দুই ডোজ টিকা নিয়েও ৪০ হাজার আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২১, ১৮: ৩৫
আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২: ১৩

‘টিকার দুই ডোজ নিয়ে করোনায় আক্রান্ত ৪০ হাজার’— এ রকম তথ্যসহ একটি পোস্ট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষা বার্তা নামের একটি ফেসবুক পেজে পোস্টটিতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১১ হাজার রিঅ্যাকশন পড়েছে। শেয়ার হয়েছে ২৭১ বার। বাংলাদেশের শিক্ষা বার্তা নামের একটি পেজ থেকেও তথ্যটি বেশ কয়েকজন ফেসবুক ব্যবহারকারী শেয়ার দিয়েছেন। শতাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে একই রকম তথ্য পোস্ট করতে দেখা গেছে।

ফেসবুক পোস্টগুলোতে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মন্তব্য পড়ে সহজেই ধারণা করা যায়, অধিকাংশ মানুষ তথ্যটি বাংলাদেশের বলে ধরে নিয়েছেন। টিকা নেওয়ার পক্ষে বিপক্ষে মন্তব্যও দেখা গেছে। এমনকি এটা দেশে ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নতুন ষড়যন্ত্র’ বলেও মন্তব্য দেখা গেছে।

ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অনেকেই তথ্যটি বাংলাদেশের বলে ধরে নিয়েছেনফ্যাক্টচেক
পূর্ণ ডোজ টিকা নেওয়া সত্ত্বেও ৪০ হাজার মানুষ কোভিড আক্রান্ত হওয়ার তথ্যটি বাংলাদেশের নয়। এটি ভারতের কেরালা রাজ্যের।

দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যটিতে পূর্ণ ডোজ টিকা নেওয়ার পরও ৪০ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে বলে গত ১১ আগস্ট ভারতের একাধিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ইন্ডিয়া টুডেএনডিটিভিতে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সংক্রমিত অনেকেই একবার সংক্রমিত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন এবং টিকা নেওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো করোনা সংক্রমিত হয়েছেন।

দেশটির স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, কেরালায় টিকা নেওয়ার পর যে ৪০ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের বেশির ভাগই রাজ্যের পত্থমথিট্টা জেলার। এই জেলায় টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পর করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ৯৭৪ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৪২ জন।

কেরালায় করোনাভাইরাসের দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পরও ৪০ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেপুনঃ সংক্রমণের ঘটনা বিরল হলেও অসম্ভব নয়। কেরালার কয়েকটি জেলায় এই ভাইরাসে পুনঃ সংক্রমিত হওয়ার বেশ কিছু ঘটনাও ঘটেছে বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের এই রাজ্যে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দৈনিক ২০ হাজারের বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হচ্ছে। গত ১০ আগস্ট কেরালায় এই ভাইরাসে নতুন করে ১৩ হাজার ৪৯ জন আক্রান্ত শনাক্ত এবং ১০৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। পরদিন ১১ আগস্ট এই রাজ্যে করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ২১ হাজার ১১৯ জন এবং মারা গেছেন ১৫২ জন।

ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সূত্র ধরে বাংলাদেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমে খবরটি প্রকাশিত হয়েছে। তবে, বাংলাদেশের বেশ কিছু ফেসবুক আইডি ও পেজে স্থানের নাম বাদ দিয়ে শুধু তথ্য পোস্ট করার কারণে অনেকে বিভ্রান্ত হয়েছেন।

টিকা নেওয়ার পরেও করোনা সংক্রমণ, কী বলছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা?
স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ ডেস্কে
গত ৮ জুলাই প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অনুমোদিত টিকাগুলো মানুষকে গুরুতর সংক্রমণ, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো পরিস্থিতি এবং মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে। টিকা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে শতভাগ কার্যকর নয়। টিকা নেওয়া অনেক মানুষ মনে করেন, টিকা নেওয়ার পর স্বাস্থ্যবিধি না মানলেও চলে।

গত ২ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে টিকার পূর্ণ ডোজ নেওয়া ১৬ কোটি ৪০ লাখের বেশি লোকের মধ্যে মাত্র ৭ হাজার ৫২৫ জন সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং কিছু লোক মারা গেছেন।

সিডিসির সিনিয়র পাবলিক অ্যাফেয়ার্স অফিসার টম স্কিনার ২৩ জুলাই বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘কোভিড টিকা সংক্রমণ রোধে অত্যন্ত কার্যকর এবং গুরুতর অসুস্থতা প্রতিরোধে আরও বেশি কার্যকর। কিন্তু কোনো টিকাই শতভাগ কার্যকর নয়।’

অর্থাৎ, দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পরও কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। তবে এটি গুরুতর অসুস্থ হওয়া কিংবা মৃত্যুঝুঁকি কমায়।

সিদ্ধান্ত
দুই ডোজ টিকা নেওয়া সত্ত্বেও ৪০ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়, ভারতের কেরালা রাজ্যের। বাংলাদেশেও টিকা নেওয়ার পরও কোভিড আক্রান্ত হওয়ার খবর বিচ্ছিন্নভাবে এসেছে। তবে কেরালার মতো ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হওয়ার কোনো সংবাদ বা গবেষণা প্রতিবেদন এখনো প্রকাশিত হয়নি। তা ছাড়া, দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি যেহেতু থেকেই যায় তাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর টিকা নেওয়ার পরও পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত