অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী
শরীরে মেদ হলে, বিশেষ করে তলপেটে মেদ হলে তা যেমন দৃষ্টিনন্দন থাকে না, তেমনি নানা রোগ-বালাইও ডেকে এনে হুলুস্থুল কাণ্ড তৈরি হয়।
কথা হলো, কোভিড ঠেকাতে শরীরী মেদ বাধা। শরীর মেদহীন হলে কোভিড ধারেকাছে ভিড়তে পারে না।
কোভিডের আবির্ভাবের পর থেকে হাসপাতাল বা ক্লিনিকে যেসব রোগী এলেন, তাঁদের মধ্যে যাঁদের অন্য ক্রনিক অসুখ আছে, মানে যাঁরা কোমরবিড, তাঁদের সংখ্যা বেশি। আর তাই রোগের কারণ খুঁজতে বিশেষজ্ঞদের নজর তাঁদের ওপর পড়ল বেশি। কিন্তু কী সেই কারণ?
ভারতের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক দাবি করলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণে ইমিউনিটি আর প্রদাহ দুটোর ওপর প্রভাব পড়ে স্থূলতার। নানা গবেষক এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে দুটি পথে এমন ঘটে বলে ধারণা দিলেন। পথ দুটি হলো, ইমিউনিটি ও কোমরবিড এবং ইনফ্লামেটরি।
ইমিউন রক্তকোষ, সেই সঙ্গে বি লিম্ফ কোষ আর টি লিম্ফ কোষ মিলে সামাল দেয় সক্রিয় আর নিষ্ক্রিয় দেহ প্রতিরোধ।
গবেষকেরা ধারণা দিলেন, স্থূলতা সীমাবদ্ধ করে ফেলে বহমান টি কোষ। আর বহিরাগত অ্যান্টিজেন শনাক্তের ব্যাপারে এর ভূমিকা বেশি। বলেন মুখ্য গবেষক ডি শিভারামণ।
কীভাবে? এর ব্যাখ্যায় বলা হলো, স্থূলতার কারণে লেপটিন হরমোনের বৃদ্ধিতে কমে যায় টি হেলপার কোষের মাত্রা। আর এই টি হেলপার বি কোষের সঙ্গে মিলে তৈরি করে অ্যান্টিবডি।
প্রসঙ্গক্রমে এসেছে আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধের কথা। গবেষকেরা বলেন, কোভিড-১৯ রোগী যাঁরা, তাঁদের বেশির ভাগের ছিল অন্য রোগ, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা আর ডায়াবেটিস।
দ্বিতীয় যে পথচক্রের কথা আগে উল্লেখ করা হলো, সে বিষয়টা দেখে নেওয়া যাক।
দেখা যায় মেদ কোষ বা এডিপো সাইট থেকে নিঃসৃত হয় অতি সক্রিয় লেপটিন হরমোন। এটি সমন্বিত করে ইনফ্লামেটরি সাইটোকাইন আর এর প্রভাবে ইমিউন সিস্টেম উচ্ছলিয়ে ওঠে এবং গুরুতর প্রদাহ হয়। এমন ঘটনাকে বলে সাইটোকাইন ঝড়। নানা অঙ্গ হয় বিকল আর কখনো হয় তা মারাত্মক। এমন মন্তব্য গবেষক প্রদীপ কুমারের।
এ জন্য গবেষকদের পরামর্শ হলো, কোভিড সামলাতে সুষম খাদ্য, ব্যায়াম, ধূমপান ও মদ্যপান বন্ধ করা এবং স্ট্রেস সামাল দেওয়া। গবেষণায় দেখা গেছে, খাদ্যে পলিফেনল থাকলে এর বেশ স্বাস্থ্য সুবিধা আছে। সে জন্য বাদাম, সবজি, বীজ-এসব খেতে হবে। এতে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস পায়। বিজ্ঞানী মনহরণ বলেন, মাঝারি ব্যায়াম ইমিউন ব্যবস্থার উন্নতি ঘটায় আর হ্রাস করে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের প্রবণতা। শরীরচর্চা বাড়ালে আরেকটি কুশল কাজ হয়। তা হলো, রক্তকণিকা উৎপাদী কোষগুলো একত্র হয়ে অ্যান্টিবডি উৎপাদন হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম হিউমরাল ইমিউনিটি। এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। ইনটেনসিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞ ও ভারতের স্টেট কোভিড বিশেষজ্ঞ বোর্ডের সদস্য মহাঋষি দেশাই বলেন, স্থূল কোভিড রোগীদের গুরুতর বা ক্রিটিক্যাল পরিস্থিতি হওয়া এবং হাসপাতালবাস হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি।
আরেক জন ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ ডা. অমিত প্রজাপতি তাঁর অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে বলেন, দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালে ৫০-অনূর্ধ্ব বয়সের বেশির ভাগ মারা যাওয়া রোগীর ছিল স্থূলতা।
কেবল কোভিড নয়, স্থূল হলে যেকোনো রোগ থেকে সেরে উঠতে সময় লাগে বেশি।
আরেকটি বিষয় উল্লেখ্য। স্থূলতা ঘটায় আরও কিছু কোমরবিড অবস্থা। যেমন উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ লিপিড মান, রক্তে উচ্চ সুগার, ফুসফুস ও কিডনির কার্যকলাপ বিঘ্ন হওয়া।
আমরা জানি, রুগ্ণতা থাকলে কোভিড সংক্রমণের প্রবণতা বাড়ে।
দেহ স্থূল হলে প্রতিরোধ সেনারা হয় ম্রিয়মাণ, টি কোষ সাড়া দেয় কম। আরও ব্যাখ্যা করে বললে, টি কোষকে পূর্ণ রণসাজে সাজলে এ থেকে আসে সি ডি ৪টি ও টি এইচ২ কোষ। স্থূলতা থাকলে বি কোষের কাজ হয় ধীর। ফলে অ্যান্টিবডি উৎপাদন কমে যায়।
আরেকটি কথা, মেদ কোষ যদি বেশি থাকে, তাহলে এ থেকে নিঃসৃত হয় এডিপোকাইন, যা প্রভাব ফেলে লেপটিনের ওপর। এ থেকে হয় সাইটোকাইন ঝড়। এরপর নানা দেহযন্ত্র হয় বিকল।
তাই আমাদের শরীরে মেদ বেশি হলে, বিশেষ করে তলপেটে, সেটা কমাতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন জীবনশৈলীতে পরিবর্তন, সুষম ও পরিমিত আহার, ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয়, চর্বি, চিনি, নুন কম খাওয়া, ব্যায়াম, স্ট্রেস কমানো। প্রতিদিন শরীরচর্চা আর অলস নিষ্ক্রিয় জীবন ছেড়ে সক্রিয় জীবন।
লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
শরীরে মেদ হলে, বিশেষ করে তলপেটে মেদ হলে তা যেমন দৃষ্টিনন্দন থাকে না, তেমনি নানা রোগ-বালাইও ডেকে এনে হুলুস্থুল কাণ্ড তৈরি হয়।
কথা হলো, কোভিড ঠেকাতে শরীরী মেদ বাধা। শরীর মেদহীন হলে কোভিড ধারেকাছে ভিড়তে পারে না।
কোভিডের আবির্ভাবের পর থেকে হাসপাতাল বা ক্লিনিকে যেসব রোগী এলেন, তাঁদের মধ্যে যাঁদের অন্য ক্রনিক অসুখ আছে, মানে যাঁরা কোমরবিড, তাঁদের সংখ্যা বেশি। আর তাই রোগের কারণ খুঁজতে বিশেষজ্ঞদের নজর তাঁদের ওপর পড়ল বেশি। কিন্তু কী সেই কারণ?
ভারতের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক দাবি করলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণে ইমিউনিটি আর প্রদাহ দুটোর ওপর প্রভাব পড়ে স্থূলতার। নানা গবেষক এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে দুটি পথে এমন ঘটে বলে ধারণা দিলেন। পথ দুটি হলো, ইমিউনিটি ও কোমরবিড এবং ইনফ্লামেটরি।
ইমিউন রক্তকোষ, সেই সঙ্গে বি লিম্ফ কোষ আর টি লিম্ফ কোষ মিলে সামাল দেয় সক্রিয় আর নিষ্ক্রিয় দেহ প্রতিরোধ।
গবেষকেরা ধারণা দিলেন, স্থূলতা সীমাবদ্ধ করে ফেলে বহমান টি কোষ। আর বহিরাগত অ্যান্টিজেন শনাক্তের ব্যাপারে এর ভূমিকা বেশি। বলেন মুখ্য গবেষক ডি শিভারামণ।
কীভাবে? এর ব্যাখ্যায় বলা হলো, স্থূলতার কারণে লেপটিন হরমোনের বৃদ্ধিতে কমে যায় টি হেলপার কোষের মাত্রা। আর এই টি হেলপার বি কোষের সঙ্গে মিলে তৈরি করে অ্যান্টিবডি।
প্রসঙ্গক্রমে এসেছে আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধের কথা। গবেষকেরা বলেন, কোভিড-১৯ রোগী যাঁরা, তাঁদের বেশির ভাগের ছিল অন্য রোগ, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা আর ডায়াবেটিস।
দ্বিতীয় যে পথচক্রের কথা আগে উল্লেখ করা হলো, সে বিষয়টা দেখে নেওয়া যাক।
দেখা যায় মেদ কোষ বা এডিপো সাইট থেকে নিঃসৃত হয় অতি সক্রিয় লেপটিন হরমোন। এটি সমন্বিত করে ইনফ্লামেটরি সাইটোকাইন আর এর প্রভাবে ইমিউন সিস্টেম উচ্ছলিয়ে ওঠে এবং গুরুতর প্রদাহ হয়। এমন ঘটনাকে বলে সাইটোকাইন ঝড়। নানা অঙ্গ হয় বিকল আর কখনো হয় তা মারাত্মক। এমন মন্তব্য গবেষক প্রদীপ কুমারের।
এ জন্য গবেষকদের পরামর্শ হলো, কোভিড সামলাতে সুষম খাদ্য, ব্যায়াম, ধূমপান ও মদ্যপান বন্ধ করা এবং স্ট্রেস সামাল দেওয়া। গবেষণায় দেখা গেছে, খাদ্যে পলিফেনল থাকলে এর বেশ স্বাস্থ্য সুবিধা আছে। সে জন্য বাদাম, সবজি, বীজ-এসব খেতে হবে। এতে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস পায়। বিজ্ঞানী মনহরণ বলেন, মাঝারি ব্যায়াম ইমিউন ব্যবস্থার উন্নতি ঘটায় আর হ্রাস করে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের প্রবণতা। শরীরচর্চা বাড়ালে আরেকটি কুশল কাজ হয়। তা হলো, রক্তকণিকা উৎপাদী কোষগুলো একত্র হয়ে অ্যান্টিবডি উৎপাদন হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম হিউমরাল ইমিউনিটি। এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। ইনটেনসিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞ ও ভারতের স্টেট কোভিড বিশেষজ্ঞ বোর্ডের সদস্য মহাঋষি দেশাই বলেন, স্থূল কোভিড রোগীদের গুরুতর বা ক্রিটিক্যাল পরিস্থিতি হওয়া এবং হাসপাতালবাস হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি।
আরেক জন ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ ডা. অমিত প্রজাপতি তাঁর অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে বলেন, দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালে ৫০-অনূর্ধ্ব বয়সের বেশির ভাগ মারা যাওয়া রোগীর ছিল স্থূলতা।
কেবল কোভিড নয়, স্থূল হলে যেকোনো রোগ থেকে সেরে উঠতে সময় লাগে বেশি।
আরেকটি বিষয় উল্লেখ্য। স্থূলতা ঘটায় আরও কিছু কোমরবিড অবস্থা। যেমন উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ লিপিড মান, রক্তে উচ্চ সুগার, ফুসফুস ও কিডনির কার্যকলাপ বিঘ্ন হওয়া।
আমরা জানি, রুগ্ণতা থাকলে কোভিড সংক্রমণের প্রবণতা বাড়ে।
দেহ স্থূল হলে প্রতিরোধ সেনারা হয় ম্রিয়মাণ, টি কোষ সাড়া দেয় কম। আরও ব্যাখ্যা করে বললে, টি কোষকে পূর্ণ রণসাজে সাজলে এ থেকে আসে সি ডি ৪টি ও টি এইচ২ কোষ। স্থূলতা থাকলে বি কোষের কাজ হয় ধীর। ফলে অ্যান্টিবডি উৎপাদন কমে যায়।
আরেকটি কথা, মেদ কোষ যদি বেশি থাকে, তাহলে এ থেকে নিঃসৃত হয় এডিপোকাইন, যা প্রভাব ফেলে লেপটিনের ওপর। এ থেকে হয় সাইটোকাইন ঝড়। এরপর নানা দেহযন্ত্র হয় বিকল।
তাই আমাদের শরীরে মেদ বেশি হলে, বিশেষ করে তলপেটে, সেটা কমাতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন জীবনশৈলীতে পরিবর্তন, সুষম ও পরিমিত আহার, ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয়, চর্বি, চিনি, নুন কম খাওয়া, ব্যায়াম, স্ট্রেস কমানো। প্রতিদিন শরীরচর্চা আর অলস নিষ্ক্রিয় জীবন ছেড়ে সক্রিয় জীবন।
লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
দেশে মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত রোগ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ নারী। এই রোগটি ধারাবাহিকভাবে বেড়েই চলছে। অথচ তা নিয়ে তেমন উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। সামাজিকভাবে সচেতনতা গড়ে তুলতে না পারলে রোগটির বিস্তার আরও ভয়াবহ হতে পারে।
২ ঘণ্টা আগেরোগে-শোকে মানুষকে প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু ওষুধ খেতে হয়। নিত্যপণ্যের এই ঊর্ধ্বগতির বাজারে যেখানে সাধারণ মানুষের তিনবেলা আহারের জোগান দেওয়াই কষ্টকর, সেখানে জীবন রক্ষার জন্য দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে ওধুষ কিনতে গিয়ে জীবন আরও ওষ্ঠাগত। দেশে এখন নিম্নআয়ের ৪০ শতাংশ মানুষের মোট আয়ের ২০ শতাংশ খরচ হচ্ছে ওষুধ কিনতেই।
২ দিন আগেদেশে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা না থাকায় ও ডাক্তারের ওপর আস্থা না থাকায় বিদেশে চিকিৎসা নিতে প্রতিবছর দেশের মানুষ ৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করছে। স্বাস্থ্যেসেবার উন্নয়ন না হলে এর পরিমাণ দিন দিন আরও বাড়বে।
২ দিন আগেআমাদের দেশে শীত উপভোগ্য মৌসুম। কিন্তু অনেকের ঠান্ডা, কাশি, জ্বর, গলাব্যথা, অ্যালার্জির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা যাদের আছে, তাদের এই মৌসুমে কষ্ট বেড়ে যায়।
২ দিন আগে