ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের উল্লিখিত ‘শরীফার গল্প’ নিয়ে নতুন করে বিতর্কের কেন্দ্র হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক: বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে ‘শরীফার গল্প’ অংশটুকু ছিঁড়ে ফেলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎস। এ ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ঝর্ণার গল্প’ লেখা একটি বইয়ের পৃষ্ঠার ছবি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, এটি কারিকুলাম বা শিক্ষাক্রমের বইয়ের পৃষ্ঠা।
‘ওয়েলকাম বাংলাদেশ’ নামে ২৭ হাজার ফলোয়ারের একটি পেজ থেকে ২১ জানুয়ারি বইয়ের পৃষ্ঠার ছবিটি শেয়ার করে লেখা হয়, ‘শরীফার গল্প বা ঝর্ণার গল্পই শুধু নয়। নতুন কারিকুলামের প্রতিটি পাতায় পাতায় রয়েছে ইসলামী বিদ্বেষ; সাথে আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতির উপর কঠোর আঘাত। আচ্ছা আমি একজন শিক্ষক আমি কীভাবে আমার ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এইভাবে খোলামেলা এইগুলো পড়াতে পারি!! এইখানে উভয় ছাত্র/ছাত্রী উপস্থিত। আর কোন মা বাবা তার ছেলেমেয়েকে কিভাবে এইগুলো পড়াবে। এইগুলো পাঠ্যপুস্তকে সরাসরি না দিলে কি হতো না!!’
আসিফ মুহাম্মদ নামের একটি পেজ থেকে ১৬ জানুয়ারি বইয়ের পৃষ্ঠার ছবিটি পোস্ট করে লেখা হয়, ‘নতুন শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে প্রচুর আলোচনা দরকার। ট্রান্স*ন্ডার হচ্ছে অনেকগুলো পার্টের একটা গুরুত্বপূর্ণ পার্ট। কিন্তু কথা বলা দরকার পুরো সিস্টেম নিয়ে, শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে। আজকে এলাকার এক দোকানে গিয়ে দেখি নতুন পাঠ্যপুস্তক নিয়ে কথা-কাটাকাটি চলছে। দুই চাচা এই শিক্ষাব্যবস্থার পক্ষে, দুইজন বিপক্ষে। এই ছবিটা দেখিয়ে বললাম, এটা আপনার ১০ বছরের বাচ্চাকে শেখানোর ক্ষতিটা বুঝতে পারছেন?...’ পোস্টটিতে অনেক মন্তব্যকারীকে পৃষ্ঠাটি কোন শ্রেণির বইয়ের, তা জানতে চেয়ে কমেন্ট করতে দেখা গেছে।
লুৎফুর রহমান নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ছবিটি তাঁর অ্যাকাউন্টে শেয়ার করে লিখেছেন, ‘এইগুলো কি আমাদের শেখার দরকার আছে? শিক্ষাকে যৌনতায় নিয়ে যাচ্ছেন কেন? ছেলে মেয়ে উভয় যখন ক্লাসে এইগুলো এক সাথে পড়বে, তখন তাদের মাঝে কি বিরাজ করবে??’ লুৎফুর রহমানের এই পোস্টে একজন জানতে চান, বইয়ের পৃষ্ঠা কোন শ্রেণির? উত্তরে তিনি জানান, নবম শ্রেণির বই। (ফেসবুক পোস্টগুলোর ভাষাগত কোনো পরিবর্তন করা হয়নি)
ভাইরাল বইয়ের পৃষ্ঠাটি কি নতুন পাঠ্যক্রমের বা নবম শ্রেণির? যাচাই করে দেখেছে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
ভাইরাল পৃষ্ঠাটির উৎস অনুসন্ধানে ফেসবুকে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে এইচএসসি ব্যাচ ২০২৪ নামের একটি প্রায় দেড় লাখ সদস্যের ফেসবুক গ্রুপে ৮ জানুয়ারি ২টা ২৮ মিনিটে দেওয়া একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টটিতে ভাইরাল পৃষ্ঠাটি যুক্ত করে লেখা হয়েছে, ‘এটাও শিখাইতে হবে? জেমস ডায়েরি নামক একটা বই মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদেরকে দেওয়া হচ্ছে। এদের আসলে উদ্দেশ্য কি? একটা বেহায়া প্রজন্ম তৈরি করা।’
এই সূত্রে পরবর্তী অনুসন্ধানে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কৈশোরকালীন স্বাস্থ্যের ওয়েবসাইটে ‘আমার জেমস ডায়েরি, জেনারেশন ব্রেকথ্রু প্রকল্প’ নামে একটি বই খুঁজে পাওয়া যায়। বইটির ৫৫ পৃষ্ঠায় ‘ঝর্ণার গল্প’ নামক অংশটি খুঁজে পাওয়া যায়।
‘আমার জেমস ডায়েরি’ বইটির পরিচয়ে লেখা আছে, এটি প্রকাশনার দায়িত্বে ছিল প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। সম্পাদনা ও পরিমার্জনা করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ (এনসিটিবি)। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার তৎকালীন পরিচালক অধ্যাপক ড. প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য্য বইটির সার্বিক নির্দেশনায় ছিলেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ ছাপা হয়।
প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ ‘সেক্স এডুকেশন: সাড়ে তিন শ স্কুলের শিক্ষার্থীরা ‘জেনারেশন ব্রেক থ্রু’র ক্লাসরুমে পাঁচ বছরে যা শিখলো’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালে বাংলাদেশের চারটি জেলার ৩৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রথম চালু করা হয়েছিল। এই প্রকল্পের আওতায় শিক্ষার্থীদের জেমস বা ‘জেন্ডার ইকুয়িটি মুভমেন্ট ইন স্কুলস’ নামে একটি কোর্স পড়ানো হয়। কোর্সটি সাজানো হয়েছিল ‘আমার জেমস ডায়েরি’ নামের একটি বই, সাতটি কম্পিউটার গেমস, দুটি বোর্ড গেম, একটি অ্যানিমেশন ভিডিও আর এক শ পর্বের রেডিও ধারাবাহিক দিয়ে।
বিবিসির ওই প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, ২০১৮ শেষ হওয়ার সাথে সঙ্গেই জেনারেশন ব্রেকথ্রু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। যদিও তখন অনেক বিদ্যালয়ে কোর্সটি পড়ানো অব্যাহত ছিল। তবে তখন প্রকল্পটির তৎকালীন পরিচালক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বিবিসিকে জানান, ‘তারা অচিরেই প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু করবেন।’ সেখানে বিদ্যমান সাড়ে ৩০০ বিদ্যালয়ের সঙ্গে আরও ২০০টি বিদ্যালয় যুক্ত করা হবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে জেনারেশন ব্রেকথ্রু প্রকল্পটির প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায় নিয়ে বিস্তারিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
ওয়েবসাইটটিতে বলা হয়, বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের আর্থিক সহায়তায় ইউএনএফপির মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ কর্তৃক জেনারেশন ব্রেকথ্রু প্রকল্পের প্রথম পর্যায় সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। ১০-১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীরা এই প্রকল্পের উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠী। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী ও ঢাকা থেকে মোট ৩৫০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা এবং ১৫০টি ক্লাবের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের মনোভাব পরিবর্তনের জন্য প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।
প্রথম পর্যায়ের সফলতার ধারাবাহিকতায় আরও পাঁচটি জেলা সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, মৌলভীবাজার, পটুয়াখালী ও রাঙামাটি জেলার ২৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জেনারেশন ব্রেকথ্রু প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে এ প্রকল্পের অর্থায়ন করছে কানাডা সরকার। ইউএনএফপিএর কারিগরি সহায়তায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও কনসার্নড উইমেন ফর ফ্যামিলি ডেভেলপমেন্ট (সিডব্লিউএফডি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটির দ্বিতীয় পর্যায়ের পরিচালক ছিলেন অধ্যাপক ড. প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য্য।
প্রকল্পটি বর্তমান অবস্থা ও প্রকল্পের বইটি এখনো বিতরণ করা হয় কি না, সে সম্পর্কে জানতে দ্বিতীয় পর্যায়ের পরিচালক অধ্যাপক ড. প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ। বর্তমানে তিনি মাউশির প্রশিক্ষণ শাখার পরিচালক হিসেবে আছেন। তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটি অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এই প্রকল্প ২০২১-২২ সালেই শেষ হয়ে গেছে। আমি যদ্দুর জানি, এটা শেষ হয়ে গেছে। এরপর আর এটির মেয়াদ বাড়ানো হয়নি।’
মাউশির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার উপপরিচালক মো. মুরশীদ আকতারও আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগকে প্রকল্পটি চালু নেই বলে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘জেনারেশন ব্রেকথ্রু প্রকল্পটি বছরখানেক হবে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে এবং এই প্রকল্প পাইলটিং ছিল, এর অনেক কিছুই বর্তমান পাঠ্যপুস্তকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাই প্রকল্পটির কোর্স ম্যাটারিয়ালেরও আর ভ্যালিডিটি নেই।’
পরে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ওয়েবসাইট থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শ্রেণির স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইগুলো খুঁজে ভাইরাল পৃষ্ঠাটির মতো কোনো পৃষ্ঠা বা ‘ঝর্ণার গল্প’ নামে আলাদা কোনো পাঠ খুঁজে পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাক্রমে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইটি নেই।
সুতরাং উপরিউক্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এটি স্পষ্ট যে, ঝর্ণার গল্প শীর্ষক ভাইরাল পৃষ্ঠাটি নতুন শিক্ষাক্রমের কোনো বইয়ের পৃষ্ঠার নয়। এটি মূলত সরকারের জেনারেশন ব্রেকথ্রু প্রকল্পের কোর্সের বই ‘আমার জেমস ডায়েরি’ নামের একটি বইয়ের পৃষ্ঠা। জেনারেশন ব্রেকথ্রু প্রকল্পটি ২০১৪ সালে প্রথম শুরু হয়। প্রথম পর্যায় শেষে ২০১৯ সালে প্রকল্পটি দ্বিতীয় পর্যায়ে শুরু হলেও বর্তমানে প্রকল্পটি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের উল্লিখিত ‘শরীফার গল্প’ নিয়ে নতুন করে বিতর্কের কেন্দ্র হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক: বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে ‘শরীফার গল্প’ অংশটুকু ছিঁড়ে ফেলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎস। এ ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ঝর্ণার গল্প’ লেখা একটি বইয়ের পৃষ্ঠার ছবি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, এটি কারিকুলাম বা শিক্ষাক্রমের বইয়ের পৃষ্ঠা।
‘ওয়েলকাম বাংলাদেশ’ নামে ২৭ হাজার ফলোয়ারের একটি পেজ থেকে ২১ জানুয়ারি বইয়ের পৃষ্ঠার ছবিটি শেয়ার করে লেখা হয়, ‘শরীফার গল্প বা ঝর্ণার গল্পই শুধু নয়। নতুন কারিকুলামের প্রতিটি পাতায় পাতায় রয়েছে ইসলামী বিদ্বেষ; সাথে আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতির উপর কঠোর আঘাত। আচ্ছা আমি একজন শিক্ষক আমি কীভাবে আমার ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এইভাবে খোলামেলা এইগুলো পড়াতে পারি!! এইখানে উভয় ছাত্র/ছাত্রী উপস্থিত। আর কোন মা বাবা তার ছেলেমেয়েকে কিভাবে এইগুলো পড়াবে। এইগুলো পাঠ্যপুস্তকে সরাসরি না দিলে কি হতো না!!’
আসিফ মুহাম্মদ নামের একটি পেজ থেকে ১৬ জানুয়ারি বইয়ের পৃষ্ঠার ছবিটি পোস্ট করে লেখা হয়, ‘নতুন শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে প্রচুর আলোচনা দরকার। ট্রান্স*ন্ডার হচ্ছে অনেকগুলো পার্টের একটা গুরুত্বপূর্ণ পার্ট। কিন্তু কথা বলা দরকার পুরো সিস্টেম নিয়ে, শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে। আজকে এলাকার এক দোকানে গিয়ে দেখি নতুন পাঠ্যপুস্তক নিয়ে কথা-কাটাকাটি চলছে। দুই চাচা এই শিক্ষাব্যবস্থার পক্ষে, দুইজন বিপক্ষে। এই ছবিটা দেখিয়ে বললাম, এটা আপনার ১০ বছরের বাচ্চাকে শেখানোর ক্ষতিটা বুঝতে পারছেন?...’ পোস্টটিতে অনেক মন্তব্যকারীকে পৃষ্ঠাটি কোন শ্রেণির বইয়ের, তা জানতে চেয়ে কমেন্ট করতে দেখা গেছে।
লুৎফুর রহমান নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ছবিটি তাঁর অ্যাকাউন্টে শেয়ার করে লিখেছেন, ‘এইগুলো কি আমাদের শেখার দরকার আছে? শিক্ষাকে যৌনতায় নিয়ে যাচ্ছেন কেন? ছেলে মেয়ে উভয় যখন ক্লাসে এইগুলো এক সাথে পড়বে, তখন তাদের মাঝে কি বিরাজ করবে??’ লুৎফুর রহমানের এই পোস্টে একজন জানতে চান, বইয়ের পৃষ্ঠা কোন শ্রেণির? উত্তরে তিনি জানান, নবম শ্রেণির বই। (ফেসবুক পোস্টগুলোর ভাষাগত কোনো পরিবর্তন করা হয়নি)
ভাইরাল বইয়ের পৃষ্ঠাটি কি নতুন পাঠ্যক্রমের বা নবম শ্রেণির? যাচাই করে দেখেছে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
ভাইরাল পৃষ্ঠাটির উৎস অনুসন্ধানে ফেসবুকে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে এইচএসসি ব্যাচ ২০২৪ নামের একটি প্রায় দেড় লাখ সদস্যের ফেসবুক গ্রুপে ৮ জানুয়ারি ২টা ২৮ মিনিটে দেওয়া একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টটিতে ভাইরাল পৃষ্ঠাটি যুক্ত করে লেখা হয়েছে, ‘এটাও শিখাইতে হবে? জেমস ডায়েরি নামক একটা বই মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদেরকে দেওয়া হচ্ছে। এদের আসলে উদ্দেশ্য কি? একটা বেহায়া প্রজন্ম তৈরি করা।’
এই সূত্রে পরবর্তী অনুসন্ধানে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কৈশোরকালীন স্বাস্থ্যের ওয়েবসাইটে ‘আমার জেমস ডায়েরি, জেনারেশন ব্রেকথ্রু প্রকল্প’ নামে একটি বই খুঁজে পাওয়া যায়। বইটির ৫৫ পৃষ্ঠায় ‘ঝর্ণার গল্প’ নামক অংশটি খুঁজে পাওয়া যায়।
‘আমার জেমস ডায়েরি’ বইটির পরিচয়ে লেখা আছে, এটি প্রকাশনার দায়িত্বে ছিল প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। সম্পাদনা ও পরিমার্জনা করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ (এনসিটিবি)। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার তৎকালীন পরিচালক অধ্যাপক ড. প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য্য বইটির সার্বিক নির্দেশনায় ছিলেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ ছাপা হয়।
প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ ‘সেক্স এডুকেশন: সাড়ে তিন শ স্কুলের শিক্ষার্থীরা ‘জেনারেশন ব্রেক থ্রু’র ক্লাসরুমে পাঁচ বছরে যা শিখলো’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালে বাংলাদেশের চারটি জেলার ৩৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রথম চালু করা হয়েছিল। এই প্রকল্পের আওতায় শিক্ষার্থীদের জেমস বা ‘জেন্ডার ইকুয়িটি মুভমেন্ট ইন স্কুলস’ নামে একটি কোর্স পড়ানো হয়। কোর্সটি সাজানো হয়েছিল ‘আমার জেমস ডায়েরি’ নামের একটি বই, সাতটি কম্পিউটার গেমস, দুটি বোর্ড গেম, একটি অ্যানিমেশন ভিডিও আর এক শ পর্বের রেডিও ধারাবাহিক দিয়ে।
বিবিসির ওই প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, ২০১৮ শেষ হওয়ার সাথে সঙ্গেই জেনারেশন ব্রেকথ্রু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। যদিও তখন অনেক বিদ্যালয়ে কোর্সটি পড়ানো অব্যাহত ছিল। তবে তখন প্রকল্পটির তৎকালীন পরিচালক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বিবিসিকে জানান, ‘তারা অচিরেই প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু করবেন।’ সেখানে বিদ্যমান সাড়ে ৩০০ বিদ্যালয়ের সঙ্গে আরও ২০০টি বিদ্যালয় যুক্ত করা হবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে জেনারেশন ব্রেকথ্রু প্রকল্পটির প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায় নিয়ে বিস্তারিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
ওয়েবসাইটটিতে বলা হয়, বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের আর্থিক সহায়তায় ইউএনএফপির মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ কর্তৃক জেনারেশন ব্রেকথ্রু প্রকল্পের প্রথম পর্যায় সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। ১০-১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীরা এই প্রকল্পের উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠী। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী ও ঢাকা থেকে মোট ৩৫০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা এবং ১৫০টি ক্লাবের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের মনোভাব পরিবর্তনের জন্য প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।
প্রথম পর্যায়ের সফলতার ধারাবাহিকতায় আরও পাঁচটি জেলা সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, মৌলভীবাজার, পটুয়াখালী ও রাঙামাটি জেলার ২৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জেনারেশন ব্রেকথ্রু প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে এ প্রকল্পের অর্থায়ন করছে কানাডা সরকার। ইউএনএফপিএর কারিগরি সহায়তায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও কনসার্নড উইমেন ফর ফ্যামিলি ডেভেলপমেন্ট (সিডব্লিউএফডি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটির দ্বিতীয় পর্যায়ের পরিচালক ছিলেন অধ্যাপক ড. প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য্য।
প্রকল্পটি বর্তমান অবস্থা ও প্রকল্পের বইটি এখনো বিতরণ করা হয় কি না, সে সম্পর্কে জানতে দ্বিতীয় পর্যায়ের পরিচালক অধ্যাপক ড. প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ। বর্তমানে তিনি মাউশির প্রশিক্ষণ শাখার পরিচালক হিসেবে আছেন। তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটি অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এই প্রকল্প ২০২১-২২ সালেই শেষ হয়ে গেছে। আমি যদ্দুর জানি, এটা শেষ হয়ে গেছে। এরপর আর এটির মেয়াদ বাড়ানো হয়নি।’
মাউশির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার উপপরিচালক মো. মুরশীদ আকতারও আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগকে প্রকল্পটি চালু নেই বলে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘জেনারেশন ব্রেকথ্রু প্রকল্পটি বছরখানেক হবে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে এবং এই প্রকল্প পাইলটিং ছিল, এর অনেক কিছুই বর্তমান পাঠ্যপুস্তকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাই প্রকল্পটির কোর্স ম্যাটারিয়ালেরও আর ভ্যালিডিটি নেই।’
পরে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ওয়েবসাইট থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শ্রেণির স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইগুলো খুঁজে ভাইরাল পৃষ্ঠাটির মতো কোনো পৃষ্ঠা বা ‘ঝর্ণার গল্প’ নামে আলাদা কোনো পাঠ খুঁজে পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাক্রমে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইটি নেই।
সুতরাং উপরিউক্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এটি স্পষ্ট যে, ঝর্ণার গল্প শীর্ষক ভাইরাল পৃষ্ঠাটি নতুন শিক্ষাক্রমের কোনো বইয়ের পৃষ্ঠার নয়। এটি মূলত সরকারের জেনারেশন ব্রেকথ্রু প্রকল্পের কোর্সের বই ‘আমার জেমস ডায়েরি’ নামের একটি বইয়ের পৃষ্ঠা। জেনারেশন ব্রেকথ্রু প্রকল্পটি ২০১৪ সালে প্রথম শুরু হয়। প্রথম পর্যায় শেষে ২০১৯ সালে প্রকল্পটি দ্বিতীয় পর্যায়ে শুরু হলেও বর্তমানে প্রকল্পটি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় গত বুধবার দুপুরে সংঘর্ষে জড়ায় ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান পুলিশ ও সেনাসদস্যরা, দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন তাঁরা। এ সময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেডও ছোড়ে।
৪ ঘণ্টা আগেসরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারকে ঘিরে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নাম বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। আন্দোলনের সময় গত ১৮ জুলাই রাজধানীর উত্তরার আজমপুরে সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল...
১ দিন আগেছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। অভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর তিনদিন পর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয় ৮ আগস্ট। এরপর ১০০ দিন পার করেছে এই সরকার...
১ দিন আগেবর্তমানে দিল্লিতেই অবস্থান করছেন হাসিনা। ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুতির পর তিনি আর প্রকাশ্যে আসেননি। সম্প্রতি ফেসবুকে তাঁর ১৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ভারতে তাঁর সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে।
৩ দিন আগে