দাঁতে কি আসলেই পোকা হয়? এ ধারণার উৎপত্তি কীভাবে, বিজ্ঞান কী বলে

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
প্রকাশ : ২৯ জুন ২০২৪, ১৭: ৪৮
আপডেট : ২৯ জুন ২০২৪, ১৮: ০১

ছোট বাচ্চাদের অনেক সময় মিষ্টিজাতীয় খাওয়া থেকে বিরত রাখতে বলা হয়, অতিরিক্ত মিষ্টি খেলে নাকি দাঁতে পোকা হবে! দাঁতের ক্ষয় হওয়ার কারণ হিসেবে দাঁতের পোকাকে দায়ী করা হয়। গ্রাম বা শহরে হাতুড়ে চিকিৎসক, কবিরাজ, বেদেদের দাঁতের পোকার চিকিৎসা করতেও দেখা যায়। এসব ক্ষেত্রে দাঁত থেকে পোকাও বের হতে দেখা যায়! 

আসলেই কি দাঁতে পোকা হয়? আবার পোকা যদি না-ই হয়, তাহলে দাঁতের ক্ষয় হয় কেন? চিকিৎসা বিজ্ঞান কি বলে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। 

দাঁতের পোকার ধারণা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বজুড়েই প্রচলিত। স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ লাইনে ২০২১ সালের পয়লা মে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মানুষের মধ্যে দাঁতে পোকার যে ধারণা আছে, তার জন্ম বহু বছর আগে ৫ হাজার খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে। ওই সময়ের সুমেরীয় সভ্যতার নিদর্শনে দাঁতের ক্ষয়ের কারণ হিসেবে দাঁতের পোকাকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ সালে পাওয়া প্রাচীন চীনা লিপিতেও দাঁতের পোকার উল্লেখ পাওয়া যায়। রোমান সাম্রাজ্য এবং মধ্যযুগের মানুষেরাও দাঁতের পোকাকে বাস্তব মনে করেছে। সাধারণভাবে মনে করা হতো, এই দাঁতের পোকার কারণেই দাঁতের ক্ষয় ঘটতো এবং দাঁত পড়ে যেত। দাঁতের পোকা মাড়ি এবং মুখগহ্বরেও বসবাস করত বলে মনে করা হতো। 

জার্মানির ওয়াজবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর দ্য হিস্ট্রি অব মেডিসিনের গবেষক ডব্লিউ ই গেরাবেকের গবেষণা থেকে জানা যায়, দাঁতের পোকার ধারণাটি শতাব্দী প্রাচীন। বিভিন্ন সভ্যতায় দাঁতের পোকার বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন, ইংল্যান্ডের মানুষেরা মনে করতেন, দাঁতের পোকা দেখতে ঈল মাছের মতো। উত্তর জার্মানিতে মানুষ মনে করত দাঁতের পোকা লাল, নীল ও ধূসর বর্ণের হতে পারে। তবে ১৭ ও ১৮ শতকে ইউরোপে আলোকায়নের যুগে দাঁতে পোকা হওয়ার এসব তত্ত্বকে কুসংস্কার হিসেবে চিহ্নিত করেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। 

দাঁতের পোকার ধারণা যদি কুসংস্কারই হয়, তাহলে দাঁতে ক্ষয় কেন হয়? এই প্রশ্নের উত্তরে হেলথ লাইন জানায়, দাঁতের ক্ষয় ঘটে মূলত দাঁতের প্লাকের কারণে। লালা, ব্যাকটেরিয়া, অ্যাসিড ও খাদ্য কণা নিয়ে গঠিত এই প্লাক দাঁতে লেগে থাকে। এটি দাঁতের ক্ষয় করে ভেতরে গর্ত তৈরি করে, একে ডেন্টাল ক্যারিজ বা ক্যাভিটিও বলা হয়। 

দাঁতের ক্ষয় ঘটে মূলত দাঁতের প্লাকের কারণে। প্লাক লালা, ব্যাকটেরিয়া, অ্যাসিড এবং খাদ্য কণা নিয়ে গঠিত। ছবি: সংগৃহীত

ক্যাভিটি সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক অ্যাকাডেমিক মেডিকেল সেন্টার ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক জানায়, চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাদ্য মুখের ভেতরে একধরনের জীবাণুর সঙ্গে মিশে অ্যাসিড তৈরি করে। এই অ্যাসিড দাঁতের ওপরের শক্ত আবরণ এনামেলকে ক্ষয় করে এবং পরে গর্তের সৃষ্টি করে। এ রোগের নাম ডেন্টাল ক্যারিজ। চিনিমিশ্রিত দুধ বা অন্যান্য মিষ্টিজাতীয় খাদ্য গ্রহণের পর দাঁতের গায়ে এনামেলের ওপর যে আবরণ সৃষ্টি হয়, তার নাম পেলিক্যাল। এই পেলিক্যালকেই বলা হয় ডেন্টাল প্ল্যাক বা দন্তমল। লাখ লাখ জীবাণুযুক্ত দন্তমলই ডেন্টাল ক্যারিজ বা দাঁত ক্ষয় রোগের প্রধান কারণ। 

দাঁতের ক্ষয়রোগের লক্ষণগুলো কী কী
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক দাঁতের ক্ষয়রোগের যেসব লক্ষণ উল্লেখ করেছে, তাঁর মধ্যে আছে—
মুখের দুর্গন্ধ
মাড়ি থেকে রক্তপাত বা মাড়ির রোগের অন্যান্য লক্ষণ
মুখ ফুলে যাওয়া
দাঁত ব্যথা বা মুখে ব্যথা
গরম বা ঠান্ডা খাবার বা পানীয়ের প্রতি দাঁতের সংবেদনশীলতা

দাঁতের পোকার ধারণাটি শতাব্দী প্রাচীন। বিভিন্ন সভ্যতায় দাঁতের পোকার বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়। ছবি: সংগৃহীত

ক্যাভিটি থেকে সুরক্ষায় করণীয়
হেলথ লাইন ক্যাভিটি থেকে সুরক্ষায় কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছে। এর মধ্যে আছে—
দিনে দুবার দাঁত ব্রাশ করা
দাঁত ফ্লসিং করা 
মাউথওয়াশ দিয়ে কুলকুচা করা 
নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার করা এবং চেকআপ করা
চিনিযুক্ত পানীয় সীমিত পর্যায়ে পান করা
নিয়মিত দন্ত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া 

সর্বোপরি, দাঁতের পোকার ধারণা একটি প্রাচীন মিথ। এটা প্রমাণিত যে দাঁতের ক্ষয় এবং ক্যাভিটির পেছনে দাঁতের পোকা কারণ নয়। আসল কারণ হল ব্যাকটেরিয়া ও অ্যাসিড, যা দাঁতে প্লাক তৈরি করে। প্রকৃতপক্ষে দাঁতের পোকার কোনো অস্তিত্বই নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত