Ajker Patrika

প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে বিকাশ অ্যাকাউন্টের টাকা

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৩: ১৬
প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে বিকাশ অ্যাকাউন্টের টাকা

রমজান মাসের প্রথম ইফতার।  আয়োজন সীমিত।  করোনার কারণে স্বামীর বেতন অর্ধেক, তার ওপর লকডাউন।  তাই এবার ইফতারে কোনো জাঁকজমক নেই।  মন খারাপ শারমিন আক্তারের (ছদ্মনাম)। হঠাৎ ম্যাসেঞ্জারে একটি ম্যাসেজ দেখে চোখ ছানাবড়া। শারমিনের এক বান্ধবি বার্তা পাঠিয়েছে, বিকাশ অ্যাকাউন্ট থাকলে ৫ হাজার টাকা পাবে সে।  এ জন্য ঢুকতে হবে একটি লিংকে।  রমজান ও লকডাউনকে মাথায় রেখে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর উপহার এটি।!

শারমিন লিংকে ঢোকেন এবং যথারীতি তথ্য দিতে থাকেন। একপর্যায়ে বিকাশের পিন নম্বর চাওয়া হয়। সরল বিশ্বাসে নিজের বিকাশ অ্যাকাউন্টের পিন নম্বর দিয়ে বসেন শারমিন। যা হওয়ার তাই হলো। ৫ হাজার টাকা পাওয়া তো দূরের কথা, যা টাকা ছিল সবই খুইয়ে মাথায় হাত এখন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে ৫ হাজার টাকা উপহারের ম্যাসেজ শেয়ার করছেন অনেকেই।  ফ্যাক্ট চেক বিভাগ অনুসন্ধান করে দেখেছে এই বার্তার সত্যতা।

ফ্যাক্ট চেক:
১।  কোনো গণমাধ্যমে এ–সংক্রান্ত খবর নেই: রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী সাধারণ মানুষকে এমন আর্থিক সাহায্য দিলে তা গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার হতো।  কিন্তু ইন্টারনেটে খুঁজে অনুদানের বিষয়ে কোনো গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়নি।

২। সরকারি ওয়েবসাইটে নোটিশ নেই: রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সরকারি ওয়েবসাইটের নোটিশ অংশে এ–সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

৩। বিকাশের ওয়েবসাইটে কোনো ফর্ম নেই: সরকার বিকাশের মাধ্যমে এমন অনুদান দিলে বিকাশের ওয়েবসাইটে ঢুকে সেটি সম্পর্কে জানা যেত।  কিন্তু বিকাশ ওয়েবসাইটে এ রকম কোনো তথ্য নেই।

অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে এবার বার্তায় সংযুক্ত লিংকে ঢোকা যাক।  লিংকে ঢুকে দেখা গেল—

১। লিংকে ক্লিক করলে যে ওয়েবসাইটে ঢোকে, তা কোনো সরকারি বা বিকাশের ওয়েবসাইট নয়। ইউআরএল বার–এ লেখা থাকে—Get-taka.cyou, যা কোনো নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট ঠিকানা নয়।

1

২। এই ওয়েবসাইটে থাকা বিকাশের লোগোতে ক্লিক করলে ওয়েবসাইটের হোম পেজে যাওয়ার কথা। কিন্তু সেখানে ক্লিক করলে নতুন উইন্ডোতে গিয়ে ওয়েবসাইটটি ত্রুটিযুক্ত বলা হচ্ছে।

2

৩। ওয়েবসাইটের বিস্তারিত জানার জন্য ফ্যাক্টচেক টুল দিয়ে যাচাই করে দেখা যায়, ওয়েবসাইটটির ডোমেইন ত্রুটিযুক্ত।

3

৪। ওই লিংকে একটি ফর্ম আছে, যেখানে নাম, বাবার নাম, বয়স ও জেলা জানতে চাওয়া হচ্ছে।  তথ্য পূরণ করে সাবমিট করলেই আরেকটি নতুন পৃষ্ঠা আসে, যেখানে বিকাশ অ্যাকাউন্টের নম্বর, পিন নম্বর ও বিকাশ ব্যালেন্স জানতে চাওয়া হচ্ছে। বিকাশ অ্যাকাউন্টে কেউ টাকা পাঠাতে হলে পাসওয়ার্ড বলার কোনো প্রয়োজন নেই।  তবে যারা এরই মধ্যে এই তথ্য এখানে দিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের ব্যালেন্স খালি হয়ে গেছে।

4

5

৫। সর্বশেষ ধাপে ওখানে উল্লিখিত কিছু বাক্য কপি করে ১০টি গ্রুপে পোস্ট করতে বলা হয়েছে এবং এটি না করলে টাকা যাবে না বলে সাবধান করা হয়েছে। সরকার অনুদান দিলে, সেখানে এমন শর্ত রাখার কোনো সম্ভাবনা নেই।

6

ফলাফল:

রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ৫ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হচ্ছে—এমন তথ্য ভুয়া। প্রতারণার জন্যই এমন ভুয়া তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা factcheck@ajkerpatrika.com
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত