‘অতিবৃদ্ধ বয়েসেও এতো লোভ! রা বি শ!’, পোস্ট থেকে কি ছবি সরিয়েছেন আসিফ নজরুল

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১: ০০
Thumbnail image

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত এ সরকারের আইন উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর বেশ কিছু পুরোনো পোস্ট ভাইরাল হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ২২ আগস্টে তাঁর ভেরিফায়েড পেজে দেওয়া একটি পোস্টের স্ক্রিনশট ঘুরে বেড়াচ্ছে ফেসবুকে

‘কাজী মামুন (Kazi Mamun)’ নামের একটি ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গতকাল বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টায় স্ক্রিনশটটি পোস্ট করা হয়। পোস্টটিতে লেখা, ‘অতিবৃদ্ধ বয়েসেও এতো লোভ তার! রা বি শ!’ 

পোস্টটিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছবি রয়েছে। কাজী মামুনের পোস্টটি আজ শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ১ হাজারের বেশি শেয়ার হয়েছে; রিয়েকশন পড়েছে ২৫ হাজার। 

স্ক্রিনশটটির সত্যতা যাচাইয়ে ড. আসিফ নজরুলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে খুঁজে ২০১৯ সালের ২২ আগস্টে একটি মাত্র পোস্ট পাওয়া যায়। সে পোস্টটিতে লেখা, ‘অতিবৃদ্ধ বয়েসেও এতো লোভ তার! রা বি শ!’। তবে পোস্টটিতে কোনো ছবি নেই। 

পোস্টটিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছবি ছিল কি না—সেটি যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে পোস্টটির এডিট হিস্ট্রি চেক করা হয়। এতে দেখা যায়, ২২ আগস্ট দেওয়া একমাত্র পোস্টটি তিনি পাঁচবার এডিট করেছেন। প্রথমে পোস্টটিতে লেখা ছিল, ‘অতিবৃদ্ধ বয়েসেও এতো লোভ তার। তিনি মারা গেলে তার সমাধিতে একটা শব্দ শুধু থাকা উচিত। রা বি শ!’ পরেরবার এডিট করে ‘কোনদিন’ শব্দটি ও বিস্ময়সূচক চিহ্ন যোগ করে লেখা হয়, ‘অতিবৃদ্ধ বয়েসেও এতো লোভ তার! তিনি কোনদিন মারা গেলে তার সমাধিতে একটা শব্দ শুধু থাকা উচিত। রা বি শ!’ 

এভাবে আরও দুবার এডিট করার পর সবশেষ পঞ্চমবার তিনি লেখেন, ‘অতিবৃদ্ধ বয়েসেও এতো লোভ তার! রা বি শ!’ 

এই পাঁচবার সম্পাদনার কোনো অংশেই পোস্টটি থেকে ছবি সরানোর প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সাধারণত কোনো পোস্ট থেকে ছবি বা ভিডিও সরানো হলে এডিট হিস্ট্রি থেকে তা জানার উপায় আছে। এসব ক্ষেত্রে এডিট হিস্ট্রিতে ছবি বা ভিডিও সরানোর বিষয়টি উল্লেখ থাকে এবং সরিয়ে ফেলা ছবি বা ভিডিওর ক্ষেত্রে লেখা থাকে ‘attachment is not displayed’। 

‘অতিবৃদ্ধ বয়েসেও এতো লোভ তার! রা বি শ!’—ড. আসিফ নজরুলের পোস্ট ও এডিট হিস্ট্রি। ছবি: ফেসবুক

আসিফ নজরুলের পোস্টের এডিট হিস্ট্রিতে এমন কোনো বিষয়ের উল্লেখ না থাকায় এটি নিশ্চিত যে এই পোস্টে কোনো ছবি ছিল না। তাঁর পোস্টের স্ক্রিনশট নিয়ে সম্পাদনার মাধ্যমে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছবিটি যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। 

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের ওই পোস্টের লক্ষ্য কে ছিলেন? কাকে তিনি ‘রাবিশ’ বলেছিলেন? তাঁর পোস্টটির কমেন্টবক্স থেকে সেই সময়ের কিছু কমেন্ট থেকে এ বিষয়ে কিছু ধারণা পাওয়া যায়। ‘রাসেল’ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ২০১৯ সালে ওই পোস্টে কমেন্ট করা হয়, ‘আবুল মাল আবদুল মুহিত, এমপি না হয়েও বিনা শুল্কে গাড়ি পাচ্ছেন।’ ‘Танвир Сами’ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে কমেন্ট করা হয়, ‘কিছুদিন আগে খবরে দেখলাম মন্ত্রী না হওয়া সত্ত্বেও “তিনি” শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা নিয়েছেন। ওনার dignity বলতে কি কিছু নাই! সাধারণ মানুষেরা আজ দুপয়সা কামাতে হিমশিম খাচ্ছে আর “তিনি” বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করেন ট্যাক্স না দিয়ে। রাজনীতিটাই আজ “রাবিশ”।’ 

ড. আসিফ নজরুলের পোস্টের কমেন্ট। ছবি: ফেসবুক

এসব কমেন্টের সূত্রে কি–ওয়ার্ড ধরে খুঁজে ২০১৯ সালের ২১ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকে ‘গাড়ি আমদানিতে “এমপি”র সুবিধা পেলেন মুহিত’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ওই সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একটি বিশেষ আদেশে আবুল মাল আবদুল মুহিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়া এবং মন্ত্রী না হওয়া সত্ত্বেও শুল্কমুক্ত সুবিধায় টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার–ভি ৮ মডেলের বিলাসবহুল জিপ গাড়ি আমদানির সুযোগ পান। তাঁর আমদানি করা গাড়ি বিনা শুল্কে ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) থেকে শতভাগ অব্যাহতি দিয়ে এই বিশেষ আদেশ জারি করা হয়। 

ওই আদেশে বলা হয়, আবুল মাল আবদুল মুহিত দশম জাতীয় সংসদের সদস্য ও মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও ১১তম জাতীয় সংসদে পুনর্নির্বাচিত হননি। সে পরিপ্রেক্ষিতে শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা প্রাপ্য না হলেও বাস্তবিক অবস্থার নিরিখে এ ধরনের সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষ অনুমোদন করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনটি শর্তে সমুদয় আমদানি শুল্ক, ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক থেকে অব্যাহতি দিয়ে গাড়িটি খালাস দিতে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনারকে বিশেষ আদেশটি পাঠানো হলো। 

এমপি ও মন্ত্রী না হয়েও আবুল মাল আবদুল মুহিতের এমন সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি সে সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা–সমালোচনার জন্ম দেয়।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারে অর্থমন্ত্রী ছিলেন আবদুল মুহিত। ২০১৪ সালেও শেখ হাসিনার সরকারে একই দায়িত্ব পান তিনি। অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন সময়ে ‘রাবিশ’ শব্দটি বলে আলোচনায় ছিলেন তিনি। আবদুল মুহিত ২০২২ সালের এপ্রিলে মারা গেছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত