ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
স্ট্রোক সাধারণত বাথরুমেই বেশি হয় কেন—এমন একটি প্রশ্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কয়েক বছর ধরে প্রচারিত হচ্ছে। সম্প্রতি সেটাই আবার ভাইরাল হয়েছে। এর উত্তরে দাবি করা হচ্ছে, স্ট্রোক সাধারণত বাথরুমেই বেশি হয়ে থাকে। কারণ, গোসলের সময় আমরা প্রথমেই মাথা এবং চুল ভেজাই, যা একদম উচিত নয়। এটি ভুল পদ্ধতি। এভাবে প্রথমেই মাথায় পানি দিলে রক্ত দ্রুত মাথায় উঠে যায় এবং কৈশিকনালি (ক্যাপিলারি) ও ধমনি একসঙ্গে ছিঁড়ে যেতে পারে। এর ফলে স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় এবং মানুষ মাটিতে পড়ে যায়।
বিশ্বের একাধিক গবেষণা প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে পোস্টগুলোতে আরও দাবি করা হয়, গোসলের সময় স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বা পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। চিকিৎসকদের মতে, গোসল করার সময় কিছু নিয়ম মেনে গোসল করা উচিত। সঠিক নিয়ম মেনে গোসল না করলে হতে পারে মৃত্যুও। গোসল করার সময় প্রথমেই মাথা ও চুল ভেজানো একদম উচিত নয়। কারণ, মানুষের শরীরে রক্তসঞ্চালন একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় হয়ে থাকে। শরীরের তাপমাত্রা বাইরের তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগে। চিকিৎসকদের মতে, মাথায় প্রথমেই পানি দিলে সঙ্গে সঙ্গে রক্তসঞ্চালনের গতি বহু গুণ বেড়ে যায়। সে সময় বেড়ে যেতে পারে স্ট্রোকের ঝুঁকিও। তা ছাড়া মাত্রাতিরিক্ত রক্তচাপের ফলে মস্তিষ্কের ধমনি ছিঁড়ে যেতে পারে।
গোসলের সঠিক নিয়ম দাবি করে পোস্টগুলোতে বলা হয়, প্রথমে পায়ের পাতা ভেজাতে হবে। এরপর আস্তে আস্তে ওপর দিকে কাঁধ পর্যন্ত ভেজাতে হবে। তারপর মুখে পানি দিতে হবে। সবার শেষে মাথায় পানি দেওয়া উচিত। এই পদ্ধতি যাদের উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং মাইগ্রেন আছে, তাদের অবশ্যই পালন করা উচিত। গোসলের ক্রমের সঙ্গে স্ট্রোকের সম্পর্ক নিয়ে প্রচারিত এ পোস্টগুলো কেবল বাংলাতেই নয়, বিভিন্ন সময়ে ইংরেজিতেও ইন্টারনেটে প্রচারিত হয়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টগুলোর দাবির সত্যতা যাচাইয়ের আগে জেনে নেওয়া যাক স্ট্রোক কী? কেন হয়?
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) ওয়েবসাইট থেকে স্ট্রোক সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়। এতে বলা হয়, স্ট্রোককে কখনো কখনো বলা হয় ব্রেইন অ্যাটাক। স্ট্রোক ঘটে যখন কোনো কারণে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় বা মস্তিষ্কের কোনো রক্তনালি ফেটে যায়। উভয় ক্ষেত্রেই মস্তিষ্কের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা মারা যায়। স্ট্রোকের কারণে মস্তিষ্কের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি, দীর্ঘমেয়াদি অক্ষমতা বা এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
স্ট্রোক হলে মস্তিষ্কে কী ঘটে? সিডিসি বলছে, সঠিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মস্তিষ্কের অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ে। ধমনির মাধ্যমে মস্তিষ্কে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছায়। এই রক্তপ্রবাহে বাধা পেলে অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্কের কোষগুলো কয়েক মিনিটের মধ্যে মারা যেতে শুরু করে।
সিডিসি জানায়, স্ট্রোকের দুটি ধরন আছে। যথা:
১. ইস্কেমিক স্ট্রোক: বেশির ভাগ মানুষ এই ধরনের স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। রক্ত জমাট বেঁধে গেলে বা অন্যান্য কণা মস্তিষ্কের রক্তনালিতে বাধা সৃষ্টি করলে ইস্কেমিক স্ট্রোক ঘটে। অনেক সময় রক্তনালিতে চর্বি জমা হয়েও (একে প্ল্যাকও বলা হয়) মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহে বাধার সৃষ্টি হতে পারে।
২. হ্যামোরেজিক স্ট্রোক: এই ধরনের স্ট্রোক ঘটে যখন মস্তিষ্কের কোনো ধমনি ফেটে যায়। এর ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলোতে ধমনির রক্ত বেশি চাপ দেয়। তখন কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উচ্চ রক্তচাপ এবং অ্যানিউরিজমের (রক্তনালি, যেমন ধমনির দেয়ালে অস্বাভাবিক ফোলা ভাব বা স্ফীতি) কারণে হেমোরেজিক স্ট্রোক হতে পারে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত দাবির সঙ্গে হ্যামারেজিক স্ট্রোকের সাদৃশ্য পাওয়া যায়। কিন্তু আসলেই কি গোসলে প্রথমে মাথায় পানি দিলে স্ট্রোক হয়?
স্ট্রোকের কারণ অনুসন্ধানে ইউকে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস, জনস হপকিন্স মেডিসিন, মায়ো ক্লিনিকের মতো চিকিৎসাবিষয়ক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট খুঁজে দেখে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। প্রতিষ্ঠানগুলো স্ট্রোকের কারণ হিসেবে উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, অতিরিক্ত মাত্রার কোলেস্টেরল গ্রহণ, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ, মানসিক চাপ, বয়স, পারিবারিক ইতিহাসের মতো বিষয়গুলোকে উল্লেখ করেছে। কোনো প্রতিষ্ঠানই কোথাও গোসলের সঙ্গে স্ট্রোকের সম্পর্ক আছে এমন কোনো তথ্য উল্লেখ করেনি।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত নাইজেরিয়ার স্নায়ুবিশেষজ্ঞ ওলুবুনমি ওমোজোওলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে নাইজেরিয়ার সংবাদমাধ্যম দ্য ক্যাবল। তিনি সংবাদমাধ্যমটিকে জানান, গোসলের সময় মাথায় প্রথমে পানি ঢালার সঙ্গে স্ট্রোকের সম্পর্ক নিয়ে প্রচারিত দাবিটি সঠিক নয়।
তিনি বলেন, গোসলের সময় মাথায় পানি ঢালা প্রাথমিকভাবে মাথার উপরিভাগের রক্তনালিগুলো প্রভাবিত করে। তবে এই রক্তনালিগুলোর কারণে স্ট্রোক হয় না। স্ট্রোক হয় মূলত মস্তিষ্কের গভীরে থাকা রক্তনালির কারণে, যেগুলো গোসলের সময় মাথায় ঢালা পানির মাধ্যমে প্রভাবিত হয় না। তাই দাবিটির কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। স্ট্রোক হওয়ার নির্দিষ্ট কারণ আছে। একজন ব্যক্তি কীভাবে গোসল করেন, প্রথমে মাথায় নাকি পায়ে পানি দেন এর সঙ্গে স্ট্রোকের কোনো সম্পর্ক নেই।
অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়ার জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান মোনাস হেলথের স্নায়ুবিজ্ঞান গবেষণার প্রধান থানহ ফান দাবিটির সত্যতা প্রসঙ্গে বার্তা সংস্থা এএফপির ফ্যাক্টচেক বিভাগকে বলেন, অধিকাংশ স্ট্রোক মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে হয়। এই জমাট রক্ত হৃৎপিণ্ড বা বড় রক্তনালি যেমন, ক্যারোটিড ধমনি থেকে আসে। স্ট্রোকের অন্যান্য সাধারণ কারণ হলো রক্তনালি ফেটে যাওয়া। গোসলের ক্রম ও স্ট্রোকের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত দাবিটির সপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।
দেশটির স্ট্রোক ফাউন্ডেশনের ক্লিনিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি প্রফেসর ব্রুস ক্যাম্পবেলও এএফপিকে ফেসবুকে প্রচারিত দাবিগুলোর ভিত্তি নেই বলে জানান। তিনি বলেন, স্ট্রোকের সঙ্গে গোসলের সম্পর্ক নিয়ে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি; বরং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে ক্যাম্পবেল রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যকর খাবার, ধূমপান ত্যাগ, অ্যালকোহল গ্রহণ একদম কমিয়ে আনা এবং প্রতিনিয়ত ব্যায়াম ও চেকআপ করার পরামর্শ দেন।
অনুসন্ধানে স্ট্রোকের রোগীদের গোসলের ক্ষেত্রে আমেরিকান স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশনের কিছু নির্দেশনা খুঁজে পাওয়া যায়। এতে স্ট্রোকের কারণে শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিরা কীভাবে নিরাপদে গোসল করতে পারবে এই সম্পর্কে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে গোসলের কোনো ক্রমধারা বা মাথায় আগে বা পরে পানি ঢালা নিয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ লাইনেও গোসল করা নিয়ে বেশ কিছু নিয়ম খুঁজে পাওয়া যায়। এখানেও ফেসবুকে দাবি করা গোসলের নিয়ম সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়া আন্তর্জাতিক ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্ক (আইএফসিএন) স্বীকৃত পশ্চিম আফ্রিকাভিত্তিক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান দুবাওয়াও বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে জানিয়েছে, যেকোনো ক্রমে গোসল করার সঙ্গে স্ট্রোকের কোনো সম্পর্ক নেই। যেসব কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরি হয়, সেগুলোর মধ্যে আছে উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং স্থূলতা।
অর্থাৎ বিশেষজ্ঞ ও স্ট্রোক-সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মতে, গোসলে গিয়ে প্রথমে মাথায় পানি ঢালার সঙ্গে স্ট্রোকের কোনো সম্পর্ক নেই। এ ছাড়া স্ট্রোক থেকে বাঁচতে গোসলের সঠিক নিয়ম বলে যে তথ্যগুলো প্রচার করা হচ্ছে, সেগুলোও ভিত্তিহীন।
স্ট্রোক সাধারণত বাথরুমেই বেশি হয় কেন—এমন একটি প্রশ্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কয়েক বছর ধরে প্রচারিত হচ্ছে। সম্প্রতি সেটাই আবার ভাইরাল হয়েছে। এর উত্তরে দাবি করা হচ্ছে, স্ট্রোক সাধারণত বাথরুমেই বেশি হয়ে থাকে। কারণ, গোসলের সময় আমরা প্রথমেই মাথা এবং চুল ভেজাই, যা একদম উচিত নয়। এটি ভুল পদ্ধতি। এভাবে প্রথমেই মাথায় পানি দিলে রক্ত দ্রুত মাথায় উঠে যায় এবং কৈশিকনালি (ক্যাপিলারি) ও ধমনি একসঙ্গে ছিঁড়ে যেতে পারে। এর ফলে স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় এবং মানুষ মাটিতে পড়ে যায়।
বিশ্বের একাধিক গবেষণা প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে পোস্টগুলোতে আরও দাবি করা হয়, গোসলের সময় স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বা পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। চিকিৎসকদের মতে, গোসল করার সময় কিছু নিয়ম মেনে গোসল করা উচিত। সঠিক নিয়ম মেনে গোসল না করলে হতে পারে মৃত্যুও। গোসল করার সময় প্রথমেই মাথা ও চুল ভেজানো একদম উচিত নয়। কারণ, মানুষের শরীরে রক্তসঞ্চালন একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় হয়ে থাকে। শরীরের তাপমাত্রা বাইরের তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগে। চিকিৎসকদের মতে, মাথায় প্রথমেই পানি দিলে সঙ্গে সঙ্গে রক্তসঞ্চালনের গতি বহু গুণ বেড়ে যায়। সে সময় বেড়ে যেতে পারে স্ট্রোকের ঝুঁকিও। তা ছাড়া মাত্রাতিরিক্ত রক্তচাপের ফলে মস্তিষ্কের ধমনি ছিঁড়ে যেতে পারে।
গোসলের সঠিক নিয়ম দাবি করে পোস্টগুলোতে বলা হয়, প্রথমে পায়ের পাতা ভেজাতে হবে। এরপর আস্তে আস্তে ওপর দিকে কাঁধ পর্যন্ত ভেজাতে হবে। তারপর মুখে পানি দিতে হবে। সবার শেষে মাথায় পানি দেওয়া উচিত। এই পদ্ধতি যাদের উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং মাইগ্রেন আছে, তাদের অবশ্যই পালন করা উচিত। গোসলের ক্রমের সঙ্গে স্ট্রোকের সম্পর্ক নিয়ে প্রচারিত এ পোস্টগুলো কেবল বাংলাতেই নয়, বিভিন্ন সময়ে ইংরেজিতেও ইন্টারনেটে প্রচারিত হয়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টগুলোর দাবির সত্যতা যাচাইয়ের আগে জেনে নেওয়া যাক স্ট্রোক কী? কেন হয়?
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) ওয়েবসাইট থেকে স্ট্রোক সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়। এতে বলা হয়, স্ট্রোককে কখনো কখনো বলা হয় ব্রেইন অ্যাটাক। স্ট্রোক ঘটে যখন কোনো কারণে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় বা মস্তিষ্কের কোনো রক্তনালি ফেটে যায়। উভয় ক্ষেত্রেই মস্তিষ্কের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা মারা যায়। স্ট্রোকের কারণে মস্তিষ্কের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি, দীর্ঘমেয়াদি অক্ষমতা বা এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
স্ট্রোক হলে মস্তিষ্কে কী ঘটে? সিডিসি বলছে, সঠিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মস্তিষ্কের অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ে। ধমনির মাধ্যমে মস্তিষ্কে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছায়। এই রক্তপ্রবাহে বাধা পেলে অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্কের কোষগুলো কয়েক মিনিটের মধ্যে মারা যেতে শুরু করে।
সিডিসি জানায়, স্ট্রোকের দুটি ধরন আছে। যথা:
১. ইস্কেমিক স্ট্রোক: বেশির ভাগ মানুষ এই ধরনের স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। রক্ত জমাট বেঁধে গেলে বা অন্যান্য কণা মস্তিষ্কের রক্তনালিতে বাধা সৃষ্টি করলে ইস্কেমিক স্ট্রোক ঘটে। অনেক সময় রক্তনালিতে চর্বি জমা হয়েও (একে প্ল্যাকও বলা হয়) মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহে বাধার সৃষ্টি হতে পারে।
২. হ্যামোরেজিক স্ট্রোক: এই ধরনের স্ট্রোক ঘটে যখন মস্তিষ্কের কোনো ধমনি ফেটে যায়। এর ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলোতে ধমনির রক্ত বেশি চাপ দেয়। তখন কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উচ্চ রক্তচাপ এবং অ্যানিউরিজমের (রক্তনালি, যেমন ধমনির দেয়ালে অস্বাভাবিক ফোলা ভাব বা স্ফীতি) কারণে হেমোরেজিক স্ট্রোক হতে পারে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত দাবির সঙ্গে হ্যামারেজিক স্ট্রোকের সাদৃশ্য পাওয়া যায়। কিন্তু আসলেই কি গোসলে প্রথমে মাথায় পানি দিলে স্ট্রোক হয়?
স্ট্রোকের কারণ অনুসন্ধানে ইউকে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস, জনস হপকিন্স মেডিসিন, মায়ো ক্লিনিকের মতো চিকিৎসাবিষয়ক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট খুঁজে দেখে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। প্রতিষ্ঠানগুলো স্ট্রোকের কারণ হিসেবে উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, অতিরিক্ত মাত্রার কোলেস্টেরল গ্রহণ, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ, মানসিক চাপ, বয়স, পারিবারিক ইতিহাসের মতো বিষয়গুলোকে উল্লেখ করেছে। কোনো প্রতিষ্ঠানই কোথাও গোসলের সঙ্গে স্ট্রোকের সম্পর্ক আছে এমন কোনো তথ্য উল্লেখ করেনি।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত নাইজেরিয়ার স্নায়ুবিশেষজ্ঞ ওলুবুনমি ওমোজোওলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে নাইজেরিয়ার সংবাদমাধ্যম দ্য ক্যাবল। তিনি সংবাদমাধ্যমটিকে জানান, গোসলের সময় মাথায় প্রথমে পানি ঢালার সঙ্গে স্ট্রোকের সম্পর্ক নিয়ে প্রচারিত দাবিটি সঠিক নয়।
তিনি বলেন, গোসলের সময় মাথায় পানি ঢালা প্রাথমিকভাবে মাথার উপরিভাগের রক্তনালিগুলো প্রভাবিত করে। তবে এই রক্তনালিগুলোর কারণে স্ট্রোক হয় না। স্ট্রোক হয় মূলত মস্তিষ্কের গভীরে থাকা রক্তনালির কারণে, যেগুলো গোসলের সময় মাথায় ঢালা পানির মাধ্যমে প্রভাবিত হয় না। তাই দাবিটির কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। স্ট্রোক হওয়ার নির্দিষ্ট কারণ আছে। একজন ব্যক্তি কীভাবে গোসল করেন, প্রথমে মাথায় নাকি পায়ে পানি দেন এর সঙ্গে স্ট্রোকের কোনো সম্পর্ক নেই।
অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়ার জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান মোনাস হেলথের স্নায়ুবিজ্ঞান গবেষণার প্রধান থানহ ফান দাবিটির সত্যতা প্রসঙ্গে বার্তা সংস্থা এএফপির ফ্যাক্টচেক বিভাগকে বলেন, অধিকাংশ স্ট্রোক মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে হয়। এই জমাট রক্ত হৃৎপিণ্ড বা বড় রক্তনালি যেমন, ক্যারোটিড ধমনি থেকে আসে। স্ট্রোকের অন্যান্য সাধারণ কারণ হলো রক্তনালি ফেটে যাওয়া। গোসলের ক্রম ও স্ট্রোকের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত দাবিটির সপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।
দেশটির স্ট্রোক ফাউন্ডেশনের ক্লিনিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি প্রফেসর ব্রুস ক্যাম্পবেলও এএফপিকে ফেসবুকে প্রচারিত দাবিগুলোর ভিত্তি নেই বলে জানান। তিনি বলেন, স্ট্রোকের সঙ্গে গোসলের সম্পর্ক নিয়ে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি; বরং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে ক্যাম্পবেল রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যকর খাবার, ধূমপান ত্যাগ, অ্যালকোহল গ্রহণ একদম কমিয়ে আনা এবং প্রতিনিয়ত ব্যায়াম ও চেকআপ করার পরামর্শ দেন।
অনুসন্ধানে স্ট্রোকের রোগীদের গোসলের ক্ষেত্রে আমেরিকান স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশনের কিছু নির্দেশনা খুঁজে পাওয়া যায়। এতে স্ট্রোকের কারণে শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিরা কীভাবে নিরাপদে গোসল করতে পারবে এই সম্পর্কে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে গোসলের কোনো ক্রমধারা বা মাথায় আগে বা পরে পানি ঢালা নিয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ লাইনেও গোসল করা নিয়ে বেশ কিছু নিয়ম খুঁজে পাওয়া যায়। এখানেও ফেসবুকে দাবি করা গোসলের নিয়ম সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়া আন্তর্জাতিক ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্ক (আইএফসিএন) স্বীকৃত পশ্চিম আফ্রিকাভিত্তিক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান দুবাওয়াও বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে জানিয়েছে, যেকোনো ক্রমে গোসল করার সঙ্গে স্ট্রোকের কোনো সম্পর্ক নেই। যেসব কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরি হয়, সেগুলোর মধ্যে আছে উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং স্থূলতা।
অর্থাৎ বিশেষজ্ঞ ও স্ট্রোক-সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মতে, গোসলে গিয়ে প্রথমে মাথায় পানি ঢালার সঙ্গে স্ট্রোকের কোনো সম্পর্ক নেই। এ ছাড়া স্ট্রোক থেকে বাঁচতে গোসলের সঠিক নিয়ম বলে যে তথ্যগুলো প্রচার করা হচ্ছে, সেগুলোও ভিত্তিহীন।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি অডিও রেকর্ড প্রচার করা হয়েছে। তাতে হাসিনাকে কথা বলতে শোনা যায়, গুলি খাওয়ার পর আবু সাঈদকে চার–পাঁচ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।
১৬ ঘণ্টা আগেবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। তিনি জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদকও। সম্প্রতি সারজিস শিশু মডেল অভিনেত্রী সিমরিন লুবাবাকে ফেসবুকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন দাবিতে একটি ফটোকার্ড সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
২১ ঘণ্টা আগেপ্রযুক্তি জগতে নানা উদ্ভাবন দিয়ে সব সময়ই আলোচনায় থাকেন স্পেসএক্স, টেসলাসহ মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্সের (সাবেক টুইটার) মালিক ইলন মাস্ক। সম্প্রতি তিনি আলোচনায় এসেছেন এক্সে ডিজনির এলজিবিটিকিউ সম্পর্কিত কনটেন্ট ব্লক করে দিয়েছেন এমন দাবিতে। গত মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) দিবাগত রাতে ফেসবুকে ‘মহিদুল আলম...
২ দিন আগেরাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় গত বুধবার দুপুরে সংঘর্ষে জড়ায় ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান পুলিশ ও সেনাসদস্যরা, দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন তাঁরা। এ সময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেডও ছোড়ে।
২ দিন আগে