বেকার শ্রমিকেরা অর্ধাহারে গায়েব হচ্ছে যন্ত্রপাতি

জামালপুর ও সরিষাবাড়ী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২২, ১২: ০৯

পাটের সোনালি দিনগুলো এখন রূপকথার গল্প হয়ে গেছে। পাটশিল্পের জন্য দ্বিতীয় ব্র্যান্ডিং হিসেবে পরিচিত ছিল জামালপুরের সরিষাবাড়ী। তবে লোকসানের কারণ দেখিয়ে একে একে সব পাটকল বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত এই অঞ্চলের প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। এখন তাঁদের দিন কাটাতে হচ্ছে অর্ধহারে-অনাহারে। ফলে কৃষকেরা পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। অন্যদিকে বন্ধ কারখানার যন্ত্রপাতি খুলে নিয়ে যাচ্ছে দুর্বৃত্তরা।

পাটশিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বলছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে বন্ধ হওয়ায় কারখানাগুলো চালু করা হলে আবারও ফিরে আসবে পাটের ঐতিহ্য। আর উপজেলা প্রশাসন বলছে, বন্ধ হওয়া পাটকলগুলো চালু করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাট, সরিষা ও ঘোড়াগাড়ি—এই তিনটি মিল একসময়ের ঐতিহ্যবাহী সরিষাবাড়ী এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। সোনালি স্বপ্নে ঘেরা এই সরিষাবাড়ী পাটশিল্পের জন্য সারা দেশে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল একসময়। কিন্তু মালিকদের নানা টালবাহানায় একের পর এক বন্ধ হয়ে যায় পাটের কারখানা। এখন এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অধিকাংশই বেকার। কেউ কেউ পেশা বদলে জীবন বাঁচাচ্ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সরিষাবাড়ীর সব পাটকল লাভে ছিল। উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ২২টি পাটকল ছিল। এর মধ্যে আলহাজ্ব জুট মিলটি ছিল আধা সরকারি। ২০১৮ সালে উপজেলার সবচেয়ে বড় আলহাজ্ব জুট মিলস লিমিটেড লোকসানের অজুহাত তুলে কর্তৃপক্ষ মিলটি বন্ধ করে দেয়। আর করোনার সময়ে ২০২০ সালে পপুলার জুট মিলস লিমিটেড, এ আর এ জুট মিলস লিমিটেড, কেএইচবি ফাইবার মিমকো জুট মিলস লিমিটেড শ্রমিকদের বেতন-বোনাস, ব্যবসায়ীদের বিল বকেয়া রেখেই মিল বন্ধ করে দেয়।বর্তমানে উপজেলার প্রায় সব মিলই বন্ধ রয়েছে।

মিলশ্রমিকদের দাবি, মিলগুলো বন্ধ করে দেওয়ায় হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে মিলগুলোয় থাকা কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট ও চুরি হয়ে যাচ্ছে। তাঁদের দাবি প্রতিটি মিলই লাভে ছিল। শ্রমিকদের বেতন-বোনাসের টাকাও পরিশোধ করেনি তারা।

আলহাজ্ব জুট মিলের প্রেস নিরাপত্তা হাবিলদার ৬৫ বছর বয়সের মুমতাজ আলী বলেন, ‘৩০ বছর এই মিলে চাকরি করেছি। প্রতিদিন হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর পদচারণায় মুখরিত থাকা মিলটি এখন অলস পড়ে আছে। এই মিলটি লাভে ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই মিলটি বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এখন আমরা বেকার হয়ে পড়েছি।’

মিলের কর্মচারী জুয়েল মিয়া বলেন, ‘আমাদের বেতন-বোনাস পাওনা রেখেই মিলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মিলের প্রশাসনিক ভবন, রেস্ট হাউস, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, অফিসারদের বাসভবন, হাসপাতাল—সবকিছুই এখন পরিত্যক্ত। কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। চুরি হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান জিনিসপত্র। শ্রমিকদের দাবি আলহাজ্ব মিলটিসহ সরিষাবাড়ীর বন্ধ থাকা সব মিল দ্রুত সময়ের মধ্যে চালু করা হলে হাজারো শ্রমিক কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন।’

পাট ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বলেন, একের পর এক পাটকলগুলো বন্ধ করে দেওয়ায় তাঁরা লোকসানে পড়েছেন। চাষিরা পাট চাষ ছেড়ে অন্য ফসল চাষ করছেন। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। ব্যবসায়ীরা সরকারের প্রতি মিলগুলো চালুর দাবি জানান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সরিষাবাড়ীর পাটের ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। মিলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চাষিরা দিন দিন পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে। তাঁরা পাট চাষ বাদ দিয়ে অন্য ফসলে আগ্রহী হচ্ছেন।

সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উপমা ফারিসা বলেন, সরিষাবাড়ীতে একসময় ২২টি পাটকল ছিল। কালের বিবর্তনে এখন বেশ কয়েকটি পাটকল বন্ধ হয়ে গেছে। পাটকলগুলো চালুর বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত