শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র জাতিসংঘে জমা না দিলে সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা—দাবিটি ভুয়া

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯: ৩২
আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১: ৪৪

ছাত্র–জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের। দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তাঁর দাবি, সংবিধান অনুযায়ী তিনি এখনো দেশের ‘বৈধ প্রধানমন্ত্রী’। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ফোনালাপে এমন দাবি করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, দেশ ছাড়ার আগে তিনি পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে গণভবন থেকে বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিতে পারেননি। তাঁর এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ফেসবুকে কাতারভিত্তিক সম্প্রচার মাধ্যম আল জাজিরার বরাত দিয়ে বেশ কিছু দাবি ছড়িয়ে পড়েছে। দাবি করা হচ্ছে, আগামী সাত দিনের মধ্যে শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জমা দিতে না পারলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে জাতিসংঘ। গতকাল শুক্রবার (১৩ আগস্ট) দিবাগত রাত থেকে ভাইরাল হওয়া বিভিন্ন পোস্টে এসব দাবি করা হয়। 

পোস্টগুলোতে দাবি করা হয়, রাশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতের রিট এবং ভারত, চীনসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের সমর্থনের ফলে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই পোস্টে আরও দাবি করা হয়, শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র দেখাতে না পারলে জাতিসংঘ থেকে শর্ত আরোপের পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বাতিল বলে গন্য করা হবে। তখন সেনাপ্রধান ক্ষমতা গ্রহন করে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত এনে সাংবিধানিক নিয়মে ক্ষমতা বুঝিয়ে দিবেন। পোস্টগুলোতে আল জাজিরায় সংবাদটি কখন প্রকাশ হয়েছে এ সম্পর্কিত কোনো তথ্য নেই। 

এসব দাবি সংবলিত সবচেয়ে ভাইরাল পোস্টটি পাওয়া যায় ব্যারিস্টার জহিরুল ইসলাম (Barrister Johirul Islam)’ নামের একটি ফেসবুক পেজে। পোস্টটি আজ শনিবার বিকেল চারটা পর্যন্ত সাড়ে ৮০০–এর বেশি শেয়ার হয়েছে, রিয়েকশন পড়েছে প্রায় ৫ হাজার এবং ১ হাজার ২০০-এর মতো কমেন্ট পড়েছে। এসব কমেন্টগুলোর অধিকাংশই পোস্টে উল্লিখিত দাবিগুলোর সমর্থনে করা। 

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে প্রথমেই আল জাজিরায় এমন কোনো সংবাদ প্রকাশ হয়েছে কিনা তা যাচাই করে দেখা হয়। সংবাদমাধ্যমটির বাংলাদেশ সম্পর্কে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর মধ্যে আছে, গতকাল শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের একমাস পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত একটি লাইভ স্ট্রিমিং। এই লাইভ স্ট্রিমিংয়ে আওয়ামী লীগ সরকার পতন পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের তরুণদের প্রত্যাশা এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা হয়। গত মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত হয় ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গুম হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে প্রতিবেদন। এর আগের দিন ৯ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হয় ভারত থেকে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের বক্তব্য নিয়ে। 

যাচাইয়ে সংবাদমাধ্যমটির ওয়েবসাইটে সাত দিনের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র জাতিসংঘে জমা দেওয়া, এতে ব্যর্থ হলে সেনাবাহিনীর ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ অন্যান্য দাবিগুলো নিয়ে কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। 

বাংলাদেশ নিয়ে আল জাজিরার সাম্প্রতিক প্রতিবেদন। ছবি: আল জাজিরার ওয়েবসাইট থেকেঅর্থাৎ ফেসবুকে আল জাজিরার সূত্রে ভাইরাল হওয়া শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র জাতিসংঘে জমা দেওয়া, এতে ব্যর্থ হলে সেনাবাহিনীর ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ অন্যান্য দাবিগুলো ভিত্তিহীন। 

তবে এটিই প্রথম নয়, এর আগে রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমের বরাতে জাতিসংঘে শেখ হাসিনা সরকারের বৈধ পদত্যাগপত্র জমা দিতে না পারায় ড. ইউনূসকে হুমকি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আর এই হুমকিকে সমর্থন করেছে চীন ও ভারত-এমন কিছু দাবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। তবে বিভিন্ন ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠানের এসব দাবিও ভিত্তিহীন হিসেবে প্রমাণিত হয়। এমন দাবি সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হতে দেশের অনলাইন ভেরিফিকেশন ও মিডিয়া গবেষণা প্ল্যাটফর্ম ডিসমিসল্যাব বাংলাদেশে অবস্থিত রাশিয়ার দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে। দূতাবাসের প্রেস সচিব মিস ইয়েভগেনিয়া কোনারেভা এমন দাবিকে ভুয়া খবর বলে জানান। 

রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমের বরাতে ড. ইউনূসকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের হুমকির ভুয়া দাবি। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে প্রসঙ্গত, ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার পর গত ২৭ আগস্ট রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য অভিনন্দন জানান। দূতাবাস থেকে আরও বলা হয়, দুই দেশের বন্ধুত্বের চেতনা থেকেই যৌথভাবে কাজ করবেন তারা। আন্তর্জাতিক পরিসরে ঢাকার প্রতি মস্কোর সমর্থন থাকবে বলেও জানায় রাশিয়া। 

এ ছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পরপরই চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, চীন অন্তর্বর্তী সরকারের গঠনকে স্বাগত জানাচ্ছে। চীন কখনই কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। বাংলাদেশের মানুষ উন্নয়নের যে পথ বেছে নিয়েছে, চীন তাকে শ্রদ্ধা জানায়।   বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে চীন খুবই গুরুত্ব দেয়। দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়।

একই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে তাঁর নতুন দায়িত্ব গ্রহণের জন্য শুভেচ্ছা জানান।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত