থানার সামনের জব্দ গাড়ি সরানো হবে

আল-আমিন রাজু, ঢাকা
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২২, ০৮: ৫৩

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ব্যস্ততম এলাকা রিং রোড। সেখানেই রাস্তার পাশে ভাড়া বাড়ির দুটি ফ্লোর নিয়ে আদাবর থানা। জায়গা বলতে তাদের এতটুকুই। ফলে দুর্ঘটনা, মাদকদ্রব্যসহ বিভিন্ন মামলায় জব্দ করা যানবাহন সড়কেই রাখতে হচ্ছে। জব্দ করা যানবাহনের মধ্যে আছে মোটরসাইকেল, রিকশা থেকে শুরু করে বাস, ট্রাক। এমনকি থানার নিজস্ব গাড়ির ঠিকানাও সেই রাস্তা।

এতে থানার সামনের রিংরোড সংকুচিত হয়ে আছে। গাড়ির চাপ সামান্য বাড়লেই যানজট তীব্র রূপ নেয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ৫০টি থানার বেশির ভাগের চিত্র একই রকম। থানার সামনে সড়কে গাড়ি রাখার কারণে সৃষ্ট জনভোগান্তি থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে এবং যানবাহনগুলো রক্ষা করতে উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এর জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। বিষয়টি পুলিশকেও জানানো হয়েছে।

এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে ডিএমপি। ডিএনসিসির আওতাধীন এলাকায় ডিএমপির চারটি বিভাগের অধীনে থানা আছে ২৫টি।  

গত ২৫ অক্টোবর আদাবর থানা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, থানার সামনের রাস্তার দুই পাশই জব্দ করা গাড়ির দখলে। অযত্নে পড়ে থাকা বেশ কিছু গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট। থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে খোলা অবস্থায় ফেলে রাখায় এসব যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। চুরিও হয়ে গেছে অনেক যন্ত্রপাতি। মূল্যবান এসব গাড়ি আদালতের এখতিয়ারে থাকলেও তা রক্ষা করা বা নিরাপদ রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। এ অবস্থায় এগুলো রক্ষা করা এবং জনদুর্ভোগ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে ডিএনসিসি।

ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, আওতাধীন এলাকায় ডিএমপির ২৫ থানার সড়কে রাখা এ ধরনের গাড়ি সরিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মেয়র আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে গত ২৪ সেপ্টেম্বর এক সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের মধ্যে ১ নম্বরে রাখা হয়েছে গাড়ি সরানোর বিষয়টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের।

গাড়ি সরানোর উদ্যোগের বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সেলিম রেজা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গাড়িগুলো আসলে মামলার আলামত। আদালতের সম্পত্তি। এটা ইচ্ছা করলেই কেউ সরাতে পারবে না। এটার জন্য আদালতের অনুমতি লাগবে। আমরা গাড়ি সরানোর বিষয়ে পুলিশ বিভাগ ও আদালতের সহযোগিতা চেয়েছি। আশা করা যায় দ্রুতই একটি সিদ্ধান্ত আসবে।’ 
গাড়ি কোথায় রাখা হবে জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী বলেন, ‘জায়গা আমরা নির্ধারণ করব না। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) আমরা বলব জায়গা নির্ধারণ করে দিতে। সবার সহযোগিতা নিয়ে এটা করতে হবে। তবে আদালতের সামনে অনেকগুলো সুযোগ আছে। আদালত চাইলে জব্দ করা গাড়ির কাগজসহ বিভিন্ন তথ্য রেখে মালিকের জিম্মায় দিয়ে দিতে পারেন, যদিও সেটি আদালতের নিজস্ব এখতিয়ার। আবার আদালত চাইলে এগুলো ধ্বংস করতে পারেন। এটিও একটি ব্যবস্থা হতে পারে।’

এদিকে ডিএমপি বলছে, রাজধানীর ৫০ থানায় যতসংখ্যক গাড়ি জব্দ রয়েছে, সে তুলনায় জায়গা খুবই অপ্রতুল। একসময়ে আগারগাঁও এলাকায় একটি ডাম্পিং স্টেশন থাকলেও সেটি সরিয়ে মোহাম্মদপুর বসিলায় নেওয়া হয়েছে। মিরপুর ও কাঁচপুরে ডিএমপির আরও দুটি অস্থায়ী ডাম্পিং স্টেশন রয়েছে। কিন্তু এসব স্টেশনে পর্যাপ্ত গাড়ি রাখার জায়গা নেই।

থানার সামনের রাস্তায় রাখা গাড়ি সরানোর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে ডিএমপি সদর দপ্তর। এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) এ কে এম হাফিজ আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গাড়ি সরিয়ে ডাম্পিং স্টেশনে রাখার উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। সিটি করপোরেশনকে গাড়ি সরিয়ে নিতে আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। বিশ্বের প্রতিটি সিটিতে গাড়ি ডাম্পিং করার নির্দিষ্ট স্থান থাকে। আমাদের সিটিতে সেটি নেই। সিটি করপোরেশন যদি ডাম্পিংয়ের স্থান দেয় তাহলে খুবই ভালো হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অনেক থানা ভাড়া বাড়িতে আছে। ঠিকমতো নিজেদের গাড়ি রাখার জায়গা নেই।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত