ইয়েমেনের আল হুতাইব গ্রামে আসলেই কি কখনো বৃষ্টি হয়নি

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১৬: ০০
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৮: ২৬

ইয়েমেনের আল হুতাইব (NO RAIN VILLAGE) হলো পৃথিবীর একমাত্র গ্রাম যেখানে কোনো দিন বৃষ্টি হয়নি। তবু এখানে সাধারণ গ্রামের মতো ঘর-বাড়ি, স্কুল-মাদ্রাসা, গাছ-পালা সবকিছু আছে। আর বৃষ্টি না হওয়ার কারণ হলো- মাটি থেকে প্রায় ৩২০০ ফিট উঁচুতে গ্রামটির অবস্থান। কয়েক বছর ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমেও এমন তথ্য প্রচার হয়ে আসছে। কিন্তু আসলেই কি আল হুতাইবে কখনও বৃষ্টি হয় না? চলুন জেনে নেওয়া যাক। 

তথ্যটির সত্যতা অনুসন্ধানে পৃথিবীর যেসব স্থানে বৃষ্টিপাত খুবই কম হয় এমন জায়গা সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। 

বিজ্ঞান বিষয়ক লাইভ সায়েন্সে পৃথিবীর এমন ১০টি জায়গার একটি তালিকা খুঁজে পাওয়া যায়। এতে দক্ষিণ আমেরিকা, উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের একাধিক দেশ ও অ্যান্টার্কটিকার নাম খুঁজে পাওয়া গেলেও ইয়েমেনের আল হুতাইবের নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। লাইভ সায়েন্সের প্রতিবেদনটিতে এই স্থানগুলো সম্পর্কে বলা হয়, এসব স্থানে বৃষ্টি খুব কমই পড়ে এবং কিছু ক্ষেত্রে লাখ লাখ বছরেও বৃষ্টিপাত হয়নি। এই শুষ্ক জলবায়ুতে কোনো কিছুর পক্ষে বেড়ে ওঠা কঠিন। কারণ, ক্রমাগত বাষ্পীভবনের ফলে গাছপালা বা মানুষের জন্য পানি মাটিতে আটকে থাকে না। 

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন ফোর্বসের প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, পৃথিবীর শুষ্কতম অঞ্চলগুলোর একটি উত্তর আফ্রিকা। এটি বিশ্বের বৃহত্তম উষ্ণ মরুভূমি সাহারার আবাসস্থল। এই অঞ্চল অত্যন্ত শুষ্ক, এখানে কিছু জায়গায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বৃষ্টিপাত না হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। অপরদিকে ইয়েমেন হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ। 

শিক্ষামূলক স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল ডিসকোভারির ওয়েবসাইটে পৃথিবীর শুষ্কতম অঞ্চল নিয়ে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এতে পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে আতাকামা মরুভূমিকে। এই মরুভূমি চিলির আরিকাতে অবস্থিত। আতাকামা মরুভূমিতেও বৃষ্টি হয়। যদিও স্থানটিতে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাত্র ০.০৩ ইঞ্চি। 

আন্তদেশীয় মহাকাশ সংস্থা ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির ওয়েবসাইটেও আতাকামা মরুভূমিকে পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিজ্ঞান বিষয়ক বেশ কিছু ওয়েবসাইট ঘুরেও পৃথিবীর শুষ্কতম বা কম বৃষ্টি প্রবণ অঞ্চলের যেসব তালিকা পাওয়া যায়, সেখানেও আল হুতাইবের নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

আল হুতাইবে বৃষ্টির রেকর্ড 

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনে ২০১৫ সালের জুনে প্রকাশিত একটি ভ্রমণ বিষয়ক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। মেহলুম এস সাদ্রিওয়ালা নামে একজন ফটোসাংবাদিকের লেখা এই ভ্রমণ বিষয়ক প্রতিবেদন থেকে আল হুতাইবে বৃষ্টি পড়ার তথ্য সম্পর্কে জানা যায়। মেহলুম এস সাদ্রিওয়ালা হুতাইব সম্পর্কে লেখেন, অঞ্চলটি পর্বত, দরগা ও মসজিদে ঘেরা স্বর্গীয় ছবির মতো একটি স্বপ্নিল স্থান। প্রতিদিনই বৃষ্টি হতো। 

আবহাওয়ার পূর্বাভাস বিষয়ক বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘুরেও আল হুতাইবে বৃষ্টির পূর্বাভাস সম্পর্কে তথ্য জানা যায়। যেমন, যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া প্রতিষ্ঠান অ্যাকিউওয়েদারের ওয়েবসাইট থেকে দেখা যায়, চলতি মাসেই ১৮ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত টানা বৃষ্টি হওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। 

আল হুতাইবে জানুয়ারিতে বৃষ্টির পূর্বাভাস। ছবি: অ্যাকিউওয়েদারআবহাওয়া বিষয়ক আরেকটি ওয়েবসাইট ওয়েদার অ্যাটলাসের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, জানুয়ারিতে হুতাইবে সাড়ে ছয় দিনের মতো বৃষ্টি হয়। পুরো জানুয়ারিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৯ মিলিমিটার। হুতাইবে সারা বছর ১৫১.৯ দিন বৃষ্টিপাত হয় এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫২৬ মিলিমিটার পর্যন্ত হয়। 

অর্থাৎ ইয়েমেনের আল হুতাইবে কখনোই বৃষ্টিপাত না হওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়। বরং নির্দিষ্ট কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষার সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত