষিশ্রমিক নিহত হন। তাঁদের মধ্যে নাটোরের বাগাতিপাড়ার চারজন ও গুরুদাসপুরের একজন রয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় মরদেহগুলো নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছালে তাঁদের স্বজনদের মধ্যে শোকের মাতম দেখা গেছে।

প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

জানা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের বাঁশবাড়ীয়া গ্রামের মকবুল হোসেন, হালিম আলী এবং পাঁকা ইউনিয়নের ছোট পাঁকা গ্রামের মুকুল হোসেন, মনির হোসেন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গুরুদাসপুর উপজেলার জুমাইগর গ্রামের হায়দার আলী নামের অপর এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন।

তাঁদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা সবাই দিনমজুরের কাজ করতেন। এলাকায় এখন কাজ কম। তাই প্রায় ১৫ দিন আগে তাঁরা ধান কাটা কাজের উদ্দেশ্যে টাঙ্গাইল এলাকায় গিয়েছিলেন। কয়েক দিন কাজ করে ভালো টাকাও আয় করেছিলেন। গত মঙ্গলবার রাতে তাঁরা নিজ-নিজ পরিবারে ফোন করে বাড়ি আসার কথা বলেছিলেন। কেউ কেউ রাতে লেগুনায় ওঠার পরও ফোন করে বাড়ি আসার কথা জানান। কিন্তু সেই আসা আর হলো না। পথে মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁরা নিহত হলেন। তাঁরা সবাই ছিলেন তাঁদের পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এখন পরিবারগুলো কীভাবে চলবে তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন তাঁরা।

বাগাতিপাড়ার নিহত চার শ্রমিকের বাড়িতে আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি গিয়ে দেখেন, বাঁশবাড়ীয়া গ্রামের মকবুল হোসেনের মা ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায়। তিনি ঘরের বারান্দায় কাঁদছেন। মকবুলের স্ত্রী এবং স্বজনেরাও ঘরের মধ্যে কান্নাকাটি করছেন।

হালিম আলীর ফুপু মাথায় ও বুকে হাত চাপড়িয়ে কান্না করছেন। ওই শ্রমিকের স্ত্রী ও মাকে মানুষ থেকে দূরে পাশের একটি বাড়িতে রাখা হয়েছে।

ছোট পাঁকা গ্রামের মনির হোসেনের বোন যেন পাগলপ্রায় হয়ে প্রলাপ করেন। ওই শ্রমিকের স্ত্রীও যেন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। এবং মুকুল হোসেনের বাড়িতে কয়েকটি ঘরের মধ্যে চলছে স্বজনদের কান্না।

মনির হোসেনের চাচা জিন্নাহ আলী বলেন, ‘পরিবারের ছয় সদস্যের মধ্যে একমাত্র সে-ই ছিল উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সেও মারা গেল। বাড়ির ভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই। এখন তাঁর পরিবার কীভাবে চলবে বুঝতে পারছি না।’

এদিকে নাটোরের গুরুদাসপুরের নাজিরপুর ইউনিয়নের জুমাইনগর এলাকার হায়দার আলী মোল্লা বাড়িতে যান আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি। তিনি দেখেন তাঁর বাড়িতে স্বজনদের ভিড়। অভাব অনটনের সংসারে ওই শ্রমিক একাই বহন করতেন সব খরচ। এখন ওই সংসারের হাল ধরার মতো আর কেউ নেই।

এদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের বাড়িতে গতকাল দুপুরে উপস্থিত হন নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ, বাগাতিপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম গকুল, বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রিয়াংকা দেবী পাল। তাঁরা তাঁদের পরিবারকে সমবেদনা জানান।

বাগাতিপাড়ার ইউএনও প্রিয়াংকা দেবী পাল বলেন, উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তাঁদের দাফন কাফনের জন্য প্রত্যেক পরিবারকে পাঁচ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত