বালু ব্যবসায় নষ্ট ফসলি জমি

দোহার (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২২, ০৭: ৪৫
আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২২, ০৮: ৪২

ঢাকার দোহার উপজেলায় মৈনট ঘাট ও আশপাশে থাকা ফসলি জমি নষ্ট করে চলছে বালু ব্যবসা। এতে দিন দিন উর্বরতা হারাচ্ছে মৈনট ঘাট এলাকার ফসলি জমি।

একসময় মৈনট ঘাট এলাকায় প্রচুর বাদাম, সরিষা, ধনিয়া, গমসহ নানা ধরনের সবজি ও ফসল উৎপাদিত হতো। কিন্তু বালুর কারণে এই এলাকায় ফসলের উৎপাদন অনেক কমে গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মিনি কক্সবাজারখ্যাত মৈনট ঘাটে বিশাল এলাকাজুড়ে স্তূপ তৈরি করে বিক্রি করা হচ্ছে বালু। এই বালু বাতাসে উড়ে গিয়ে পাশে থাকা ফসলি জমিতে পড়ছে। এতে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসলি জমি।

স্থানীয় কৃষক আবুল হোসেন বলেন, ‘আমাদের জমিতে বালু পড়ে জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ওই সব জমিতে এখন ফসল উৎপাদন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আগে এই মৈনটে আমরা প্রচুর পরিমাণে ধান, বাদাম, কলাই, গম, সরিষাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি আবাদ করতাম। কিন্তু এখন সারা মৈনট ঘাট ঘুরেও এসব ফসলের দেখা পাওয়া যায় না। আর এর মূল কারণ এই বালু ব্যবসা।’

স্থানীয় আরও কয়েকজন কৃষক জানান, এখানে বালু ব্যবসা করছেন সব প্রভাবশালী। তাঁদের কিছু বলা যায় না। আর এই বালুর কারণে তাঁরা কোনো ফসলই আবাদ করতে পারছেন না। সব জমি আস্তে আস্তে বালু ব্যবসায়ীরা কিনে নিচ্ছেন। এ রকম চলতে থাকলে কিছুদিন পর আর চাষযোগ্য জমি থাকবে না।

সবুজ নামে এক পথচারী বলেন, ‘প্রথম দিকে আমরা সময় পেলেই মৈনট ঘাটে আসতাম। তখন মৈনট ছিল সবুজ ফসলে ঘেরা। আর এখন প্রয়োজনেও আসতে ইচ্ছে করে না। এখন এলেই বালুতে তলিয়ে যাই, এর ফলে গোসল না করা পর্যন্ত সারা দিন শরীর চুলকায়।’

আর এসব বালু পরিবহনে ব্যবহৃত হচ্ছে ট্রাক। উপজেলার প্রতিটি সড়কে দাপিয়ে বেড়ায় বেপরোয়া ওই ট্রাকগুলো। এসব ট্রাকের বেশির ভাগেরই নেই বৈধ কাগজপত্র। এ ছাড়া তাঁরা বেপরোয়া গতিতে হাইড্রোলিক হর্ন বাজিয়ে গাড়ি চালান। বেশির ভাগ চালকের নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। সব মিলিয়ে নিয়মকানুন ছাড়াই দিনরাত সড়কগুলো দখল করে রেখেছে মাটি ব্যবসায়ীদের এই যন্ত্রদানবগুলো।

বিশেষ করে স্কুল চলাকালে ট্রাকের বেপরোয়া গতি জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এযাবৎকালে উপজেলার বহু মানুষের প্রাণহানি হয়েছে এসব ট্রাকের চাপায়।

স্থানীয়দের মাধ্যমে জানা যায়, রাজনৈতিক পরিচয়ে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী মিলে শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি করে এই বালু ব্যবসা করে যাচ্ছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ কোনো কথা বলতে পারেন না।

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, ফসল বুনে যে টাকা আয় হয়, তাঁর থেকে বেশি হয় বালু বিক্রি করে। আর সে জন্যই অনেকেই ফসল বোনা বাদ দিয়ে বালুর ব্যবসা ধরেছেন।

বালুর ট্রাকের কারণে ফসলি জমির পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাস্তাঘাট। এ ছাড়া মৈনট ঘাট ইতিমধ্যে মিনি কক্সবাজারের খ্যাতি অর্জন করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে পর্যটকেরা ঘুরতে আসেন। কিন্তু বালুর কারণে এখানে পর্যটকেরা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।

বেপরোয়া এই বালু ব্যবসা ও ট্রাকের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে একসময় মৈনট ঘাট পর্যটকশূন্য হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এ বিষয়ে দোহার উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফজলে রাব্বি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি জেনেছি। সেখানে খুব দ্রুত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালানো হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত