ক্যামব্রিজে জায়েদ খানের পেছনের গাছটি নিউটনের সেই আপেল গাছ নয়

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
Thumbnail image

যুক্তরাজ্য সফরে আছেন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের আলোচিত অভিনেতা জায়েদ খান। দেশটির বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। সেসব স্থানের ছবি তুলে শেয়ার দিচ্ছেন ফেসবুক পেজে। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজে অবস্থিত একটি আপেল গাছকে পেছনে রেখে ছবি তুলে গত শনিবার (১ জুন) পোস্ট করেন তিনি। পোস্টটির ক্যাপশনে তিনি লেখেন, পেছনের গাছটি নিউটনের সেই বিখ্যাত আপেল গাছ!

জায়েদ খানের এই পোস্টে আজ সোমবার (৩ জুন) বেলা ২টা পর্যন্ত ২০ হাজারের বেশি রিয়েকশন পড়েছে, শেয়ার হয়েছে প্রায় ২০০। আবার জায়েদ খানের পোস্টটি শেয়ার করে ইকরাম মাহমুদ নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে লেখা হয়েছে, ‘নিউটনের আপেল গাছটির অস্তিত্ব নেই। পরবর্তীতে ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে গাছটির প্রজাতি রক্ষা করা হয়। ক্লোন করা গাছটিও ২০২২ সালে ঝরে উপড়ে যায়।’

জায়েদ খানের পোস্টটির সত্যতা যাচাই করে দেখেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। 

কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানে অ্যাটলাস অবসকিউরা নামের একটি ওয়েবসাইটে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজে অবস্থিত আপেল গাছটি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। ওয়েবসাইটটিতে গাছটির একাধিক ছবি রয়েছে। গাছটি সম্পর্কে অ্যাটলাস অবসকিউরা জানায়, আইজ্যাক নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব আবিষ্কারের পেছনে যে আপেল গাছটির গল্প প্রচলিত রয়েছে সেটি ট্রিনিটি কলেজে অবস্থিত গাছটি নয়। মূল গাছ থেকে কলমের মাধ্যমে এটি তৈরি। মূল গাছটি ইংল্যান্ডের লিঙ্কনশায়ারের উলসথর্প মানরে রয়েছে। এখানেই নিউটন তাঁর জীবনের প্রথমদিকের সময়গুলো কাটিয়েছিলেন।

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজে অবস্থিত নিউটনের আপেল গাছটি মূল গাছ থেকে কলমের মাধ্যমে তৈরি। ছবি: কেমব্রিজশায়ার লাইভক্যামব্রিজ ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম কেমব্রিজশায়ার লাইভে ২০২৩ সালের ৫ মার্চ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে গাছটি সম্পর্কে বলা হয়, আইজ্যাক নিউটনের সঙ্গে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্কের বিষয়টি স্মরণ করাতে এবং তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৯৫৪ সালে ট্রিনিটি কলেজের প্রবেশমুখে গাছটি রোপণ করে। এটি মূল গাছ থেকে তৈরি করা কলম। মূল গাছটি লিঙ্কনশায়ারের উলসথর্প মানরে রয়েছে।

‘ক্রিয়েটিং মাই ক্যামব্রিজ’ নামের আরেকটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনেও গাছটি সম্পর্কে একই তথ্য পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে গাছটি সম্পর্কে আরও বলা হয়, গাছটির আপেল সরাসরি খাওয়ার উপযোগী নয়। এগুলো সবুজ আপেল, রান্না করে খাওয়া যায়।

অ্যাটলাস অবসকিউরার আরেকটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আইজ্যাক নিউটনের বিখ্যাত আপেল গাছটির কলম চারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে। এর মধ্যে একটি ছিল যুক্তরাজ্যের মেরিল্যান্ড রাজ্যের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজিতে। এটি ২০২১ সালে মরে যায়। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার পার্কেস অবজারভেটরি সেন্টার, যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) এবং ভারতের পুনের ইন্টার–ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিকস (আইইউসিএএ) ক্যাম্পাসে গাছটির কলম চারা রোপণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে অধিকাংশই মরে গেছে।

২০২২ সালে প্রকাশিত ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানে গাছটির আরেকটি কলম চারা ছিল। তবে ওই বছরের এক ঝড়ে গাছটি ভেঙে যায়।

নিউটনের বিখ্যাত আপেল গাছটি এখনো টিকে আছে ইংল্যান্ডের লিঙ্কনশায়ারের উলসথর্প মানরে। ছবি: যুক্তরাজ্য ন্যাশনাল ট্রাস্টআরও খুঁজে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান স্নোপসের ওয়েবসাইটে আইজ্যাক নিউটনের আপেল গাছটি সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়া যায়। ২০২১ সালের ১৯ আগস্টে স্নোপসের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে গাছটির একটি ছবিও পাওয়া যায়। এই গাছের সঙ্গে চিত্রনায়ক জায়েদ খানের পোস্ট করা গাছের ছবিটির মিল পাওয়া যায়নি। স্নোপস গাছটি সম্পর্কে জানায়, নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব আবিষ্কারের সঙ্গে যে আপেল গাছের গল্প জড়িয়ে আছে, সেটি ইংল্যান্ডের উলসথর্প ম্যানরের বাগানে এখনো জীবিত।

যুক্তরাজ্যের ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণ ও প্রচারে নিযুক্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ট্রাস্টের ওয়েবসাইটেও গাছটির সচিত্র বর্ণনা পাওয়া যায়। নির্ধারিত মূল্যে টিকিট কেটে পর্যটকেরা উলসথর্প ম্যানরের সেই বাগান ঘুরে দেখতে পারেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত