ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
পূর্ব এশিয়ার দ্বীপদেশ জাপানে গতকাল মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অন্তত ১৫৫ বার ভূমিকম্প আঘাত হানে। জাপানের মেটেরোলজিক্যাল এজেন্সি (জেএমএ) জানিয়েছে, এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৬, অপর একটি ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬। এই ভূমিকম্পের পর আর্থকোয়েক নিউজ এভরিডে (Earthquake News Everyday) নামের একটি বাংলাদেশি ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট করে দাবি করা হয়, এই ভূমিকম্প নিয়ে পেজটি গত ২২ ডিসেম্বর সতর্কতা জানিয়ে পূর্বাভাস দিয়েছিল।
পোস্টে ২২ ডিসেম্বরের ওই পোস্টের একটি স্ক্রিনশটও যোগ করে দেওয়া হয়েছে। স্ক্রিনশটটি পড়ে দেখা যায়, পোস্টটিতে আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে জাপান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে এবং ওশেনিয়া অঞ্চলে ৮০টির বেশি মৃদু ভূমিকম্প ও ৫ থেকে ৬টি শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হতে পারে। এবারই প্রথম নয়, গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্ক ও সিরিয়ায় ৭ দশমিক ৮ মাত্রা ও ৭ দশমিক ৫ মাত্রার দুটি বড় ভূমিকম্পের পরেও ইন্টারনেটে আগেই এই ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল এমন দাবি ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। তাতে দাবি করা হয়, নেদারল্যান্ডসের ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ফ্রাঙ্ক হুগারবিটস তুরস্ক ও সিরিয়ার ভূমিকম্পটি নিয়ে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এভাবে কি ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব? একটি ভূমিকম্পের পূর্বাভাসের মানদণ্ড কী কী?
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ প্রতিষ্ঠান ইউএসজিসি জানায়, ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়। ইউএসজিসি বা অন্য কোনো বিজ্ঞানীর পক্ষেই ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা আসলে জানি না ভবিষ্যতে কখন, কীভাবে ভূমিকম্প হবে। ইউএসজিসির বিজ্ঞানীরা হ্যাজার্ড ম্যাপ ব্যবহার করে শুধু নির্দিষ্টসংখ্যক বছরের মধ্যে নির্দিষ্ট এলাকায় বড় ধরনের ভূমিকম্প ঘটতে পারে—এমন সম্ভাব্যতা ঘোষণা করতে পারে।
একটি ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য তিনটি উপাদান থাকা আবশ্যক—
১। নির্দিষ্ট সময় ও তারিখ
২। স্থানের নির্দিষ্ট উল্লেখ এবং
৩। ভূমিকম্পের মাত্রা
প্রতিষ্ঠানটি জানায়, কেউ কেউ ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেয়। কিন্তু তাদের এই পূর্বাভাস কয়েকটি কারণে মিথ্যা হিসেবে প্রমাণিত হয়। কারণ, এগুলো পূর্বাভাসের জন্য প্রয়োজনীয় তিনটি শর্তের কোনোটিই পূরণ করে না। এসব পূর্বাভাসের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি থাকে না। এই পূর্বাভাসগুলো খুব সাধারণ হয়ে থাকে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে ৪ মাত্রার ভূমিকম্প হবে বা অনেকটা এমন যে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলে আজ ২ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হবে। এ ছাড়া ভূমিকম্প পুরোটাই বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া। এর সঙ্গে মেঘ, শারীরিক ব্যথা-যন্ত্রণা বা অলৌকিক কোনো ঘটনার সম্পর্ক নেই।
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ২০২৩ সালে হওয়া ভূমিকম্পের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভূমিকম্পের পূর্বাভাসের দাবি নিয়ে কাজ করে বার্তা সংস্থা এপি। প্রতিষ্ঠানটি ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব কি না, তা যাচাইয়ে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের বক্তব্য নেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের বাফেলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ভূমিকম্প প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ মিশেল ব্রুনো জানান, এখন পর্যন্ত ভূমিকম্পের সুনির্দিষ্ট পূর্বাভাস দিতে পারে, এমন কোনো বিজ্ঞান নেই। বিজ্ঞানীরা নির্দিষ্টভাবে এখনো ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়ার মতো কোনো প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে পারেননি।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির জিওফিজিকসের গবেষক অধ্যাপক এগিল হাকসন একই প্রসঙ্গে এপিকে বলেন, কখন ভূমিকম্প হবে, তার সুনির্দিষ্ট সময় বলা এখন পর্যন্ত সম্ভব নয়। সার্বিক মূল্যায়নে এপি জানায়, বিশেষজ্ঞদের মতে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়। বিজ্ঞানীরা কেবল বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমিকম্প হওয়ার ব্যাপারে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে পারেন। ভূমিকম্প কখন, কোথায় হবে, তার পূর্বাভাস দেওয়ার কোনো উপায় নেই।
বিজ্ঞানবিষয়ক ম্যাগাজিন সায়েন্টিফিক আমেরিকানের এক প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিজ্ঞান এখন পর্যন্ত এমন কোনো পন্থা বের করতে পারেনি, যার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গভাবে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব। একটি পূর্ণাঙ্গ ভূমিকম্পের পূর্বাভাসের জন্য সময়, স্থান ও ভূমিকম্পের মাত্রা সুনির্দিষ্ট করা প্রয়োজন।
উদাহরণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়, কেউ পূর্বাভাস দিল, ২০২৩ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় ভূমিকম্প হলো। এটা সত্য হতে পারে, কিন্তু এটি সঠিক পূর্বাভাস নয়। কারণ, ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রতিদিনই ছোট ছোট ভূমিকম্প হয় অথবা কেউ পূর্বাভাস দিল, উত্তর-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ৮ বা তার চেয়ে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হবে। এটাও সত্য হতে পারে। কিন্তু সময় নির্দিষ্ট না করায় এটিও পূর্ণাঙ্গ পূর্বাভাস নয়। কারণ, পূর্ণাঙ্গ পূর্বাভাসের জন্য এই বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট করা জরুরি।
জাপানের ভূমিকম্প নিয়ে বাংলাদেশি পেজটিতে গত ২২ ডিসেম্বর দেওয়া পোস্টটিও ইউএসজিসির উল্লিখিত তিনটি উপাদানের কোনোটিই অনুসরণ করে না। অর্থাৎ পোস্টটিতে জাপানের ভূমিকম্পের নির্দিষ্ট সময়, তারিখ, স্থান ও ভূমিকম্পের মাত্রা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ ছিল না।
পোস্টটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভূমিকম্প সংঘটনের স্থান কেবল জাপানকেন্দ্রিক ছিল না; সেখানে জাপান ছাড়াও আরও বিস্তৃত অঞ্চলের কথা উল্লেখ করা হয়। সময় এবং ভূমিকম্পের মাত্রার বিষয়েও কোনো নির্দিষ্ট তথ্য ছিল না। ন্যাশনাল আর্থকোয়েক ইনফরমেশন সেন্টারের বরাত দিয়ে ইউএসজিসি জানায়, বিশ্বে দৈনিক প্রায় ৫৫টি এবং বছরে প্রায় ২০ হাজার ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে। তাই কথিত পূর্বাভাস অনুযায়ী, ওই সব অঞ্চলে ভূমিকম্প হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। যদিও নাসার ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, এসব ভূমিকম্পের অধিকাংশই দুর্বল। তবে কখনো কখনো এসব ভূমিকম্পের কোনোটি প্রাণহানি ও সম্পদ ধ্বংসের মতো শক্তিশালী হয়।
ফ্রাঙ্ক হুগারবিটসের তুরস্ক ও সিরিয়ার ভূমিকম্পকেন্দ্রিক পূর্বাভাসটি কেমন ছিল
২০২৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ফ্রাঙ্ক হুগারবিটস তাঁর ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্টে টুইট করে দাবি করেন, খুব শিগগির বা দেরিতে হলেও তুরস্কের দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চল, জর্ডান, সিরিয়া ও লেবাননে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হবে।
পরে ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্ক ও সিরিয়ায় ৭ দশমিক ৮ মাত্রা ও ৭ দশমিক ৫ মাত্রার দুটি বড় ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর তাঁর টুইটটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর এই টুইট ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্ক (আইএফসিএন) স্বীকৃত জার্মানির ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান মিথ ডিটেক্টর। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ফ্রাঙ্ক হুগারবিটসের ওই পূর্বাভাসের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তিনি আগেও বেশ কিছু বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিলেও সেগুলো ঘটেনি। এ ছাড়া তিনি তাঁর টুইটে ভূমিকম্পের কোনো নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করেননি। খুব শিগগির বা দেরিতে যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগই ঘটতে পারে।
ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক জরিপের সিসমিক হ্যাজার্ডস এবং আর্কাইভের সাবেক প্রধান ভূকম্প বিশেষজ্ঞ রজার মুসনের বরাত দিয়ে মিথ ডিটেক্টর জানায়, যে পূর্বাভাসে সঠিক সময় নির্দিষ্ট করা থাকে না, সেটি ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। একটি ভবিষ্যদ্বাণীতে সময়, স্থান এবং ভূমিকম্পের মাত্রা উল্লেখ করা আবশ্যক। ‘শিগগির বা পরে’ নির্দিষ্ট সময়কে ইঙ্গিত করে না। তাই ফ্রাঙ্ক হুগারবিটসের ভূমিকম্পের পূর্বাভাসটির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
ওপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট, ভূমিকম্প এমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেটির সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়। তবে ভূমিকম্প যে কারণে হয়, অর্থাৎ টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষ বা নড়াচড়াকে বর্তমানে বিজ্ঞানীরা জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিমাপ করতে পারেন।
পূর্ব এশিয়ার দ্বীপদেশ জাপানে গতকাল মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অন্তত ১৫৫ বার ভূমিকম্প আঘাত হানে। জাপানের মেটেরোলজিক্যাল এজেন্সি (জেএমএ) জানিয়েছে, এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৬, অপর একটি ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬। এই ভূমিকম্পের পর আর্থকোয়েক নিউজ এভরিডে (Earthquake News Everyday) নামের একটি বাংলাদেশি ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট করে দাবি করা হয়, এই ভূমিকম্প নিয়ে পেজটি গত ২২ ডিসেম্বর সতর্কতা জানিয়ে পূর্বাভাস দিয়েছিল।
পোস্টে ২২ ডিসেম্বরের ওই পোস্টের একটি স্ক্রিনশটও যোগ করে দেওয়া হয়েছে। স্ক্রিনশটটি পড়ে দেখা যায়, পোস্টটিতে আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে জাপান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে এবং ওশেনিয়া অঞ্চলে ৮০টির বেশি মৃদু ভূমিকম্প ও ৫ থেকে ৬টি শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হতে পারে। এবারই প্রথম নয়, গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্ক ও সিরিয়ায় ৭ দশমিক ৮ মাত্রা ও ৭ দশমিক ৫ মাত্রার দুটি বড় ভূমিকম্পের পরেও ইন্টারনেটে আগেই এই ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল এমন দাবি ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। তাতে দাবি করা হয়, নেদারল্যান্ডসের ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ফ্রাঙ্ক হুগারবিটস তুরস্ক ও সিরিয়ার ভূমিকম্পটি নিয়ে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এভাবে কি ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব? একটি ভূমিকম্পের পূর্বাভাসের মানদণ্ড কী কী?
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ প্রতিষ্ঠান ইউএসজিসি জানায়, ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়। ইউএসজিসি বা অন্য কোনো বিজ্ঞানীর পক্ষেই ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা আসলে জানি না ভবিষ্যতে কখন, কীভাবে ভূমিকম্প হবে। ইউএসজিসির বিজ্ঞানীরা হ্যাজার্ড ম্যাপ ব্যবহার করে শুধু নির্দিষ্টসংখ্যক বছরের মধ্যে নির্দিষ্ট এলাকায় বড় ধরনের ভূমিকম্প ঘটতে পারে—এমন সম্ভাব্যতা ঘোষণা করতে পারে।
একটি ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য তিনটি উপাদান থাকা আবশ্যক—
১। নির্দিষ্ট সময় ও তারিখ
২। স্থানের নির্দিষ্ট উল্লেখ এবং
৩। ভূমিকম্পের মাত্রা
প্রতিষ্ঠানটি জানায়, কেউ কেউ ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেয়। কিন্তু তাদের এই পূর্বাভাস কয়েকটি কারণে মিথ্যা হিসেবে প্রমাণিত হয়। কারণ, এগুলো পূর্বাভাসের জন্য প্রয়োজনীয় তিনটি শর্তের কোনোটিই পূরণ করে না। এসব পূর্বাভাসের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি থাকে না। এই পূর্বাভাসগুলো খুব সাধারণ হয়ে থাকে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে ৪ মাত্রার ভূমিকম্প হবে বা অনেকটা এমন যে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলে আজ ২ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হবে। এ ছাড়া ভূমিকম্প পুরোটাই বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া। এর সঙ্গে মেঘ, শারীরিক ব্যথা-যন্ত্রণা বা অলৌকিক কোনো ঘটনার সম্পর্ক নেই।
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ২০২৩ সালে হওয়া ভূমিকম্পের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভূমিকম্পের পূর্বাভাসের দাবি নিয়ে কাজ করে বার্তা সংস্থা এপি। প্রতিষ্ঠানটি ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব কি না, তা যাচাইয়ে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের বক্তব্য নেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের বাফেলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ভূমিকম্প প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ মিশেল ব্রুনো জানান, এখন পর্যন্ত ভূমিকম্পের সুনির্দিষ্ট পূর্বাভাস দিতে পারে, এমন কোনো বিজ্ঞান নেই। বিজ্ঞানীরা নির্দিষ্টভাবে এখনো ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়ার মতো কোনো প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে পারেননি।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির জিওফিজিকসের গবেষক অধ্যাপক এগিল হাকসন একই প্রসঙ্গে এপিকে বলেন, কখন ভূমিকম্প হবে, তার সুনির্দিষ্ট সময় বলা এখন পর্যন্ত সম্ভব নয়। সার্বিক মূল্যায়নে এপি জানায়, বিশেষজ্ঞদের মতে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়। বিজ্ঞানীরা কেবল বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমিকম্প হওয়ার ব্যাপারে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে পারেন। ভূমিকম্প কখন, কোথায় হবে, তার পূর্বাভাস দেওয়ার কোনো উপায় নেই।
বিজ্ঞানবিষয়ক ম্যাগাজিন সায়েন্টিফিক আমেরিকানের এক প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিজ্ঞান এখন পর্যন্ত এমন কোনো পন্থা বের করতে পারেনি, যার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গভাবে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব। একটি পূর্ণাঙ্গ ভূমিকম্পের পূর্বাভাসের জন্য সময়, স্থান ও ভূমিকম্পের মাত্রা সুনির্দিষ্ট করা প্রয়োজন।
উদাহরণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়, কেউ পূর্বাভাস দিল, ২০২৩ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় ভূমিকম্প হলো। এটা সত্য হতে পারে, কিন্তু এটি সঠিক পূর্বাভাস নয়। কারণ, ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রতিদিনই ছোট ছোট ভূমিকম্প হয় অথবা কেউ পূর্বাভাস দিল, উত্তর-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ৮ বা তার চেয়ে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হবে। এটাও সত্য হতে পারে। কিন্তু সময় নির্দিষ্ট না করায় এটিও পূর্ণাঙ্গ পূর্বাভাস নয়। কারণ, পূর্ণাঙ্গ পূর্বাভাসের জন্য এই বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট করা জরুরি।
জাপানের ভূমিকম্প নিয়ে বাংলাদেশি পেজটিতে গত ২২ ডিসেম্বর দেওয়া পোস্টটিও ইউএসজিসির উল্লিখিত তিনটি উপাদানের কোনোটিই অনুসরণ করে না। অর্থাৎ পোস্টটিতে জাপানের ভূমিকম্পের নির্দিষ্ট সময়, তারিখ, স্থান ও ভূমিকম্পের মাত্রা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ ছিল না।
পোস্টটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভূমিকম্প সংঘটনের স্থান কেবল জাপানকেন্দ্রিক ছিল না; সেখানে জাপান ছাড়াও আরও বিস্তৃত অঞ্চলের কথা উল্লেখ করা হয়। সময় এবং ভূমিকম্পের মাত্রার বিষয়েও কোনো নির্দিষ্ট তথ্য ছিল না। ন্যাশনাল আর্থকোয়েক ইনফরমেশন সেন্টারের বরাত দিয়ে ইউএসজিসি জানায়, বিশ্বে দৈনিক প্রায় ৫৫টি এবং বছরে প্রায় ২০ হাজার ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে। তাই কথিত পূর্বাভাস অনুযায়ী, ওই সব অঞ্চলে ভূমিকম্প হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। যদিও নাসার ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, এসব ভূমিকম্পের অধিকাংশই দুর্বল। তবে কখনো কখনো এসব ভূমিকম্পের কোনোটি প্রাণহানি ও সম্পদ ধ্বংসের মতো শক্তিশালী হয়।
ফ্রাঙ্ক হুগারবিটসের তুরস্ক ও সিরিয়ার ভূমিকম্পকেন্দ্রিক পূর্বাভাসটি কেমন ছিল
২০২৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ফ্রাঙ্ক হুগারবিটস তাঁর ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্টে টুইট করে দাবি করেন, খুব শিগগির বা দেরিতে হলেও তুরস্কের দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চল, জর্ডান, সিরিয়া ও লেবাননে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হবে।
পরে ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্ক ও সিরিয়ায় ৭ দশমিক ৮ মাত্রা ও ৭ দশমিক ৫ মাত্রার দুটি বড় ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর তাঁর টুইটটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর এই টুইট ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্ক (আইএফসিএন) স্বীকৃত জার্মানির ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান মিথ ডিটেক্টর। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ফ্রাঙ্ক হুগারবিটসের ওই পূর্বাভাসের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তিনি আগেও বেশ কিছু বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিলেও সেগুলো ঘটেনি। এ ছাড়া তিনি তাঁর টুইটে ভূমিকম্পের কোনো নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করেননি। খুব শিগগির বা দেরিতে যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগই ঘটতে পারে।
ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক জরিপের সিসমিক হ্যাজার্ডস এবং আর্কাইভের সাবেক প্রধান ভূকম্প বিশেষজ্ঞ রজার মুসনের বরাত দিয়ে মিথ ডিটেক্টর জানায়, যে পূর্বাভাসে সঠিক সময় নির্দিষ্ট করা থাকে না, সেটি ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। একটি ভবিষ্যদ্বাণীতে সময়, স্থান এবং ভূমিকম্পের মাত্রা উল্লেখ করা আবশ্যক। ‘শিগগির বা পরে’ নির্দিষ্ট সময়কে ইঙ্গিত করে না। তাই ফ্রাঙ্ক হুগারবিটসের ভূমিকম্পের পূর্বাভাসটির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
ওপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট, ভূমিকম্প এমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেটির সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়। তবে ভূমিকম্প যে কারণে হয়, অর্থাৎ টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষ বা নড়াচড়াকে বর্তমানে বিজ্ঞানীরা জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিমাপ করতে পারেন।
ফ্যাক্টচেক, সোশ্যাল মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ভাইরাল, ভুয়া পোস্ট, সংঘর্ষ, রাজধানী, সেনাবাহিনী, বিক্ষোভ, রিকশা
১১ ঘণ্টা আগেদীপ্তির বক্তব্য দাবিতে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের নাম ও লোগোযুক্ত একটি ফটোকার্ড ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। দীপ্তি চৌধুরীর ছবিযুক্ত ফটোকার্ডটিতে লেখা, ‘আমার নানীর ফুফাতো বোনের স্বামী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।’
১৫ ঘণ্টা আগেআজ শনিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি অডিও রেকর্ড প্রচার করা হয়েছে। তাতে হাসিনাকে কথা বলতে শোনা যায়, গুলি খাওয়ার পর আবু সাঈদকে চার–পাঁচ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।
২ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। তিনি জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদকও। সম্প্রতি সারজিস শিশু মডেল অভিনেত্রী সিমরিন লুবাবাকে ফেসবুকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন দাবিতে একটি ফটোকার্ড সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
২ দিন আগে