রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক: সোশ্যাল মিডিয়া, সংবাদমাধ্যমে ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২৪, ১২: ৪৭
Thumbnail image

সম্প্রতি দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপার, বাংলায় এ সাপের নাম চন্দ্রবোড়া। সোশ্যাল মিডিয়াসহ দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, দেশের নানা প্রান্তে এই সাপের দেখা মিলছে, কোথাও কোথাও রাসেলস ভাইপারের কামড়ে প্রাণহানিও ঘটছে। এসব ঘটনার সঙ্গে ছড়াচ্ছে রাসেলস ভাইপারের কামড়ে প্রাণহানির দাবিতে ছড়াচ্ছে ভুল তথ্যও। কেউ কেউ ভিন্ন জাতের সাপকে রাসেলস ভাইপার বলে চালিয়ে দিচ্ছে। এর মধ্যে আছে সংবাদমাধ্যমও। আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের নজরে এসেছে এমন তিনটি ঘটনা। 

ঘটনা ১: যশোরে বাড়ির উঠানে খেলার সময় রাসেলস ভাইপারের কামড়ে শিশুর মৃত্যু

রাসেলস ভাইপার নিয়ে আতঙ্কের মধ্যেই যশোরের বাড়ির উঠানে খেলার সময় রাসেলস ভাইপারের কামড়ে গতকাল শুক্রবার (২১ জুন) এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে দাবিতে একটি তথ্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ‘সময় নিউজ। ২৪ ঘণ্টাই খবর’ নামের ফেসবুক গ্রুপে রাসেলস ভাইপার সাপ ও একটি বাচ্চার ছবিসহ আজ শনিবার (২২ জুন) এমন একটি পোস্ট করা হয়। আরমান আরিফ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ছবি দুটি পোস্ট করে দাবি করা হয়, এ ঘটনা ঘটেছে যশোরের নোয়াপাড়ায়। একই ঘটনা সিরাজগঞ্জের দাবিতেও ছড়িয়েছে। 

পোস্টটিতে থাকা শিশুর ছবিটি রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক যুগান্তরে ২০২২ সালের ১৩ অক্টোবরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ছবিতে থাকা শিশুটির নাম সাদেক মো. জিহান। প্রতিবেদনে শিশুটির ঠিকানা দেওয়া রয়েছে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের নন্দীরপাড়া। ওই সময় বাড়ির উঠানে খেলার সময় জিহানকে একটি বিষধর সাপ কামড় দেয়। পরে শিশুটিকে কক্সবাজারের চকরিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। 

সাপের কামড়ে শিশু মৃত্যুর ভাইরাল ঘটনাটি ২০২২ সালের কক্সবাজারেরপ্রতিবেদনটিতে শিশু জিহানকে কোন সাপে কামড়িয়েছে—এ জাতীয় কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। অর্থাৎ শিশুর মৃত্যুর ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ে যশোরে রাসেলস ভাইপার কামড়ে নয়। ২০২২ সালের অক্টোবরে অজ্ঞাত সাপের কামড়ে মৃত্যু হয় তার। 

ঘটনা ২: চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, হবিগঞ্জে রাসেলস ভাইপারের দেখা মিলেছে দাবিতে ছড়াল ভিন্ন সাপের ছবি 

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় রাসেলস ভাইপার দেখা গেছে দাবিতে আজ শনিবার (২২ জুন) এমন একটি পোস্ট করা হয় ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নোটিশ বোর্ড (National University Notice board) ’ নামের ফেসবুক গ্রুপে। ‘মিস্টার তানভীর থ্রিডি’ নামের অ্যাকাউন্ট থেকে ছবিটি গ্রুপে পোস্ট করা হয়। এ ছবিসহ একই দাবি বিভিন্ন ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট, ফেসবুক পেজ থেকেও পোস্ট করা হয়েছে।

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় রাসেলস ভাইপার দেখা গেছে দাবিতে ছড়াল জলঢোঁড়া সাপের ছবিযদিও আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের অনুসন্ধানে দেখা যায়, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় রাসেলস ভাইপার দেখা গেছে দাবিতে ভাইরাল ছবিটিতে থাকা সাপটি নির্বিষ জলঢোঁড়া। জলঢোঁড়া ও রাসেলস ভাইপারের মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণে দুই সাপের দৈহিক গঠনে পার্থক্য দেখা যায়। রাসেলস ভাইপার সাপের দৈহিক গঠনে ফ্যাকাশে কমলা–বাদামি রঙের পিঠের ওপর লালচে বাদামি রঙের ডিম্বাকৃতি বা চাকতির মতো দেখতে কালো বর্ণের সীমানাযুক্ত বড় বড় বৃত্ত দেখা যায়। যা মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত তিনটি সারিতে শেকলের মতো চলে গেছে। 

অপর দিকে জলঢোঁড়ার রং খুবই বৈচিত্র্যময়। এতে কুইনকানসিয়াল প্রক্রিয়ায় বিন্যস্ত কালো দাগের পাশাপাশি সাদাটে ছোপ দেখা যেতে পারে, আবার হালকা রঙের দেহের ওপর কালো আড়াআড়ি দাগ দেখা যেতে পারে অথবা কালো আড়াআড়ি দাগের সঙ্গে কালো ছোপ থাকতেও পারে অথবা না-ও থাকতে পারে। ভাইরাল ছবিটিতে থাকা সাপের ছবির সঙ্গে এ গঠনের মিল রয়েছে। 

রাসেল ভাইপার সাপ ছবিবন্য প্রাণী ও সাপ সংরক্ষণে কাজ করা নিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ডিপ ইকোলজি এবং স্নেক রেসকিউ ফাউন্ডেশনের কমপ্লায়েন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কর্মকর্তা সৈয়দা অনন্যা ফারিয়াও ভাইরাল সাপের ছবিটি দেখে নিশ্চিত করেছেন, এটি রাসেলস ভাইপার নয়, জলঢোঁড়া। 

ঘটনা ৩: সংবাদমাধ্যমে রাসেলস ভাইপারের ছবি দাবিতে ভিন্ন সাপের ছবি প্রচার 

জাতীয় পর্যায়ের বাংলা ভাষী দৈনিক বাংলা গতকাল শুক্রবার (২১ জুন) ‘নরসিংদীতে রাসেল ভাইপার সাপ আতঙ্ক’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটিতে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, নরসিংদীর চিনিশপুরে হাঁড়িধোয়া নদীর পাশে কালীমন্দির (জামতলা) এলাকায় একটি রাসেলস ভাইপার সাপ মারা হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে নদীপারের বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছে। প্রতিবেদনটিতে মৃত সাপটির ছবিও যুক্ত করা হয়েছে। 

‘নরসিংদীতে রাসেল ভাইপার সাপ আতঙ্ক’ দাবিতে সংবাদমাধ্যমে ভিন্ন সাপের ছবিতবে সাপের এ ছবির সঙ্গে রাসেলস ভাইপারের ওপরে বর্ণিত দেহের কাঠামোর মিল দেখা যায়নি। পরে ছবিটি সৈয়দা অনন্যা ফারিয়াকে দেখানো হলে তিনি জানান, ছবির সাপটি রাসেলস ভাইপার নয়। এটি হয় দুধরাজ না হয় দাঁড়াশ। দুটি সাপই অবিষধর। দৈনিক বাংলার ছবিটি স্পষ্ট না হওয়ায় বোঝা যাচ্ছে না। তবে এটি নিশ্চিত যে ছবির সাপটি রাসেলস ভাইপার নয়। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত