সিরাজগঞ্জে নিহত হিন্দু পরিবারটি কি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬: ৪২
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭: ৪০

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে গত ২৭ জানুয়ারি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন বিকাশ সরকার, তাঁর স্ত্রী স্বর্ণা সরকার ও তাঁদের দশম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে পারমিতা সরকার তুষি। পরে গত মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) ভোরে তাড়াশ থানা পুলিশ এসে ঘরের তালা ভেঙে বিকাশ, তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে টিকটক, ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ার কিছু বাংলাদেশি অ্যাকাউন্টে নিহত এই তিনজনের ছবি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, ‘একই সনাতনী পরিবারের  স্বামী স্ত্রী ও কন্যা সন্তানকে জবাই করে হত্যা করে সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে যায়।... ওদের টার্গেট প্রতিদিন হিন্দুদের  দেশ ছাড়া করা।’ 

এছাড়া ভারতীয় কিছু এক্স (টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকেও হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারটির ছবি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, ‘পরিবারটিকে মুসলমানরা গলা কেটে হত্যা করেছে। ইসলামিক টেররিস্ট (Izlamic Terrorist) নামের একটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে গত বৃহস্পতিবার (পয়লা ফেব্রুয়ারি) একটি টুইট করে দাবি করা হয়, বাংলাদেশে একটি হিন্দু পরিবারের তিন সদস্যকে মুসলমানরা নিজ বাড়িতে গলা কেটে হত্যা করেছে। এটা কি ইসলাম?’ 

দাবিটি যাচাই করে দেখেছে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ। সিরাজগঞ্জের এই ঘটনা নিয়ে গত বৃহস্পতিবারে (পয়লা ফেব্রুয়ারি) আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়। এর আগেরদিন বুধবার (৩১ জানুয়ারি) আলোচিত ঘটনাটি নিয়ে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল সংবাদ সম্মেলন করেন। 

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল জানান, ব্যবসায়িক কাজে আর্থিক লেনদেনের বিরোধের জেরে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে মা–বাবা–মেয়েকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। প্রথমে মেয়ে, এরপর মা এবং সবার শেষে হত্যা করা হয় বাবাকে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন রাজিব কুমার ভৌমিক (৩৫) নামে এক যুবক। তিনি সম্পর্কে নিহত বিকাশ চন্দ্র সরকারের ভাগনে। তাঁকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। 

পুলিশ সুপার বলেন, গ্রেপ্তারকৃত রাজিব কুমার ভৌমিক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তাঁর বাবা মারা যাওয়ার পর ২০২১ সাল থেকে মামা বিকাশ চন্দ্র সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে খাদ্যশস্য কেনাবেচার ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন তিনি। পরে এই ব্যবসা ঘিরেই তাঁদের মধ্যে বিরোধ ঘটে। একপর্যায়ে গত ২২ জানুয়ারি রাজিব কুমার ভৌমিক তাঁর মামার দাবিকৃত টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে বাসায় আসেন। ওই সময় বাসায় মামার অনুপস্থিতির সুযোগে মামি ও মামাতো বোন তুষিকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজিব কুমার ভৌমিক লোহার রড দিয়ে প্রথমে মাথায় আঘাত করেন এবং মৃত্যু নিশ্চিত করতে পরে একে একে তিনজনের গলা কাটেন। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত লোহার রড ও গলা কাটায় ব্যবহৃত হাসুয়াও উদ্ধার করে পুলিশ। 

এর আগে মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) এই হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনার পর নিহত বিকাশ সরকারের স্ত্রীর বড় ভাই সুকমল চন্দ্র দাস বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। 

মামলা সম্পর্কে তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, মামলার বাদী সুকমলের বাড়ি বগুড়ার নন্দীগ্রামে। মামলার এজাহারে পূর্বশত্রুতার জেরে বোনজামাই, বোন ও ভাগনিকে হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। 

সিরাজগঞ্জে নিহত বিকাশ সরকার সপরিবারে মুসলমানদের হাতে খুন হয়েছেন দাবিতে ভারতীয়দের টুইটসিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপারের সংবাদ সম্মেলন ও সপরিবারে নিহত বিকাশ সরকারের স্ত্রীর বড় ভাই সুকমল চন্দ্র দাসের মামলার এজাহার সূত্রে এটি নিশ্চিত যে, হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বরং ব্যবসায়িক কাজে আর্থিক লেনদেনের বিরোধের জেরে নিজ ভাগনে রাজিব কুমার ভৌমিকের হাতে খুন হন তাঁরা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত