দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগীর রোজা

ডা. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম
প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৩, ০৯: ৫৬

রোজা যেসব রোগীর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, তাঁদের রোজা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে পবিত্র কোরআনে। এরপরও দেখা যায়, অনেক রোগী নিয়ম মেনে রোজা রাখেন।

আমাদের শরীরের পুষ্টি আহরণ, বর্জ্য পদার্থ নিঃসরণ ছাড়াও লবণ ও অম্ল-ক্ষারের সামঞ্জস্য বজায় রাখা কিডনির প্রধান কাজ। এই কিডনিও কখনো কখনো আক্রান্ত হয় বিভিন্ন রোগে। এর আবার রোগের নানান ধরন আছে। যেমন:

  • হঠাৎ কিডনি বিকল বা একিউট কিডনি ইনজুরি (একেআই): এ ধরনের রোগে কিডনি তার যথাযথ কাজ করতে পারে না এবং রোগের মেয়াদ তিন মাসের কম হয়।
  • দীর্ঘমেয়াদি কিডনির সমস্যা বা ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (সিকেডি): এসব রোগে কিডনি তার কর্মক্ষমতা হারায় এবং রোগের মেয়াদ তিন মাসের বেশি হয়ে থাকে। সিকেডি রোগের পাঁচটি ধাপ আছে এবং রোগের প্রকোপ ও সাবধানতা বিচারে এই ধাপগুলো সঠিক নির্দেশনা দিতে সাহায্য করে। 

এ ছাড়া কিডনিতে পাথর, কিডনি-মূত্রনালি ও মূত্রথলির সংক্রমণও কিডনির অন্যতম রোগ।

দীর্ঘমেয়াদি কিডনির সমস্যা বা ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (সিকেডি) রোগীদের রোজার সময় কিছু বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

কারা রোজা রাখতে পারবেন

  • ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বা সিকেডি রোগীদের মধ্যে যাঁরা স্টেজ ১, ২ ও ৩-এ রয়েছেন, তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঝুঁকিমুক্তভাবে রোজা রাখতে পারবেন। 
  • যাঁরা স্টেজ ৪ ও ৫-এ রয়েছেন, তাঁদের জন্য রোজা রাখাটা অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে দেখতে হবে যে তাঁরা রোজা রাখতে পারবেন কি না। 
  • ডায়ালাইসিস রোগী: সাধারণত যেসব সিকেডি রোগী স্টেজ ৫-এ পৌঁছে গেছেন, তাঁদের ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হয়। ডায়ালাইসিস রোগী রোজা রাখতে পারবেন কি না, তা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। এ সময় যেসব প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়, তাতে রোজা হয় না। তাই যেদিন ডায়ালাইসিস নেওয়া হবে, সেদিন রোজা রাখা ঠিক হবে না। কিন্তু যেদিন ডায়ালাইসিস থাকবে না, সেদিন রোজা রাখা যাবে, তবে সেটা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে।
  • কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট রোগী: ট্রান্সপ্লান্ট রোগীদের কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মানতে হয়, কিছু ওষুধ সারা জীবন খেয়ে যেতে হয়। তাঁরা রোজা রাখতে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ পরিবর্তন করে রোজা রাখার চেষ্টা করতে হবে।

খাবার

  • আমাদের দেশে ইফতারির অন্যতম উপাদান ডাল ও বেসন দিয়ে তৈরি উপকরণ, যা কিডনি রোগীদের জন্য নিষিদ্ধ। তাই ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনির বদলে চালের তৈরি খাবার, দই-চিড়া খাওয়া যেতে পারে।
  • কিডনি রোগীর জন্য পটাশিয়াম খুবই ক্ষতিকর। ইফতারিতে খেজুর, ডাবের পানি ও বিভিন্ন ধরনের শরবতের প্রচলন রয়েছে, যেগুলো পটাশিয়ামে ভরপুর। তাই এগুলো না খাওয়া ভালো।
  • পটাশিয়ামযুক্ত ফল, যেমন কলা, আনার, লেবু, আম, কাঁঠাল ইত্যাদি বাদ দিতে হবে। তবে আপেল, বিচি ছাড়া পেয়ারা, নাশপাতি, পাকা পেঁপে, আনারসের জুস খেতে পারবেন পরিমাণমতো।
  • আমিষজাতীয় খাবার পরিমাণমতো খাওয়া যাবে। পানির পরিমাণ রোগীর চাহিদা, আবহাওয়া, তাপমাত্রা ও প্রস্রাবের মাত্রার ওপর নির্ভর করবে।

গুরুতর রোগীদের জন্য রোজা না রাখলে ক্ষমার ঘোষণাও আছে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

ডা. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, রেসিডেন্ট, নেফ্রোলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত