ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
‘১৯১১ সালের ১৪ জুন। ইতালির জেনেটি নামক এক কোম্পানি ঘোষণা করল, তারা তাদের নতুন একটি ট্রেন লঞ্চ করতে চলেছে। যেটার প্রথম সফরে যাত্রীদের দেওয়া হবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে যাত্রার সুযোগ। সেকালের হিসেবে ট্রেনটির সাজ সরঞ্জাম, খাবার দাবার ছিল যথেষ্টই লোভনীয়। বেশ আকর্ষণীয় সুযোগই বলতে হয়। ফলে অনেকেই প্রথম সফরে যাওয়ার আর্জি জানালেন। শেষমেশ সফরের দিন দেখা গেল গাড়ির চালক মিলিয়ে মোট ১০৬ জন যাত্রী ট্রেনটিতে যাত্রা করছেন। গ্রীষ্মের সকালে মোট ১০৬ জন যাত্রী নিয়ে সেই জেনেটি ট্রেন তার যাত্রা শুরু করল। সব ঠিকই ছিল। ট্রেন চলছিল নিয়মমাফিক। যাত্রীরা বেজায় খুশি। সকলেই গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত চুটিয়ে উপভোগ করছেন এই ট্রেন জার্নি। এমন সময়ই ট্রেনটি এসে পৌছাল লম্বারডি পাহাড়ের কাছাকাছি। এই পাহাড়ের পেটের ভিতর দিয়ে একটি অন্ধকার টানেল। এই টানেল পার করেই ট্রেনটিকে পৌঁছতে হবে গন্তব্যে। যদিও টানেলে ঢোকার আগে সেই ট্রেনের যাত্রীরা ভাবতেও পারেনি তাদের সঙ্গে কি ঘটতে চলেছে।...’
এমন একটি রহস্যগল্প কয়েক বছর ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমেও প্রচার হয়ে আসছে।
রহস্যময় ট্রেনটি সম্পর্কে দাবি করা হয়, ট্রেনটি যাত্রাপথে ওই টানেলে প্রবেশ করার পর আর বের হয়নি। ট্রেনটির কোনো হদিসও মেলেনি। তবে ওই ট্রেনেরই দুজন যাত্রীর খোঁজ পাওয়া গেছে। তাঁরাই সেই টানেলের ভেতরে তাঁদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন।
কথিত ওই দুই যাত্রীর বরাত দিয়ে দাবি করা হয়, ‘ট্রেনটি টানেলের মাঝামাঝি পৌঁছাতেই অদ্ভুত সাদা কুয়াশা ঘিরে ফেলে। সেই অদ্ভুত কুয়াশায় ট্রেনের যাত্রীদের সবারই দম বন্ধ হয়ে আসে। সবাই ছটফট করতে থাকে। ট্রেন জুড়ে হইচই পড়ে যায়। আতঙ্কে যাত্রীরা সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকে। ঠিক সেই সময়, একদম শেষ মুহূর্তে এই দুজন যাত্রী ট্রেন থেকে ঝাঁপ দেন। এরপর তাঁদের চোখের সামনে ট্রেনটি মিলিয়ে যায়!’
ট্রেনটি সম্পর্কে আরও দাবি করা হয়, একই ট্রেন নাকি টাইম ট্রাভেল করে ১৮৪৫ সালে মেক্সিকোতে গিয়ে পৌঁছেছিল!
আসলেই কি এমন কোনো ঘটনা ঘটেছিল? জেনেটি নামের কোনো রেল কোম্পানি এবং তাদের এমন ট্রেনের আসলেই কোনো অস্তিত্ব ছিল? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
সূত্রের খোঁজে
জেনেটি নামের ট্রেনটি সম্পর্কে অনুসন্ধানে গুগল অ্যাডভান্স সার্চে সম্ভাব্য প্রথম কনটেন্টটি পাওয়া যায় অ্যানসিয়েন্টস বিজি নামের একটি ওয়েবসাইটে। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে এটি প্রকাশিত। বাংলা ভাষায় ট্রেনটি নিয়ে সম্ভাব্য প্রথম প্রতিবেদন পাওয়া যায় ভারতীয় বাংলা ভাষার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার ওয়েবসাইটে, ২০২১ সালে। ভারতীয়সহ ইংরেজি ভাষার বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমেও ট্রেনটি নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়াতেও ওই সময় থেকেই ট্রেনটি সম্পর্কে প্রচার হয়ে আসছে। সবখানেই ঘটনার বর্ণনা প্রায় একই। কোনো প্রতিবেদনেই নির্ভরযোগ্য সূত্রের উল্লেখ নেই।
প্রতিবেদনগুলোতে যেসব ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো যাচাই করে করে দেখা গেছে, একেক প্ল্যাটফর্মে একেক স্থানের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন, কিছু প্রতিবেদনে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে অবস্থিত ফিনিক্স পার্ক টানেল নামে একটি রেলওয়ে টানেলের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। আবার কোথাও ইংল্যান্ডের নর্দাম্পটনশায়ারে অবস্থিত একটি পরিত্যক্ত রেলওয়ে টানেলের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
জেনেটি ট্রেনের অস্তিত্ব অনুসন্ধানে
অনুসন্ধানে জেনেটি ট্যুরিজিমো নামে ইতালির একটি ভ্রমণ সম্পর্কিত বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটের অ্যাবাউট সেকশনের তথ্য অনুযায়ী, ইতালির ভেনেতো অঞ্চলে ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে ভ্রমণ সম্পর্কিত বিভিন্ন সেবা দিয়ে আসছে জেনেটি ট্যুরিজিমো। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৫৭ সালে মারিও জেনেটি নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাসের সঙ্গে রেল সেবা দেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
যেখানে রহস্যময় জেনেটি ট্রেনটির ইতিহাস সম্পর্কে দাবি করা হয়, এটির যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯১১ সালে। অর্থাৎ জেনেটি ট্যুরিজিমোর প্রায় ৫০ বছর আগে।
ইতালিতেই ম্যাসিমো জেনেটি নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যায়। ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠান একটি ইতালীয় কফি শপ চেইন।
ইতালির বাইরে যুক্তরাষ্ট্রে জেনেটি নামে একটি পোশাক ব্র্যান্ড এবং ইংল্যান্ডে নির্মাণ সামগ্রী বিক্রয়কারী আরেকটি প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যায়।
অন্তত ইন্টারনেটে জেনেটি নামে কোনো সরকারি কিংবা বেসরকারি রেলওয়ে কোম্পানির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ইতালিতে ট্রেনসেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে ইন্টারনেটে অনুসন্ধানে জেনেটি নামে কোনো কোম্পানির নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। ১৮৩৯ সালে ইতালিতে প্রথম ট্রেন যাত্রা শুরু হয়। দেশটিতে রেল সেবাদানকারী তিনটি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানা যায়। এর মধ্যে ট্রেনিটালিয়া রেলওয়ে কোম্পানিটি ইতালির সবচেয়ে প্রাচীন ও প্রধান রেল কোম্পানি। এর বাইরে আছে— ইতালো রেলওয়ে কোম্পানি ও ট্রেনর্দ–মিলানো লমবার্ডি রেলওয়ে।
এ ছাড়া ইতালির রেলওয়ের ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৮৮৪ সালে দেশটিতে তিনটি বেসরকারি রেলওয়ে কোম্পানি ছিল। ১৯০৫ সালে এসে সরকারি রেলসেবা প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়। এরপরের ইতিহাস থেকেও জেনেটি নামের কোনো কোম্পানির অস্তিত্ব পাওয়া যায় না।
যেহেতু দাবি অনুযায়ী, জেনেটি ট্রেনটি ১০৬ জন যাত্রীসহ হারিয়ে গেছে, নিঃসন্দেহে এটি অনেক বড় ঘটনা। এই ট্রেনের যাত্রীদের নামের তালিকা, ট্রেনটির দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার সংবাদ নিয়ে বিশ্ব মিডিয়ায় সংবাদ প্রচারিত হওয়ার কথা। কিন্তু বিশ্বের মূল ধারার সংবাদমাধ্যমগুলোতে এই ঘটনা স্মরণে কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায় না।
অথচ দাবিকৃত এই ঘটনার প্রায় এক বছর পরই ১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিল উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যায় টাইটানিক। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ইংল্যান্ডের সাদাম্পটন থেকে ছেড়ে যায় জাহাজটি। এটিই ছিল সেকালের সর্ববৃহৎ জাহাজটির প্রথম সমুদ্রযাত্রা। আটলান্টিকে একটি হিমবাহের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে দেড় হাজারের বেশি আরোহী নিয়ে ডুবে যায় টাইটানিক। ঘটনাটি সে সময়কার সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। এমনকি এখনো আলোচিত হয়, এ নিয়ে হলিউডে ব্যবসাসফল সিনেমাও হয়েছে।
ইউরোপে রেল দুর্ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ খুঁজে বিশ শতকে ইতালিতে বড় দুটি রেল দুর্ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়। যার একটি ঘটেছিল ১৯৬২ সালের ৩১ মে। এই দুর্ঘটনা ঘটেছিল ইতালির ভোগেরা শহরে যাত্রীবাহী ট্রেনে পণ্যবাহী ট্রেনের ধাক্কায়। এতে ৬৪ জন নিহত হন এবং আহত হন ৪০ জন। আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটে এর আগের বছর, ১৯৬১ সালের ২৩ ডিসেম্বর। ইতালির ফিউমারেলাতে ঘটা এই দুর্ঘটনায় একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে নদীতে পড়ে গেলে ৭১ জন নিহত হন এবং ২৮ জন আহত হন।
এ ছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪৪ সালের ২ মার্চ ইতালির সালেরনো শহরের কাছে একটি টানেলে ট্রেনে ৫০০ জনেরও বেশি আরোহীর দম বন্ধ হয়ে মৃত্যুর তথ্যও ইন্টারনেট সূত্রে জানা যায়। এই ঘটনা নিয়ে ট্রেনটির নম্বর উল্লেখ করে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইতিহাস ভিত্তিক ওয়েবসাইট হিস্ট্রি ডটকম। এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ট্রেনটির নম্বর ছিল ৮০১৭।
কিন্তু কথিত জেনেটি কোম্পানির ট্রেনটির গল্পে ঘটনাস্থল, টানেলের নাম বা ট্রেনে নম্বর— এমন কোনো তথ্যই নেই।
ইন্টারনেটে ভাইরাল ঘটনাটি নিয়ে যা জানা যায়
ইন্টারনেটে ভাইরাল জেনেটি ট্রেনের ঘটনাটি নিয়ে বিস্তারিত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান স্নোপস। ২০২২ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ইতালির জেনেটি রেল কোম্পানির ট্রেনটির যাত্রা শুরুর পর কুয়াশাচ্ছন্ন টানেলে হারিয়ে যাওয়া কোনো বাস্তব ঘটনা নয়; এটির মূল একটি কল্পকাহিনী। পরবর্তীতে ইন্টারনেটে নানাভাবে পরিবর্তিত হয়েছে এবং অনেকে বাস্তব দাবিতে প্রচার করেছেন।
স্নোপস জেনেটি ট্রেনের রহস্য উদ্ঘাটনে কাজ করা ই–বরঘি নামের একটি ইতালীয় ভ্রমণ বিষয়ক ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, জেনেটি ট্রেনের গল্পটি ইউক্রেনের লেখক নিকোলে চেরকাশিনের একটি কল্পকাহিনী থেকে অনুপ্রাণিত।
‘১৯১১ সালের ১৪ জুন। ইতালির জেনেটি নামক এক কোম্পানি ঘোষণা করল, তারা তাদের নতুন একটি ট্রেন লঞ্চ করতে চলেছে। যেটার প্রথম সফরে যাত্রীদের দেওয়া হবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে যাত্রার সুযোগ। সেকালের হিসেবে ট্রেনটির সাজ সরঞ্জাম, খাবার দাবার ছিল যথেষ্টই লোভনীয়। বেশ আকর্ষণীয় সুযোগই বলতে হয়। ফলে অনেকেই প্রথম সফরে যাওয়ার আর্জি জানালেন। শেষমেশ সফরের দিন দেখা গেল গাড়ির চালক মিলিয়ে মোট ১০৬ জন যাত্রী ট্রেনটিতে যাত্রা করছেন। গ্রীষ্মের সকালে মোট ১০৬ জন যাত্রী নিয়ে সেই জেনেটি ট্রেন তার যাত্রা শুরু করল। সব ঠিকই ছিল। ট্রেন চলছিল নিয়মমাফিক। যাত্রীরা বেজায় খুশি। সকলেই গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত চুটিয়ে উপভোগ করছেন এই ট্রেন জার্নি। এমন সময়ই ট্রেনটি এসে পৌছাল লম্বারডি পাহাড়ের কাছাকাছি। এই পাহাড়ের পেটের ভিতর দিয়ে একটি অন্ধকার টানেল। এই টানেল পার করেই ট্রেনটিকে পৌঁছতে হবে গন্তব্যে। যদিও টানেলে ঢোকার আগে সেই ট্রেনের যাত্রীরা ভাবতেও পারেনি তাদের সঙ্গে কি ঘটতে চলেছে।...’
এমন একটি রহস্যগল্প কয়েক বছর ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমেও প্রচার হয়ে আসছে।
রহস্যময় ট্রেনটি সম্পর্কে দাবি করা হয়, ট্রেনটি যাত্রাপথে ওই টানেলে প্রবেশ করার পর আর বের হয়নি। ট্রেনটির কোনো হদিসও মেলেনি। তবে ওই ট্রেনেরই দুজন যাত্রীর খোঁজ পাওয়া গেছে। তাঁরাই সেই টানেলের ভেতরে তাঁদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন।
কথিত ওই দুই যাত্রীর বরাত দিয়ে দাবি করা হয়, ‘ট্রেনটি টানেলের মাঝামাঝি পৌঁছাতেই অদ্ভুত সাদা কুয়াশা ঘিরে ফেলে। সেই অদ্ভুত কুয়াশায় ট্রেনের যাত্রীদের সবারই দম বন্ধ হয়ে আসে। সবাই ছটফট করতে থাকে। ট্রেন জুড়ে হইচই পড়ে যায়। আতঙ্কে যাত্রীরা সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকে। ঠিক সেই সময়, একদম শেষ মুহূর্তে এই দুজন যাত্রী ট্রেন থেকে ঝাঁপ দেন। এরপর তাঁদের চোখের সামনে ট্রেনটি মিলিয়ে যায়!’
ট্রেনটি সম্পর্কে আরও দাবি করা হয়, একই ট্রেন নাকি টাইম ট্রাভেল করে ১৮৪৫ সালে মেক্সিকোতে গিয়ে পৌঁছেছিল!
আসলেই কি এমন কোনো ঘটনা ঘটেছিল? জেনেটি নামের কোনো রেল কোম্পানি এবং তাদের এমন ট্রেনের আসলেই কোনো অস্তিত্ব ছিল? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
সূত্রের খোঁজে
জেনেটি নামের ট্রেনটি সম্পর্কে অনুসন্ধানে গুগল অ্যাডভান্স সার্চে সম্ভাব্য প্রথম কনটেন্টটি পাওয়া যায় অ্যানসিয়েন্টস বিজি নামের একটি ওয়েবসাইটে। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে এটি প্রকাশিত। বাংলা ভাষায় ট্রেনটি নিয়ে সম্ভাব্য প্রথম প্রতিবেদন পাওয়া যায় ভারতীয় বাংলা ভাষার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার ওয়েবসাইটে, ২০২১ সালে। ভারতীয়সহ ইংরেজি ভাষার বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমেও ট্রেনটি নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়াতেও ওই সময় থেকেই ট্রেনটি সম্পর্কে প্রচার হয়ে আসছে। সবখানেই ঘটনার বর্ণনা প্রায় একই। কোনো প্রতিবেদনেই নির্ভরযোগ্য সূত্রের উল্লেখ নেই।
প্রতিবেদনগুলোতে যেসব ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো যাচাই করে করে দেখা গেছে, একেক প্ল্যাটফর্মে একেক স্থানের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন, কিছু প্রতিবেদনে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে অবস্থিত ফিনিক্স পার্ক টানেল নামে একটি রেলওয়ে টানেলের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। আবার কোথাও ইংল্যান্ডের নর্দাম্পটনশায়ারে অবস্থিত একটি পরিত্যক্ত রেলওয়ে টানেলের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
জেনেটি ট্রেনের অস্তিত্ব অনুসন্ধানে
অনুসন্ধানে জেনেটি ট্যুরিজিমো নামে ইতালির একটি ভ্রমণ সম্পর্কিত বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটের অ্যাবাউট সেকশনের তথ্য অনুযায়ী, ইতালির ভেনেতো অঞ্চলে ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে ভ্রমণ সম্পর্কিত বিভিন্ন সেবা দিয়ে আসছে জেনেটি ট্যুরিজিমো। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৫৭ সালে মারিও জেনেটি নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাসের সঙ্গে রেল সেবা দেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
যেখানে রহস্যময় জেনেটি ট্রেনটির ইতিহাস সম্পর্কে দাবি করা হয়, এটির যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯১১ সালে। অর্থাৎ জেনেটি ট্যুরিজিমোর প্রায় ৫০ বছর আগে।
ইতালিতেই ম্যাসিমো জেনেটি নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যায়। ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠান একটি ইতালীয় কফি শপ চেইন।
ইতালির বাইরে যুক্তরাষ্ট্রে জেনেটি নামে একটি পোশাক ব্র্যান্ড এবং ইংল্যান্ডে নির্মাণ সামগ্রী বিক্রয়কারী আরেকটি প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যায়।
অন্তত ইন্টারনেটে জেনেটি নামে কোনো সরকারি কিংবা বেসরকারি রেলওয়ে কোম্পানির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ইতালিতে ট্রেনসেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে ইন্টারনেটে অনুসন্ধানে জেনেটি নামে কোনো কোম্পানির নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। ১৮৩৯ সালে ইতালিতে প্রথম ট্রেন যাত্রা শুরু হয়। দেশটিতে রেল সেবাদানকারী তিনটি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানা যায়। এর মধ্যে ট্রেনিটালিয়া রেলওয়ে কোম্পানিটি ইতালির সবচেয়ে প্রাচীন ও প্রধান রেল কোম্পানি। এর বাইরে আছে— ইতালো রেলওয়ে কোম্পানি ও ট্রেনর্দ–মিলানো লমবার্ডি রেলওয়ে।
এ ছাড়া ইতালির রেলওয়ের ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৮৮৪ সালে দেশটিতে তিনটি বেসরকারি রেলওয়ে কোম্পানি ছিল। ১৯০৫ সালে এসে সরকারি রেলসেবা প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়। এরপরের ইতিহাস থেকেও জেনেটি নামের কোনো কোম্পানির অস্তিত্ব পাওয়া যায় না।
যেহেতু দাবি অনুযায়ী, জেনেটি ট্রেনটি ১০৬ জন যাত্রীসহ হারিয়ে গেছে, নিঃসন্দেহে এটি অনেক বড় ঘটনা। এই ট্রেনের যাত্রীদের নামের তালিকা, ট্রেনটির দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার সংবাদ নিয়ে বিশ্ব মিডিয়ায় সংবাদ প্রচারিত হওয়ার কথা। কিন্তু বিশ্বের মূল ধারার সংবাদমাধ্যমগুলোতে এই ঘটনা স্মরণে কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায় না।
অথচ দাবিকৃত এই ঘটনার প্রায় এক বছর পরই ১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিল উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যায় টাইটানিক। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ইংল্যান্ডের সাদাম্পটন থেকে ছেড়ে যায় জাহাজটি। এটিই ছিল সেকালের সর্ববৃহৎ জাহাজটির প্রথম সমুদ্রযাত্রা। আটলান্টিকে একটি হিমবাহের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে দেড় হাজারের বেশি আরোহী নিয়ে ডুবে যায় টাইটানিক। ঘটনাটি সে সময়কার সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। এমনকি এখনো আলোচিত হয়, এ নিয়ে হলিউডে ব্যবসাসফল সিনেমাও হয়েছে।
ইউরোপে রেল দুর্ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ খুঁজে বিশ শতকে ইতালিতে বড় দুটি রেল দুর্ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়। যার একটি ঘটেছিল ১৯৬২ সালের ৩১ মে। এই দুর্ঘটনা ঘটেছিল ইতালির ভোগেরা শহরে যাত্রীবাহী ট্রেনে পণ্যবাহী ট্রেনের ধাক্কায়। এতে ৬৪ জন নিহত হন এবং আহত হন ৪০ জন। আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটে এর আগের বছর, ১৯৬১ সালের ২৩ ডিসেম্বর। ইতালির ফিউমারেলাতে ঘটা এই দুর্ঘটনায় একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে নদীতে পড়ে গেলে ৭১ জন নিহত হন এবং ২৮ জন আহত হন।
এ ছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪৪ সালের ২ মার্চ ইতালির সালেরনো শহরের কাছে একটি টানেলে ট্রেনে ৫০০ জনেরও বেশি আরোহীর দম বন্ধ হয়ে মৃত্যুর তথ্যও ইন্টারনেট সূত্রে জানা যায়। এই ঘটনা নিয়ে ট্রেনটির নম্বর উল্লেখ করে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইতিহাস ভিত্তিক ওয়েবসাইট হিস্ট্রি ডটকম। এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ট্রেনটির নম্বর ছিল ৮০১৭।
কিন্তু কথিত জেনেটি কোম্পানির ট্রেনটির গল্পে ঘটনাস্থল, টানেলের নাম বা ট্রেনে নম্বর— এমন কোনো তথ্যই নেই।
ইন্টারনেটে ভাইরাল ঘটনাটি নিয়ে যা জানা যায়
ইন্টারনেটে ভাইরাল জেনেটি ট্রেনের ঘটনাটি নিয়ে বিস্তারিত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান স্নোপস। ২০২২ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ইতালির জেনেটি রেল কোম্পানির ট্রেনটির যাত্রা শুরুর পর কুয়াশাচ্ছন্ন টানেলে হারিয়ে যাওয়া কোনো বাস্তব ঘটনা নয়; এটির মূল একটি কল্পকাহিনী। পরবর্তীতে ইন্টারনেটে নানাভাবে পরিবর্তিত হয়েছে এবং অনেকে বাস্তব দাবিতে প্রচার করেছেন।
স্নোপস জেনেটি ট্রেনের রহস্য উদ্ঘাটনে কাজ করা ই–বরঘি নামের একটি ইতালীয় ভ্রমণ বিষয়ক ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, জেনেটি ট্রেনের গল্পটি ইউক্রেনের লেখক নিকোলে চেরকাশিনের একটি কল্পকাহিনী থেকে অনুপ্রাণিত।
ফ্যাক্টচেক, সোশ্যাল মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ভাইরাল, ভুয়া পোস্ট, সংঘর্ষ, রাজধানী, সেনাবাহিনী, বিক্ষোভ, রিকশা
১ ঘণ্টা আগেদীপ্তির বক্তব্য দাবিতে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের নাম ও লোগোযুক্ত একটি ফটোকার্ড ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। দীপ্তি চৌধুরীর ছবিযুক্ত ফটোকার্ডটিতে লেখা, ‘আমার নানীর ফুফাতো বোনের স্বামী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।’
৫ ঘণ্টা আগেআজ শনিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি অডিও রেকর্ড প্রচার করা হয়েছে। তাতে হাসিনাকে কথা বলতে শোনা যায়, গুলি খাওয়ার পর আবু সাঈদকে চার–পাঁচ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।
১ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। তিনি জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদকও। সম্প্রতি সারজিস শিশু মডেল অভিনেত্রী সিমরিন লুবাবাকে ফেসবুকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন দাবিতে একটি ফটোকার্ড সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
১ দিন আগে