ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ–৪ (মাধবপুর–চুনারুঘাট) আসনের সংসদ সদস্য হয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচিত ব্যক্তিত্ব ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ে প্রায় ১ লাখ ভোটের ব্যবধানে তিনি হারান সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীকে।
অবশ্য সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনের আগে থেকেই ব্যাপক জনপ্রিয় তিনি। তাঁর এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে ইউটিউবে চলছে ভিউ ব্যবসা। আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে নিয়ে ইউটিউবে ক্লিকবেইট থাম্বনেইল, এডিটেড ভিডিও, পুরোনো ভিডিও ব্যবহার করে ভিউ ব্যবসা করছে—এমন অন্তত তিনটি চ্যানেল খুঁজে পেয়েছে।
চ্যানেল তিনটি হলো—তাজ টিভি, এআর রাকিব ব্রো ও নিউজ ৭৫। চ্যানেল তিনটির আজ বুধবার (১২ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা যথাক্রমে ১২ লাখ ৩০ হাজার, ১ লাখ ৭০ হাজার ও ৫৯ হাজার। এর মধ্যে প্রথম দুটি চ্যানেল ভেরিফায়েড। চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত এসব ভিডিওর মধ্যে লক্ষাধিক ভিউ হওয়া কিছু ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
কী আছে এসব ভিডিওতে?
‘তাজ টিভি’ ইউটিউব চ্যানেলটিতে ব্যারিস্টার সুমনকে নিয়ে গত বৃহস্পতিবার (৬ জুন) ‘ব্যারিস্টার সুমন এর উপর কি ধরনের জুলুম চলছে || সব কিছু প্রকাশ করলোন সুমন’ শিরোনামে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ১০ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের ভিডিওটি শুরু হয়েছে বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম ডিবিসি নিউজের একটি সংবাদ প্রতিবেদনের ইন্ট্রো দিয়ে। যেখানে ডিবিসি নিউজের উপস্থাপিকা বলেন, ‘মারামারিতে জড়িয়েছেন সরকার ও বিরোধী দলীয় কয়েকজন এমপি।’ এরপরেই উত্তেজিত জনতার একটি ফুটেজ দেখানো হয়। যেখানে উত্তেজিত জনতা একটি গাড়ি ধাওয়া করছে।
এই সময় নেপথ্য কণ্ঠে একজন বলেন, ‘সংসদ শেষে বাড়ি ফেরার পথে ব্যারিস্টার সুমনের গাড়ি আটকে দিয়ে হামলা করা হয়েছে।’ এরপরই বেসরকারি টিভি চ্যানেল এনটিভির ফুটেজে ব্যারিস্টার সুমনকে সাক্ষাৎকার দিতে দেখা যায়। পরে ইউটিউব ভিডিওটির উপস্থাপক দাবি করেন, ‘যত দিন যাচ্ছে ব্যারিস্টার সুমনের ওপর হামলা, আক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে। বিরোধী দল নয়, তাঁর নিজের দলের লোকেরাই সুমনের বিরুদ্ধে লেগেছে। তিনি নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছেন এবং সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে মুখ খুলেছেন।’
ভিডিওটি আজ বুধবার (১২ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পর্যন্ত ২ লাখ ৭২ হাজার বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে উপস্থাপিত এসব দাবি ও ফুটেজের সত্যতা কী? অনুসন্ধানে দেখা যায়, তাজ টিভির ভাইরাল এ ভিডিও তিনটি ভিন্ন ঘটনার অংশ বিশেষ যুক্ত করে তৈরি।
এর মধ্যে ডিবিসি নিউজের সংবাদ প্রতিবেদনের ইন্ট্রোটি গত ২৯ জানুয়ারির মালদ্বীপে মন্ত্রিসভার পরিধি বাড়ানোর ইস্যুতে সংসদে মারামারি নিয়ে। উত্তেজিত জনতার গাড়ি ভাঙচুরের ভিডিওটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ব্যারাকপুরে কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া কৌস্তভ বাগচীর গাড়ি ভাঙচুরের। সবশেষ এনটিভির ফুটেজটি ২০২৩ সালের ২১ জুলাই দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারের।
অর্থাৎ, তিনটি ভিন্ন সময় ও ঘটনার ফুটেজ যুক্ত করে ভাইরাল ভিডিওটি তৈরি করেছে তাজ টিভি। শুধু এ ভিডিওটিই নয়, চ্যানেলটিতে প্রচারিত একাধিক ভিডিও বিশ্লেষণ করে একই প্রক্রিয়া দেখা গেছে।
যেমন, গত ২ জুন চ্যানেলটিতে ‘ব্যারিস্টার সুমনের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার হতে যাচ্ছে ব্যারিস্টার সুমন’ শিরোনামে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ৮ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডের ভিডিওটি বুধবার (১২ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৫৬ লাখের বেশি দেখা হয়েছে। ভিডিওটি শুরু হয়েছে বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম যমুনা টিভি ও একাত্তর টিভির একাধিক ফুটেজ দিয়ে।
এসব ফুটেজে সম্প্রচার মাধ্যম দুটির সংবাদ উপস্থাপকদের বলতে শোনা যায় যে, ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সায়েদুল হক সুমনকে সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে দেখা যায়। এরপরই তাজ টিভির ভিডিওটির উপস্থাপক বলতে শুরু করেন, ‘ব্যারিস্টার সুমন সংসদে দুর্নীতিবাজদের নিয়ে কথা বলায় তাঁর বিরুদ্ধে এসব মামলা হয়েছে। এসব কারণে ব্যারিস্টার সুমন সংসদে ৫ বছর টিকতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে!’
ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এতে ব্যারিস্টার সুমনের বিরুদ্ধে মামলার যেসব প্রতিবেদন ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো ২০১৯ সালের ঘটনার। ওই বছর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কটূক্তি করার অভিযোগে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আস–শামস জগলুল হোসেনের আদালতে মামলাটির আবেদন করা হয়।
এ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদমাধ্যমে প্রতিক্রিয়াও দেন ব্যারিস্টার সুমন। সে সময়কার বিভিন্ন প্রতিবেদনের ফুটেজের সঙ্গে সংসদে ব্যারিস্টার সুমনের বক্তব্য দেওয়ার ভিডিও যুক্ত করে ভাইরাল ভিডিওটি তৈরি করে দাবি করা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যারিস্টার সুমনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং তিনি গ্রেপ্তার হতে যাচ্ছেন।
সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সুমনকে নিয়ে ইউটিউবে একইভাবে কনটেন্ট তৈরি করা আরেকটি চ্যানেল ‘এআর রাকিব ব্রো (AR Rakib Bro)’। চ্যানেলটির সাবস্ক্রাইবার ১ লাখ ৭০ হাজার। গত ৬ জুন চ্যানেলটিতে ‘ফাটাকেষ্ট ব্যারিস্টার সুমনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বৈঠক | মুখোমুখি হলে শেখ হাসিনার।’ শিরোনামে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ভিডিওটি আজ বুধবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৪ লাখ ৯১ হাজার বার দেখা হয়েছে।
ভিডিওটিতে উপস্থাপক দাবি করেছেন, ব্যারিস্টার সুমনের এমপি পদ নিয়ে তাঁকে ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যারিস্টার সুমনের একটি গোপন বৈঠক হয়েছে। বৈঠকটি ডাকা হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ব্যারিস্টার সুমনের নামে বিচার দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে।
যদিও অনুসন্ধানে দেখা যায়, কথিত বৈঠকের এ ভিডিও তৈরিতেও ভিন্ন ভিন্ন সময়ের একাধিক টিভির ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যারিস্টার সুমনের ফুটেজটি নেওয়া হয়েছে ২০১৯ সালে বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম মাছরাঙা টিভির মর্নিং শো ‘মাছরাঙা রাঙা সকাল’ অনুষ্ঠানের ভিডিও থেকে এবং প্রধানমন্ত্রীর ফুটেজটি নেওয়া হয়েছে ২০২৩ সালে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘অ্যাকসিলারেটিং ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ টুওয়ার্ডস স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি উচ্চপর্যায়ের অনুষ্ঠানের ভিডিও থেকে।
বর্তমানে দেশে আলোচিত ইস্যু সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ। বেনজির আহমেদের সঙ্গে ব্যারিস্টার সুমনকে জড়িয়ে গত ২ জুন ‘ব্যারিস্টার সুমন সব গোপন তথ্য ফাঁস করল | বেনজিরকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে’ শিরোনামে একটি ভিডিও পোস্ট করে নিউজ ৭৫। প্রায় সাড়ে ২৯ মিনিটের ভিডিওটি আজ বুধবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ বার দেখা হয়েছে।
ভিডিওটিতে ব্যবহার করা ব্যারিস্টার সুমনের বক্তব্যটি যাচাই করে দেখা যায়, তাঁর বক্তব্যের ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে। এই ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করেন আবদুস সোবহান গোলাপ। তাঁর ওই বক্তব্যে সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদের কোনো প্রসঙ্গ নেই।
মিথ্যাকে পুঁজি করে ব্যবসা
সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সুমনকে নিয়ে ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারকারী চ্যানেল তিনটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, তিনটি চ্যানেলই মনিটাইজড। অর্থাৎ চ্যানেল তিনটির ভিডিওটিতে গুগল অ্যাডসেন্সের বিজ্ঞাপন দেখানো হয়।
ভিডিওগুলোর ব্যাপকতা
আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ইউটিউব চ্যানেলগুলোর এসব ভিডিও, ক্লিকবেইট থাম্বনেইলগুলো কেবল ইউটিউবেই সীমাবদ্ধ নেই।
ভিডিওগুলো ছড়িয়ে পড়ছে অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতেও। যেমন, টিকটকে ‘এমডি শরিফুল ৮৭’ নামের একটি অ্যাকাউন্টে গত ৬ দিন আগে ‘গ্রেপ্তার ব্যারিস্টার সুমন, প্রধানমন্ত্রীর কঠিন নির্দেশ’ এমন একটি ইউটিউব থাম্বনেইল ভিডিও আকারে পোস্ট করা হয়। পোস্টটিতে লেখা হয়, ‘এনাকে কে কে জেল থেকে মুক্তি পেতে দেখতে চান? ভালো মানুষ বাংলাদেশে থাকাটা হবে না।’ ভিডিওটি আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১১ লাখ বার দেখা হয়েছে। টিকটকে ভিডিওটি শেয়ার হয়েছে প্রায় হাজার বার।
আবার দুই দিন আগে তাজ টিভির দুটি ইউটিউব থাম্বনেইল কোলাজের মাধ্যমে ‘ব্যারিস্টার সুমনের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার হতে যাচ্ছে ব্যারিস্টার সুমন’ এবং ‘এইমাত্র সংসদে সুমনকে গণধোলাই, প্রধানমন্ত্রীর সামনেই একি ঘটল’ শিরোনামে টিকটকে ভিডিও পোস্ট করা হয়। ভিডিওটি আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১ লাখ ১২ হাজার বার দেখা হয়েছে। ফেসবুকেও এসব ভিডিও ছড়াতে দেখেছে ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান বুম বাংলাদেশ।
কী বলছেন ব্যারিস্টার সুমন
ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের নামে প্রচারিত এসব ভিডিও সম্পর্কে তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি সতর্কবার্তা পাওয়া যায়। গত ২৮ এপ্রিল একটি ভিডিও বার্তায় ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘ইউটিউবে আমার নামে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে নিয়ে এডিট করা ভিডিও থেকে সাবধান থাকবেন। আমার বিভিন্ন ভিডিও, বিভিন্ন কথা এডিট করে, কেটে অমুক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বললেন ব্যারিস্টার সুমন, অমুক মন্ত্রীকে ধোলাই দিলেন ব্যারিস্টার সুমন— এমন প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আপনারা এগুলো যাচাই–বাছাই করবেন। এগুলোর অনেকগুলাই ভুয়া। একবারেই সত্য না। আমার নাম বললে ভিউজ হয় বেশি। ভিউজ বাড়ানোর জন্য কাটছাঁট করতেছে।’
ভিডিও বার্তাটিতে তিনি এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ–৪ (মাধবপুর–চুনারুঘাট) আসনের সংসদ সদস্য হয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচিত ব্যক্তিত্ব ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ে প্রায় ১ লাখ ভোটের ব্যবধানে তিনি হারান সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীকে।
অবশ্য সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনের আগে থেকেই ব্যাপক জনপ্রিয় তিনি। তাঁর এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে ইউটিউবে চলছে ভিউ ব্যবসা। আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে নিয়ে ইউটিউবে ক্লিকবেইট থাম্বনেইল, এডিটেড ভিডিও, পুরোনো ভিডিও ব্যবহার করে ভিউ ব্যবসা করছে—এমন অন্তত তিনটি চ্যানেল খুঁজে পেয়েছে।
চ্যানেল তিনটি হলো—তাজ টিভি, এআর রাকিব ব্রো ও নিউজ ৭৫। চ্যানেল তিনটির আজ বুধবার (১২ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা যথাক্রমে ১২ লাখ ৩০ হাজার, ১ লাখ ৭০ হাজার ও ৫৯ হাজার। এর মধ্যে প্রথম দুটি চ্যানেল ভেরিফায়েড। চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত এসব ভিডিওর মধ্যে লক্ষাধিক ভিউ হওয়া কিছু ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
কী আছে এসব ভিডিওতে?
‘তাজ টিভি’ ইউটিউব চ্যানেলটিতে ব্যারিস্টার সুমনকে নিয়ে গত বৃহস্পতিবার (৬ জুন) ‘ব্যারিস্টার সুমন এর উপর কি ধরনের জুলুম চলছে || সব কিছু প্রকাশ করলোন সুমন’ শিরোনামে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ১০ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের ভিডিওটি শুরু হয়েছে বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম ডিবিসি নিউজের একটি সংবাদ প্রতিবেদনের ইন্ট্রো দিয়ে। যেখানে ডিবিসি নিউজের উপস্থাপিকা বলেন, ‘মারামারিতে জড়িয়েছেন সরকার ও বিরোধী দলীয় কয়েকজন এমপি।’ এরপরেই উত্তেজিত জনতার একটি ফুটেজ দেখানো হয়। যেখানে উত্তেজিত জনতা একটি গাড়ি ধাওয়া করছে।
এই সময় নেপথ্য কণ্ঠে একজন বলেন, ‘সংসদ শেষে বাড়ি ফেরার পথে ব্যারিস্টার সুমনের গাড়ি আটকে দিয়ে হামলা করা হয়েছে।’ এরপরই বেসরকারি টিভি চ্যানেল এনটিভির ফুটেজে ব্যারিস্টার সুমনকে সাক্ষাৎকার দিতে দেখা যায়। পরে ইউটিউব ভিডিওটির উপস্থাপক দাবি করেন, ‘যত দিন যাচ্ছে ব্যারিস্টার সুমনের ওপর হামলা, আক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে। বিরোধী দল নয়, তাঁর নিজের দলের লোকেরাই সুমনের বিরুদ্ধে লেগেছে। তিনি নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছেন এবং সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে মুখ খুলেছেন।’
ভিডিওটি আজ বুধবার (১২ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পর্যন্ত ২ লাখ ৭২ হাজার বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে উপস্থাপিত এসব দাবি ও ফুটেজের সত্যতা কী? অনুসন্ধানে দেখা যায়, তাজ টিভির ভাইরাল এ ভিডিও তিনটি ভিন্ন ঘটনার অংশ বিশেষ যুক্ত করে তৈরি।
এর মধ্যে ডিবিসি নিউজের সংবাদ প্রতিবেদনের ইন্ট্রোটি গত ২৯ জানুয়ারির মালদ্বীপে মন্ত্রিসভার পরিধি বাড়ানোর ইস্যুতে সংসদে মারামারি নিয়ে। উত্তেজিত জনতার গাড়ি ভাঙচুরের ভিডিওটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ব্যারাকপুরে কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া কৌস্তভ বাগচীর গাড়ি ভাঙচুরের। সবশেষ এনটিভির ফুটেজটি ২০২৩ সালের ২১ জুলাই দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারের।
অর্থাৎ, তিনটি ভিন্ন সময় ও ঘটনার ফুটেজ যুক্ত করে ভাইরাল ভিডিওটি তৈরি করেছে তাজ টিভি। শুধু এ ভিডিওটিই নয়, চ্যানেলটিতে প্রচারিত একাধিক ভিডিও বিশ্লেষণ করে একই প্রক্রিয়া দেখা গেছে।
যেমন, গত ২ জুন চ্যানেলটিতে ‘ব্যারিস্টার সুমনের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার হতে যাচ্ছে ব্যারিস্টার সুমন’ শিরোনামে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ৮ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডের ভিডিওটি বুধবার (১২ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৫৬ লাখের বেশি দেখা হয়েছে। ভিডিওটি শুরু হয়েছে বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম যমুনা টিভি ও একাত্তর টিভির একাধিক ফুটেজ দিয়ে।
এসব ফুটেজে সম্প্রচার মাধ্যম দুটির সংবাদ উপস্থাপকদের বলতে শোনা যায় যে, ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সায়েদুল হক সুমনকে সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে দেখা যায়। এরপরই তাজ টিভির ভিডিওটির উপস্থাপক বলতে শুরু করেন, ‘ব্যারিস্টার সুমন সংসদে দুর্নীতিবাজদের নিয়ে কথা বলায় তাঁর বিরুদ্ধে এসব মামলা হয়েছে। এসব কারণে ব্যারিস্টার সুমন সংসদে ৫ বছর টিকতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে!’
ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এতে ব্যারিস্টার সুমনের বিরুদ্ধে মামলার যেসব প্রতিবেদন ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো ২০১৯ সালের ঘটনার। ওই বছর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কটূক্তি করার অভিযোগে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আস–শামস জগলুল হোসেনের আদালতে মামলাটির আবেদন করা হয়।
এ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদমাধ্যমে প্রতিক্রিয়াও দেন ব্যারিস্টার সুমন। সে সময়কার বিভিন্ন প্রতিবেদনের ফুটেজের সঙ্গে সংসদে ব্যারিস্টার সুমনের বক্তব্য দেওয়ার ভিডিও যুক্ত করে ভাইরাল ভিডিওটি তৈরি করে দাবি করা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যারিস্টার সুমনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং তিনি গ্রেপ্তার হতে যাচ্ছেন।
সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সুমনকে নিয়ে ইউটিউবে একইভাবে কনটেন্ট তৈরি করা আরেকটি চ্যানেল ‘এআর রাকিব ব্রো (AR Rakib Bro)’। চ্যানেলটির সাবস্ক্রাইবার ১ লাখ ৭০ হাজার। গত ৬ জুন চ্যানেলটিতে ‘ফাটাকেষ্ট ব্যারিস্টার সুমনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বৈঠক | মুখোমুখি হলে শেখ হাসিনার।’ শিরোনামে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ভিডিওটি আজ বুধবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৪ লাখ ৯১ হাজার বার দেখা হয়েছে।
ভিডিওটিতে উপস্থাপক দাবি করেছেন, ব্যারিস্টার সুমনের এমপি পদ নিয়ে তাঁকে ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যারিস্টার সুমনের একটি গোপন বৈঠক হয়েছে। বৈঠকটি ডাকা হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ব্যারিস্টার সুমনের নামে বিচার দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে।
যদিও অনুসন্ধানে দেখা যায়, কথিত বৈঠকের এ ভিডিও তৈরিতেও ভিন্ন ভিন্ন সময়ের একাধিক টিভির ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যারিস্টার সুমনের ফুটেজটি নেওয়া হয়েছে ২০১৯ সালে বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম মাছরাঙা টিভির মর্নিং শো ‘মাছরাঙা রাঙা সকাল’ অনুষ্ঠানের ভিডিও থেকে এবং প্রধানমন্ত্রীর ফুটেজটি নেওয়া হয়েছে ২০২৩ সালে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘অ্যাকসিলারেটিং ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ টুওয়ার্ডস স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি উচ্চপর্যায়ের অনুষ্ঠানের ভিডিও থেকে।
বর্তমানে দেশে আলোচিত ইস্যু সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ। বেনজির আহমেদের সঙ্গে ব্যারিস্টার সুমনকে জড়িয়ে গত ২ জুন ‘ব্যারিস্টার সুমন সব গোপন তথ্য ফাঁস করল | বেনজিরকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে’ শিরোনামে একটি ভিডিও পোস্ট করে নিউজ ৭৫। প্রায় সাড়ে ২৯ মিনিটের ভিডিওটি আজ বুধবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ বার দেখা হয়েছে।
ভিডিওটিতে ব্যবহার করা ব্যারিস্টার সুমনের বক্তব্যটি যাচাই করে দেখা যায়, তাঁর বক্তব্যের ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে। এই ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করেন আবদুস সোবহান গোলাপ। তাঁর ওই বক্তব্যে সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদের কোনো প্রসঙ্গ নেই।
মিথ্যাকে পুঁজি করে ব্যবসা
সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সুমনকে নিয়ে ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারকারী চ্যানেল তিনটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, তিনটি চ্যানেলই মনিটাইজড। অর্থাৎ চ্যানেল তিনটির ভিডিওটিতে গুগল অ্যাডসেন্সের বিজ্ঞাপন দেখানো হয়।
ভিডিওগুলোর ব্যাপকতা
আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ইউটিউব চ্যানেলগুলোর এসব ভিডিও, ক্লিকবেইট থাম্বনেইলগুলো কেবল ইউটিউবেই সীমাবদ্ধ নেই।
ভিডিওগুলো ছড়িয়ে পড়ছে অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতেও। যেমন, টিকটকে ‘এমডি শরিফুল ৮৭’ নামের একটি অ্যাকাউন্টে গত ৬ দিন আগে ‘গ্রেপ্তার ব্যারিস্টার সুমন, প্রধানমন্ত্রীর কঠিন নির্দেশ’ এমন একটি ইউটিউব থাম্বনেইল ভিডিও আকারে পোস্ট করা হয়। পোস্টটিতে লেখা হয়, ‘এনাকে কে কে জেল থেকে মুক্তি পেতে দেখতে চান? ভালো মানুষ বাংলাদেশে থাকাটা হবে না।’ ভিডিওটি আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১১ লাখ বার দেখা হয়েছে। টিকটকে ভিডিওটি শেয়ার হয়েছে প্রায় হাজার বার।
আবার দুই দিন আগে তাজ টিভির দুটি ইউটিউব থাম্বনেইল কোলাজের মাধ্যমে ‘ব্যারিস্টার সুমনের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার হতে যাচ্ছে ব্যারিস্টার সুমন’ এবং ‘এইমাত্র সংসদে সুমনকে গণধোলাই, প্রধানমন্ত্রীর সামনেই একি ঘটল’ শিরোনামে টিকটকে ভিডিও পোস্ট করা হয়। ভিডিওটি আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১ লাখ ১২ হাজার বার দেখা হয়েছে। ফেসবুকেও এসব ভিডিও ছড়াতে দেখেছে ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান বুম বাংলাদেশ।
কী বলছেন ব্যারিস্টার সুমন
ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের নামে প্রচারিত এসব ভিডিও সম্পর্কে তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি সতর্কবার্তা পাওয়া যায়। গত ২৮ এপ্রিল একটি ভিডিও বার্তায় ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘ইউটিউবে আমার নামে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে নিয়ে এডিট করা ভিডিও থেকে সাবধান থাকবেন। আমার বিভিন্ন ভিডিও, বিভিন্ন কথা এডিট করে, কেটে অমুক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বললেন ব্যারিস্টার সুমন, অমুক মন্ত্রীকে ধোলাই দিলেন ব্যারিস্টার সুমন— এমন প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আপনারা এগুলো যাচাই–বাছাই করবেন। এগুলোর অনেকগুলাই ভুয়া। একবারেই সত্য না। আমার নাম বললে ভিউজ হয় বেশি। ভিউজ বাড়ানোর জন্য কাটছাঁট করতেছে।’
ভিডিও বার্তাটিতে তিনি এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি অডিও রেকর্ড প্রচার করা হয়েছে। তাতে হাসিনাকে কথা বলতে শোনা যায়, গুলি খাওয়ার পর আবু সাঈদকে চার–পাঁচ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।
৩ ঘণ্টা আগেবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। তিনি জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদকও। সম্প্রতি সারজিস শিশু মডেল অভিনেত্রী সিমরিন লুবাবাকে ফেসবুকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন দাবিতে একটি ফটোকার্ড সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
৮ ঘণ্টা আগেপ্রযুক্তি জগতে নানা উদ্ভাবন দিয়ে সব সময়ই আলোচনায় থাকেন স্পেসএক্স, টেসলাসহ মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্সের (সাবেক টুইটার) মালিক ইলন মাস্ক। সম্প্রতি তিনি আলোচনায় এসেছেন এক্সে ডিজনির এলজিবিটিকিউ সম্পর্কিত কনটেন্ট ব্লক করে দিয়েছেন এমন দাবিতে। গত মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) দিবাগত রাতে ফেসবুকে ‘মহিদুল আলম...
১ দিন আগেরাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় গত বুধবার দুপুরে সংঘর্ষে জড়ায় ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান পুলিশ ও সেনাসদস্যরা, দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন তাঁরা। এ সময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেডও ছোড়ে।
১ দিন আগে