নতুন কারিকুলামের গ্রেডিং সিস্টেমের নামে ভাইরাল ছবিটি সঠিক নয় 

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ০১ জুন ২০২৪, ১৮: ১৮
Thumbnail image

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নতুন শিক্ষাক্রমে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার গ্রেডিং পদ্ধতির একটি ছবি ব্যাপকভাবে প্রচার করা হচ্ছে। ‘তানভীর স্যার’ নামের ৮ লাখ ৭৬ হাজার ফলোয়ারের ফেসবুক পেজ থেকে গতকাল শুক্রবার (৩১ মে) ছবিটি পোস্ট দিয়ে লেখা হয় ‘নতুন কারিকুলাম আলোকে গ্রেডিং সিস্টেম!’।  পোস্টটিতে আজ শনিবার দুপুর ২টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি রিয়েকশন পড়েছে। শেয়ার হয়েছে তিন শতাধিক। এছাড়াও ফেসবুকের অনেক ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট, পেজ থেকেও গ্রেডিং সিস্টেমের কথিত ছবিটি ভাইরাল হয়েছে।আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গ্রেডিং পদ্ধতির কথিত ছবিটি ভিত্তিহীন। 

আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) তৈরি ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২ এর মূল্যায়ন কৌশল ও বাস্তবায়ন নির্দেশনা’ সংক্রান্ত সবশেষ প্রতিবেদনের আলোকে দাবিটি যাচাই করে দেখেছে। প্রতিবেদনটি গত ২৮ মে কারিকুলাম ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিভিশন কোর কমিটিতে পাস হয়েছে। এখন তা এনসিটিবির বোর্ড সভা হয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) সভায় চূড়ান্ত হবে। গত বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। আর চলতি বছর বাস্তবায়ন করা হয় দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে। এরপর ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে এই শিক্ষাক্রম চালু হবে। 

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের সাতটি স্কেলে মূল্যায়ন করা হবে। প্রতিটি বিষয়ে নির্ধারিত পারদর্শিতার (নৈপুণ্য) ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর অর্জন সাতটি স্কেল বা সূচকে মূল্যায়নের পর রিপোর্ট কার্ডে প্রকাশ করা হবে। সাতটি স্কেলের জন্য থাকবে সাতটি ছক। এতে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক– সবাই শিক্ষার্থীর অবস্থান বুঝতে পারবেন। 

সাতটি স্কেল হলো—অনন্য, অর্জনমুখী, অগ্রগামী, সক্রিয়, অনুসন্ধানী, বিকাশমান ও প্রারম্ভিক। এর মধ্যে সর্বোচ্চ স্কেল ‘অনন্য’। ‘অনন্য’ বলতে বোঝানো হবে, শিক্ষার্থী সব বিষয়ে পারদর্শিতার চূড়ান্ত স্তর অর্জন করেছে। আর ‘প্রারম্ভিক’ স্তর হলো সবচেয়ে নিচের স্তর।পারদর্শিতার সনদে ৭ স্তর বিশিষ্ট মূল্যায়ন স্কেলে শিক্ষার্থীর অর্জন প্রকাশ করা হবে এভাবেপারদর্শিতার ক্ষেত্রে এই স্তর কীভাবে নির্ধারণ করা হবে? এ সংক্রান্ত আলোচনায় এনসিটিবির প্রতিবেদনটিতে উপায় বলে দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রতিটি পারদর্শিতার ক্ষেত্রের জন্য সংশ্লিষ্ট পারদর্শিতার নির্দেশকগুলোতে শিক্ষার্থীর অর্জিত পর্যায়গুলো সমন্বয় করে ওই ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর অবস্থান নিরূপণ করা হবে। কোনো নির্দিষ্ট পারদর্শিতার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর অবস্থান মূলত নির্ভর করবে পারদর্শিতার নির্দেশকগুলোতে তার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন পর্যায়ের অর্জিত পারদর্শিতার নির্দেশকের সংখ্যার পার্থক্যের ওপর। এই হিসাবের জন্য একটি সূত্রও রয়েছে এনসিটিবির তৈরি সবশেষ প্রতিবেদনে। 

সূত্র অনুযায়ী, পারদর্শিতার স্তর নির্ণায়ক মান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর অর্জিত সর্বোচ্চ পর্যায়ের পারদর্শিতার নির্দেশক সংখ্যা থেকে অর্জিত সর্বনিম্ন পর্যায়ের পারদর্শিতার নির্দেশকের সংখ্যা বিয়োগ দিতে হবে। এরপর প্রাপ্ত বিয়োগফলকে মোট পারদর্শিতার নির্দেশকের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে শতকরায় হিসাব করতে হবে।নতুন শিক্ষাক্রমে পারদর্শিতার স্তর নির্ধারণের উপায়উদাহরণ হিসেবে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট বিষয়ের একটি পারদর্শিতার ক্ষেত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পারদর্শিতার নির্দেশক রয়েছে ৫টি। একজন শিক্ষার্থী এই ৫ পারদর্শিতার নির্দেশকের মধ্যে ৩ টিতে সর্বোচ্চ পর্যায় পেয়েছে। বাকি ২ টির একটিতে সর্বনিম্ন এবং আরেকটিতে মধ্যবর্তী পর্যায় পেয়েছে। এখানে, মোট পারদর্শিতার নির্দেশক সংখ্যা ৫টি। অর্জিত সর্বোচ্চ পর্যায়ের পারদর্শিতার নির্দেশকের সংখ্যা ৩টি, অর্জিত সর্বনিম্ন পর্যায়ের পারদর্শিতার নির্দেশকের সংখ্যা ১টি। তাহলে তার পারদর্শিতার স্তর নির্ণায়ক মান হবে—
৩-১ / ৫ * ১০০% = ৪০% 

অর্থাৎ, এই মানের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হবে শিক্ষার্থীর অবস্থান পারদর্শিতার কোনো স্তরে। পারদর্শিতার স্তর নির্ণায়ক মান ধনাত্মক, ঋণাত্মক বা শূন্য হতে পারে। 

পারদর্শিতার স্তর নির্ণায়ক মান ধনাত্মক হবে, যদি শিক্ষার্থীর অর্জিত সর্বোচ্চ পর্যায়ের পারদর্শিতার নির্দেশক সংখ্যা সর্বনিম্ন পর্যায়ের পারদর্শিতার নির্দেশক সংখ্যার চেয়ে বেশি হয়। পারদর্শিতার স্তর নির্ণায়ক মান ঋণাত্মক হবে, যদি শিক্ষার্থীর অর্জিত সর্বোচ্চ পর্যায়ের পারদর্শিতার নির্দেশক সংখ্যা সর্বনিম্ন পর্যায়ের পারদর্শিতার নির্দেশক সংখ্যার চেয়ে কম হয়। পারদর্শিতার স্তর নির্ণায়ক মান শূন্য হবে যদি শিক্ষার্থীর অর্জিত সর্বোচ্চ পর্যায়ের পারদর্শিতার নির্দেশক সংখ্যা এবং সর্বনিম্ন পর্যায়ের পারদর্শিতার নির্দেশক সংখ্যা সমান হয়। অথবা যদি শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট সবগুলো পারদর্শিতার নির্দেশকে মধ্যবর্তী পর্যায় পেয়ে থাকে।নতুন শিক্ষাক্রমে পারদর্শিতার সবগুলো স্তর নির্ধারণের শর্ত। ছবি: এনসিটিবির জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২ এর মূল্যায়ন কৌশল ও বাস্তবায়ন নির্দেশনাপ্রতিবেদনটিতে পারদর্শিতার সবগুলো স্তর নির্ধারণের শর্তগুলোও দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই শর্তানুযায়ী, 
অনন্য (Upgrading) পারদর্শিতার স্তর নির্ণায়ক মান= ১০০ % 
অর্জনমুখী (Achieving) পারদর্শিতার স্তর নির্ণায়ক মান≥ ৫০ % 
অগ্রগামী (Advancing) পারদর্শিতার স্তর নির্ণায়ক মান≥ ২৫ % 
সক্রিয় (Activating) পারদর্শিতার স্তর নির্ণায়ক মান≥ ০ %
অনুসন্ধানী (Exploring) পারদর্শিতার স্তর নির্ণায়ক মান≥-২৫ % 
বিকাশমান (Developing) পারদর্শিতার স্তর নির্ণায়ক মান≥-৫০ % 
প্রারম্ভিক (Elementary) পারদর্শিতার স্তর নির্ণায়ক মান≥-১০০ % 

প্রতিবেদনটির কোথাও নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে কথিত ভাইরাল গ্রেডিং সিস্টেমের মতো কোনো তথ্য নেই। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, কথিত ভাইরাল গ্রেডিং সিস্টেমটি ভিত্তিহীন। 

বিষয়টি সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হতে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ছবি পাঠায় এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামানের কাছে। ছবি দেখে তিনি জানান, ছবিটির বিষয়বস্তু সঠিক নয়। 

এ বিষয়ে তিনি বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে নম্বরভিত্তিক মূল্যায়নের সুযোগ নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত