Ajker Patrika

ট্রান্সজেন্ডার কি মানসিক রোগ

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৮: ০৪
ট্রান্সজেন্ডার কি মানসিক রোগ

নতুন শিক্ষাক্রম আর বিতর্ক যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। ২০২৩ সালে এ শিক্ষাক্রমের বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানোর পর থেকেই একের পর এক বিতর্ক তৈরি হচ্ছে। সম্প্রতি সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের একটি অধ্যায়ে উল্লিখিত শরীফার গল্প নিয়ে এ বিতর্ক আবার আলোচনা এসেছে। ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক: বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে ‘শরীফার গল্প’ অংশটুকু ছিঁড়ে ফেলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎস।

তিনি অভিযোগ করেন, সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে আলোচনা করে শিক্ষার্থীদের ‘মগজধোলাই’ করা হচ্ছে। বইয়ের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলা এবং ওই দিনের অনুষ্ঠানের ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, যা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। দেশের প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় আসে ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু। ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে নানাজন নানামত লিখে পক্ষে-বিপক্ষে মত জানাচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। 

এসব পক্ষে-বিপক্ষে লেখায় ট্রান্সজেন্ডার একটা মানসিক রোগ। এমন মতও উঠে আসছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। দাবি করা হচ্ছে, ট্রান্সজেন্ডার যেহেতু মানসিক রোগ থেকে হয়, তাই তাঁদের শরীরে অস্ত্রোপচার না করে মানসিক চিকিৎসায় জোর দেওয়া উচিত।

যুক্তরাষ্ট্রের জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) ট্রান্সজেন্ডারের সংজ্ঞায় বলছে, যাদের সামাজিক লৈঙ্গিক পরিচয় (স্ত্রী লিঙ্গ, পুরুষ লিঙ্গ বা অন্যান্য) থেকে জন্মগত যৌন পরিচয় (পুরুষ বা নারী) আলাদা, এমন মানুষেরা ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে পরিচিত। 

সহজ কথায়, কারও জন্মগত যৌন পরিচয়ের সঙ্গে যখন সামাজিক লৈঙ্গিক পরিচয়ের অমিল ধরা পড়ে, তখন তাকে ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিরা বিষমকামী (হেটেরোসেক্সুয়াল), সমকামী (হোমোসেক্সচুয়াল), উভকামী (বাইসেক্সচুয়াল) হতে পারে। আবার কখনো এগুলোর কোনোটিতেই শ্রেণিবদ্ধ না হতে পারে।

ট্রান্সজেন্ডার মানসিক রোগ দাবিতে প্রচারিত পোস্ট। ছবি: ফেসবুক

তাহলে ট্রান্সজেন্ডার কি মানসিক রোগ? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে ২০১৬ সালে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ মেক্সিকো বিশ্বে প্রথমবারের মতো মাঠপর্যায়ে গবেষণা চালায়। দেশটির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রি, বিশেষায়িত ক্লিনিক কনডেসা ও ন্যাশনাল অটোনমাস ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা রাজধানী মেক্সিকো সিটির ২৫০ ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির ওপর এই গবেষণা চালান।

বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত বিখ্যাত গবেষণা জার্নাল ল্যানসেট সাইকিয়াট্রিতে প্রকাশিত এই গবেষণায় বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয় ট্রান্সজেন্ডার কোনো মানসিক রোগ নয়। অনেক সময় অভিভাবকেরা ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের মানসিক চিকিৎসা নিতে বাধ্য করেন। কিন্তু তাঁদের প্রয়োজন শারীরিক চিকিৎসা। 

গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ট্রান্সজেন্ডাররা জানান, তারা তাদের শৈশব ও কৈশোরের সময় (২ থেকে ১৭ বছর) বয়সেই প্রথম নিজেদের ট্রান্সজেন্ডার পরিচয় শনাক্ত করতে পেরেছিলেন। ৭৬ শতাংশ ট্রান্সজেন্ডার জানান, তারা সামাজিকভাবে প্রত্যাখ্যানের শিকার হয়েছেন, ৬৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী তাদের সামাজিক লৈঙ্গিক পরিচয়ের কারণে সহিংসতার শিকার হয়েছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব সামাজিক প্রত্যাখ্যান এবং সহিংসতা ট্রান্সজেন্ডারদের নিজেদের পরিবারের মধ্যেই ঘটেছে। ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিরা যে মানসিক সমস্যায় ভোগেন সেটি মূলত ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক পরিসরে এসব নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হওয়া ও সামাজিক সংস্কারের কারণে ঘটে থাকতে পারে।

মেক্সিকান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রির গবেষক ও গবেষণাটির প্রধান রেবেকা রোবলস এক বিবৃতিতে বলেন, গবেষণায় প্রাপ্ত ডেটা অনুযায়ী, বৈচিত্র্যময় লিঙ্গ পরিচয়ের কারণে সামাজিক সংস্কার ও সমাজ থেকে পাওয়া দুর্ব্যবহারের থেকে ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিরা হতাশা এবং মানসিক চাপে ভোগেন। 

ওই গবেষণায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) রোগের আন্তর্জাতিক শ্রেণিবিন্যাসের (আইসিডি) পরের সংস্করণে ট্রান্সজেন্ডারকে যৌন স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়। তখন পর্যন্ত আইসিডিতে ট্রান্সজেন্ডার বা জেন্ডার আইডেনটিটি ডিসঅর্ডারকে ‘মানসিক ও আচরণগত ব্যাধি’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরে ২০১৯ সালে তা সংশোধন করে ট্রান্সজেন্ডারকে মানসিক ও আচরণগত ব্যাধি নয় বলে সিদ্ধান্ত দেয় ডব্লিউএইচও। 

ট্রান্সজেন্ডার পুরুষ ও ওয়ার্ল্ড প্রফেশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর ট্রান্সজেন্ডার হেলথের প্রেসিডেন্ট জেমিসন গ্রিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম টাইমকে বলেন, ‘লৈঙ্গিক অসংগতি নিয়ে বেড়ে ওঠা একজন ব্যক্তি হিসেবে আমি খুবই স্পষ্ট যে ট্রান্সজেন্ডার কোনো মানসিক সমস্যা নয়। পারিপার্শ্বিকতার কারণে ট্রান্সজেন্ডাররা মানসিক সমস্যায় ভোগেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক একাডেমিক মেডিকেল সেন্টার ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক জানায়, ট্রান্সজেন্ডার মানসিক রোগ নয়। কিন্তু যাঁরা ট্রান্সজেন্ডার, তাঁরা বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন। যেমন, জেন্ডার ডিসফোরিয়া ও বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য। এসব বিষয় তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে।

একজন ব্যক্তির জন্মগত যৌন পরিচয়ের সঙ্গে  সামাজিক লৈঙ্গিক পরিচয়ের ভিন্নতা ধরা পড়লে তিনি ট্রান্সজেন্ডার। এই অমিল দূর করার জন্য যৌনাঙ্গে সার্জারিসহ যথাযথ চিকিৎসা নেওয়ার আগ পর্যন্ত ব্যক্তির যে অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা হয় তাঁকে ‘জেন্ডার ডিসফোরিয়া’ বলে। এটি শৈশব থেকে শুরু করে জীবনের যেকোনো পর্যায়ে ঘটতে পারে। এর চিকিৎসা না হলে মানসিক জটিলতাসহ নানা স্বাস্থ্যগত জটিলতা হতে পারে।

বিবিসি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে ২০১৯ সালের ২৯ মে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, ট্রান্সজেন্ডারের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রজনন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লালেকে উদ্ধৃত করে বিবিসি জানায়, ট্রান্সজেন্ডার আগে মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাধিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু এটি মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা নয় বলে প্রতীয়মান হওয়ায় ট্রান্সজেন্ডারদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ভিন্ন অধ্যায়ে যুক্ত করা হয়েছে।

২০১৯ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফোরাম ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলির ৭২তম সম্মেলনে আইসিডির ১১তম সংস্করণ অনুমোদন দেওয়া হয়। এই সংস্করণে ট্রান্সজেন্ডারকে মানসিক ও আচরণগত ব্যাধি বা রোগ থেকে বাদ দিয়ে যৌন স্বাস্থ্য অধ্যায়ের অধীনে জেন্ডার ইনকনগ্রুয়েন্স বা লৈঙ্গিক অসামঞ্জস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইট ঘুরে দেখা যায়, ট্রান্সজেন্ডারকে মানসিক ও আচরণগত ব্যাধি বা রোগ থেকে বাদ দিয়ে যৌন স্বাস্থ্য অধ্যায়ের অধীনে নেওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, ট্রান্স-সম্পর্কিত এবং লিঙ্গবৈচিত্র্যের ব্যাপারগুলো মানসিক অসুস্থতার শর্ত নয়। তাদের এভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা বিশাল কলঙ্কের কারণ হতে পারে। জেন্ডার ইন কনগ্রুয়েন্স বা লৈঙ্গিক অসামঞ্জস্যকে বয়সভেদে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

১. কৈশোর বা প্রাপ্তবয়সের ব্যক্তিরা সামাজিক লৈঙ্গিক পরিচয় ও জৈবিক লৈঙ্গিক পরিচয়ের মধ্যে জোরালো ও স্থায়ী অমিল খুঁজে পায়। এর ফলে ব্যক্তি তার কাঙ্ক্ষিত সামাজিক লৈঙ্গিক পরিচয় গ্রহণের জন্য হরমোনাল ট্রিটমেন্ট, অস্ত্রোপচারসহ অন্যান্য চিকিৎসার দ্বারস্থ হয়। বয়ঃসন্ধি শুরু হওয়ার আগে এটির চিকিৎসা সম্ভব নয়। 

২. শৈশবে বয়ঃসন্ধি শুরু হওয়ার আগে লৈঙ্গিক অসামঞ্জস্য দেখা যায়। শিশু ভিন্ন সামাজিক লৈঙ্গিক পরিচয় গ্রহণ করতে চায় এবং সেগুলোকেই প্রাধান্য দেয় এবং নিজের লৈঙ্গিক পরিচয় পরিবতর্ন করতে চায়। শৈশবে লিঙ্গ অসংগতির এই অনুভূতি শিশুর মধ্যে কমপক্ষে দুই বছর স্থায়ী হতে হয়।

ওপরের আলোচনা থেকে এটি স্পষ্ট যে মানুষ ট্রান্সজেন্ডার হয় শারীরিক পরিবর্তনের কারণে। পূর্বে এটিকে মানসিক স্বাস্থ্যের অন্তর্গত বলে দাবি করা হলেও গবেষণা বলছে, এর সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নেই। বিশ্ব সংস্থাও ২০১৯ সালে এটিকে মানসিক স্বাস্থ্য থেকে বের করে যৌন স্বাস্থ্যের অন্তর্ভুক্ত করেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনা আর বাড়তে না দেওয়ার আহ্বান রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ২১
আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

সম্প্রতি আজকের পত্রিকার নাম ও ফটোকার্ড ব্যবহার করে ‘হরেকৃষ্ণ হরিবোল, দাঁড়িপাল্লা টেনে তোলঃ পরওয়ার’ শিরোনামে একটি ভুয়া ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি একটি সম্পূর্ণ ভুয়া ফটোকার্ড।

আজকের পত্রিকা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করছে, এই ধরনের কোনো খবর আজকের পত্রিকাতে কখনোই প্রকাশিত হয়নি। ফটোকার্ডটিতে আজকের পত্রিকার লোগো ব্যবহার করা হলেও এর ভেতরের খবর ও শিরোনাম সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

আজকের পত্রিকা সর্বদা সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

বর্তমান সময়ে এ ধরনের ভুয়া ফটোকার্ড ও খবর নিয়ে পাঠকদের সচেতনতা জরুরি। যেকোনো সন্দেহজনক খবর যাচাই করার জন্য অনুরোধ রইল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনা আর বাড়তে না দেওয়ার আহ্বান রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৪
মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাতে রাস্তার মাঝখানে এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি এক হাতে একটি স্বচ্ছ বোতল, অপর হাতে বাঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি বাঘটির মুখে বোতল গুঁজে দিতেও দেখা যায় তাঁকে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে এই ভিডিও শেয়ার করে দাবি করছেন, একটি সিসিটিভি ফুটেজ। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ঘটনাটি ভারতের মধ্যপ্রদেশের পেঞ্চ এলাকার। ওই ব্যক্তি দেশীয় মদ পান করে মাতাল হয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। তিনি এতটা মাতাল ছিলেন যে বাঘকেও মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। বাঘ অবশ্য তাঁর হাতে মদ্যপানে রাজি হয়নি! পরে ওই বাঘটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগ। বাঘটি ওই ব্যক্তির কোনো ক্ষতি করেনি।

বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত
বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত

ভিডিওটি দেখে অনেকেই বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন—কেউ বিশ্বাস করেছেন, এটি বাস্তব কোনো ঘটনা; কেউ আবার মনে করছেন, এটি নিছকই কৃত্রিম ভিডিও। কিন্তু সত্যিটা কী? দ্য কুইন্টের সাংবাদিক অভিষেক আনন্দ ও ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা বুম বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করেছে।

বুম ভিডিওটি নিয়ে বিভিন্ন কিওয়ার্ড দিয়ে এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদন অনুসন্ধান করেছে, কিন্তু কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এরপর তারা সরাসরি মধ্যপ্রদেশের সেওনি জেলার পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করে। দ্য কুইন্ট ও বুমকে সেওনি জেলার পুলিশ সুপারের দপ্তর থেকে স্পষ্ট জানানো হয়—তাদের জানামতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি যাচাই করা হয়। তিনি বলেন, ভিডিওটির সঙ্গে পেঞ্চ এলাকার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরও ব্যাখ্যা দেন, বনের বাঘের সঙ্গে এমন ঘনিষ্ঠভাবে মানুষের যোগাযোগ সম্ভব নয়, যদি না বাঘটিকে বন্দী করে দীর্ঘদিন ধরে পোষ মানানো হয়। তাঁর ভাষায়, ‘বনের বাঘ কখনো এমন আচরণ করে না, এটা বাস্তবে সম্ভব নয়।’

ভিডিওর সন্দেহজনক দিক বা ভিজ্যুয়াল অসংগতি

বুম ভিডিওটির একটি উচ্চমানের সংস্করণ সংগ্রহ করে তাতে কিছু অস্বাভাবিক দিক লক্ষ করে। দেখা যায়, ভিডিওটির পটভূমির দৃশ্যে কিছু অস্পষ্ট বস্তু নড়াচড়া করছে, যা বাস্তব ভিডিওর মতো স্বাভাবিক নয়।

বাঘের মাথায় হাত রাখা ব্যক্তির আঙুলগুলো বিকৃতভাবে বাঁকানো, যেন সফটওয়্যারে তৈরি কৃত্রিম ছায়া। এমনকি হাতে থাকা বোতলের মুখ কখনো দেখা যায়, আবার মিলিয়ে যায়—এই ভিজ্যুয়াল অসংগতিগুলো ইঙ্গিত দেয়, এটি ধারণকৃত কোনো ফুটেজ নয়। সব মিলিয়ে ভিডিওটির একাধিক ফ্রেমে গ্রাফিক বিকৃতি স্পষ্ট।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর বিশ্লেষণ

এরপর ভিডিওটি পরীক্ষা করা হয় ডিপফেক-ও-মিটার নামের একটি উন্নত টুলে। এটি তৈরি করেছে ইউনিভার্সিটি অব বাফেলোর মিডিয়া ফরেনসিকস ল্যাব। এই টুল ভিডিওটির বিভিন্ন অংশ বিশ্লেষণ করে দেখায়, এতে ‘উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক নির্মাণের চিহ্ন’ রয়েছে।

এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত
এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত

এরপর বুম তাদের অংশীদার ডিপফেক অ্যানালাইসিস ইউনিটের সাহায্য নেয়। তারা ভিডিওটি পরীক্ষা করে ‘Is It AI’ এবং ‘AI Or Not’—নামক দুটি আলাদা টুলে। উভয় টুলের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে নির্মিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৬৯ শতাংশ।

এই ফলাফল অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভিডিওর মানুষের সঙ্গে প্রাণীর মিথস্ক্রিয়া এবং আলো-ছায়ার ত্রুটি স্পষ্ট করে দিচ্ছে এটি আসল নয়, বরং জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো একটি দৃশ্য।

ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর বহু ব্যবহারকারী এটিকে সত্যি বলে বিশ্বাস করেছেন। কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওর ওই ব্যক্তির নাম রাজু পাতিল। ৫২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি একজন দিনমজুর। তিনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় রাস্তায় বাঘটিকে আদর করছিলেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে অক্ষত অবস্থায় রয়ে গেছেন।

একাধিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শনাক্তকরণ টুলের ফলাফল এবং প্রশাসনিক যাচাই মিলিয়ে নিশ্চিতভাবে বলা যায়—ভিডিওটি বাস্তব নয়, বরং এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি একটি কৃত্রিম দৃশ্য। পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহও সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই ভিডিওর কোনো অংশই পেঞ্চের নয়। এটি সম্পূর্ণ ভুয়া।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনা আর বাড়তে না দেওয়ার আহ্বান রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ০৩
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যানকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল যুক্ত বাংলাদেশের মানচিত্রসংবলিত পতাকা উপহার দিয়েছেন বলে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের দাবি সম্পূর্ণ অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত বলে জানিয়েছে সিএ (প্রধান উপদেষ্টা) ফ্যাক্ট চেক।

ভারতের সংবাদমাধ্যমটি গতকাল এক প্রতিবেদনে দাবি করে, পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে এমন একটি পতাকা উপহার দিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস, যেখানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বাংলাদেশের মানচিত্রের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

সিএ ফ্যাক্ট চেক জানায়, প্রকৃতপক্ষে অধ্যাপক ইউনূস উপহার দিয়েছেন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ নামে একটি চিত্রসংকলন—যেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের আঁকা রঙিন গ্রাফিতি ও দেয়ালচিত্র সংকলিত হয়েছে।

‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত একটি সচিত্র দলিল, যেখানে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে অর্জিত বিপ্লবের ইতিহাস ফুটে উঠেছে।

গ্রাফিতি সংকলনের প্রচ্ছদে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাইদের পিছনে রক্তরাঙ্গা বাংলাদেশের মানচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে।

প্রচ্ছদে দৃশ্যমান মানচিত্রটি গ্রাফিতি হিসেবে অঙ্কিত হওয়ায় বাংলাদেশের মূল মানচিত্রের পরিমাপের কিছুটা হেরফের হয়েছে বলে কারো কাছে মনে হতে পারে। কিন্তু ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের কোনো অংশ গ্রাফিতি মানচিত্রটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে দাবি করাটা সম্পূর্ণ অসত্য এবং কল্পনাপ্রসূত। বাংলাদেশের মানচিত্রের সাথে উল্লেখিত গ্রাফিতিতে দৃশ্যমান মানচিত্রের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অঙ্কিত মানচিত্রটিতে বাংলাদেশের প্রকৃত মানচিত্র প্রায় হুবহুভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা এর আগেও একই গ্রাফিতি সংকলন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জাতিসংঘের মহাসচিব, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ বিশ্ব নেতাদের উপহার দিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনা আর বাড়তে না দেওয়ার আহ্বান রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৮
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মর্মান্তিক ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়, প্যাসিফিক ব্লু মেরিন পার্কে ‘জেসিকা র‍্যাডক্লিফ’ নামে একজন প্রশিক্ষককে একটি অরকা আক্রমণ করে হত্যা করেছে।

ভিডিওটি টিকটক, ফেসবুক এবং এক্সে ভাইরাল হয়েছে। তবে, একাধিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।

ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে

ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে দেখা যায়, একজন তরুণী একটি অরকার পিঠে দাঁড়িয়ে নাচছেন। দর্শকেরা তখন উল্লাস করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অরকাটি ওই তরুণীকে আক্রমণ করে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার করা অনেক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, পানির নিচে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।

ঘটনা বা প্রশিক্ষকের কোনো প্রমাণ নেই

ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া সত্ত্বেও, জেসিকা র‍্যাডক্লিফ নামে একজন প্রশিক্ষক অরকার আক্রমণে মারা গেছেন—এই দাবির পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ, মেরিন পার্ক এবং প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের অস্তিত্ব বা এমন কোনো ঘটনার রেকর্ড খুঁজে পায়নি। দ্য স্টার পত্রিকার মতে, ভিডিওটি কাল্পনিক; এমনকি ভিডিওতে থাকা কণ্ঠস্বরগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণত যে ধরনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়, এই ঘটনায় তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ভিডিওর মধ্যে পানির অস্বাভাবিক গতিবিধি এবং অদ্ভুত বিরতিও নিশ্চিত করে যে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ভিডিওতে যে পার্কের নাম বলা হয়েছে, সেটিও ভুয়া।

এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট
এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট

সম্পূর্ণভাবে এআই-নির্মিত

ফোর্বস ম্যাগাজিন ক্লিপটিকে ‘একটি প্রতারণা’ বলে চিহ্নিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা যদি সত্যিই ঘটতো, তাহলে তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হতো। ভিডিওর দৃশ্য এবং শব্দ সম্ভবত চাঞ্চল্যকর প্রভাব তৈরির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দ্য ইকোনমিক টাইমস উল্লেখ করেছে, এই গল্পের চরিত্র এবং নাম কোনো যাচাইযোগ্য রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না। ফলে বলা যেতে পারে যে, পুরো গল্পটি বানোয়াট।

সত্যিকারের দুর্ঘটনার সঙ্গে মিল

এই ধরনের প্রতারণামূলক ভিডিওগুলোতে কিছুটা সত্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি ২০১০ সালে সি ওয়ার্ল্ডে ডন ব্রাঞ্চেউ এবং ২০০৯ সালে অ্যালেক্সিস মার্টিনেজ-এর বাস্তব জীবনের মৃত্যুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় প্রশিক্ষকই অরকার আক্রমণে মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের গল্পের মতো নয়, কারণ সেগুলো নথিভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে।

কেন এই ধরনের প্রতারণা ভাইরাল হয়

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি ভিডিওর আবেগপূর্ণ তীব্রতা এবং বাস্তবসম্মত উৎপাদন কৌশল এটি ভাইরাল হতে সাহায্য করে। এই ধরনের ক্লিপগুলো বুদ্ধিমান সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বন্দী করে রাখার নৈতিকতা নিয়ে মানুষের গভীর উদ্বেগগুলোকে কাজে লাগায়। একই সঙ্গে, এগুলো চাঞ্চল্যকর বিষয়বস্তু ব্যবহার করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং হলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।

কথিত জেসিকা র‍্যাডক্লিফকে নিয়ে অরকার আক্রমণের ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই নামে কোনো প্রশিক্ষকের অস্তিত্বেরও কোনো প্রমাণ নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনা আর বাড়তে না দেওয়ার আহ্বান রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত