অনলাইন ডেস্ক
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে তৈরি হয়েছে করোনাভাইরাসের টিকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত টিকা হলো ফাইজার–বায়োএনটেক ও মডার্নার টিকা। দুটোতেই ব্যবহার করা হয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের আধুনিকতম প্রযুক্তি ‘এমআরএনএ ভ্যাকসিন’।
‘এমআরএনএ’ বা মেসেঞ্জার আরএনএ–কে এককথায় বলা যায় বার্তাবাহী রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড। কোষে প্রোটিন তৈরির বার্তা বহন করে বলেই এ নাম দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞানভিত্তিক সাময়িকী নেচার বলছে, মানবদেহে কোষের কার্যকারিতা বাড়াতে এই এমআরএনএ একজন বার্তাবাহকের মতোই কাজ করে।
মানুষের প্রতিটি কোষের নিউক্লিয়াসে জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া ট্রান্সক্রিপশনের মাধ্যমে ডিএনএ অনুসরণ করে তৈরি হয় আরএনএ বা রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড। সেখান থেকে ট্রান্সলেশন নামক প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় প্রোটিন। মূলত এসব প্রোটিনই জীবাণু বা ভাইরাসের কার্যক্রম রুখে দেয়। আর এসব প্রোটিনকে কার্যকর হিসেবে গড়ে তোলে মেসেঞ্জার রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড বা এমআরএনএ। এটি নিউক্লিয়াসে থাকা ডিএনএর কোডগুলো বহন করে প্রথমে সাইটোপ্লাজমে নিয়ে যায়। এরপর কোড অনুযায়ী একের পর এক অ্যামাইনো অ্যাসিড বসিয়ে তৈরি করে প্রোটিন। অনেকটা পুঁতির মালা, তসবি কিংবা লোহার শিকলের মতো। তাই একে চেইন বলা হয়। কোড বসানোর বার্তাটা এমআরএনএ–ই দেয়।
প্রচলিত ভ্যাকসিন কীভাবে কাজ করে
সব ধরনের ভাইরাসে প্রোটিনের আবরণে মোড়া ডিএনএ বা আরএনএ দিয়ে তৈরি জিনের একটি কোর থাকে। একটি নির্দিষ্ট সংক্রামক এজেন্টের জন্য ডিজাইন করা একটি ভ্যাকসিনের মূল লক্ষ্য, সেই ভাইরাসটি কেমন তা শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে (রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা) শেখানো। কিছু সাধারণ টিকায় সংশ্লিষ্ট রোগের দুর্বল ভাইরাস ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য টিকায় সংশ্লিষ্ট ভাইরাসের প্রোটিন আবরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ব্যবহার করা হয়। কোভিড–১৯–এর ক্ষেত্রে, স্পাইক প্রোটিন নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ রয়েছে। মানুষের ইমিউন সিস্টেম একবার এই স্পাইক প্রোটিন সম্পর্কে ধারণা পেয়ে গেলে পরবর্তীতে প্রকৃত ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করলে সেটির বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে।
পোলিও এবং হামের মতো রোগের টিকা সারা বিশ্বে কোটি কোটি মানুষকে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছে। সম্মিলিতভাবে টিকাগুলো সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় অগ্রগতির চেয়েও মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অভাবনীয় অবদান রেখেছে। কিন্তু ল্যাবরেটরিতে বিপুল পরিমাণে ভাইরাস উৎপাদন এবং পরে সেগুলোকে আবার দুর্বল করতে পারার গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করতে অনেক সময় লাগে। ফলে প্রথাগত পদ্ধতিতে টিকা তৈরি কোভিডের মতো মহামারী মোকাবিলার জন্য উপযুক্ত নয়। এ কারণেই নতুন প্রযুক্তির খোঁজে নেমেছেন বিজ্ঞানীরা।
এমআরএনও ভ্যাকসিনের প্রাথমিক পদক্ষেপ
প্রায় ৩০ বছর আগে, হাতেগোনা কয়েকজন বিজ্ঞানী ভ্যাকসিন তৈরি আরও সহজ করার বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন। দুর্বল ভাইরাস বা ভাইরাসের প্রোটিন আবরণের একটি অংশ শরীরে প্রবেশ করানোর পরিবর্তে, তাঁরা একটি বিকল্প পদ্ধতি বের করার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁরা ভেবেছিলেন, শরীরে ভাইরাসের একটি অংশ সরাসরি প্রবেশ করানোর পরিবর্তে, যদি শরীরের কোষগুলোকেই ভাইরাসের সেই প্রোটিন অংশ তৈরি দেওয়া হয় তাহলে কেমন হয়! এই পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট ভাইরাসকে চিনতে ইমিউন সিস্টেমকে প্রশিক্ষিত করা যায়। ফলে প্রকৃত ভাইরাস শরীরের প্রবেশ করানো ছাড়াই সেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে আগাম প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব হবে।
এই পদ্ধতির কয়েকটি ধাপ রয়েছে—প্রথমত, এমআরএনও তৈরি করতে হবে। দ্বিতীয়ত, শরীরে এমআরএনএ প্রবেশ করাতে হবে। এরপর সেটি শরীরের কোষে প্রবেশ করতে পারতে হবে।
একটি ভাইরাসের জিন মেসেঞ্জার আরএনএ (এমআরএনও) তৈরি করে। সেটি একাধিক প্রোটিন তৈরি করে যা এই আরএনএর আবরণ তৈরি করে। প্রতিটি এমআরএনএ প্রোটিন আবরণের একটি আলাদা অংশ তৈরি করে। একটি নির্দিষ্ট কাঠামোসহ একটি জিন নির্দিষ্ট কাঠামোর এমআরএনএ তৈরি করে। এই এমআরএনএ আবার নির্দিষ্ট কাঠামোর প্রোটিন তৈরি করে। এর মধ্যে একটি হলো—স্পাইক প্রোটিন।
নতুন প্রযুক্তিতে টিকা তৈরির প্রথম অংশ—এমআরএনএ তৈরি—অপেক্ষাকৃত সহজই ছিল। দ্বিতীয় অংশটি—নিরাপদে শরীরের কোষে সেই এমআরএনএ প্রবেশ করানো—এই পদ্ধতি বের করতে ৩০ বছর লেগে গেছে। শরীরে প্রবেশ করানো এমআরএনএকে রক্তে ইমিউন সিস্টেমের কোষগুলোতে প্রবেশ করতে হবে যা কাঙ্ক্ষিত প্রোটিনের অংশ তৈরি করতে শুরু করবে। এই প্রোটিনই ইমিউন সিস্টেমকে সেই ভাইরাস সম্পর্কে ধারণা দেবে, ফলে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে।
এমআরএনও ভ্যাকসিন তৈরিতে বাধা অতিক্রম
কোভিড কালে অবিশ্বাস্য গতিতে টিকা তৈরি হলেও এর আগে বিজ্ঞানীদের বেশ কয়েকটি বাধা অতিক্রম করতে হয়েছিল। প্রথমত, এমআরএনএকে মাইক্রোস্কোপিক (অতিক্ষুদ্র) ক্যাপসুলের ভেতর ঢুকানো যাতে এটি রক্তে রাসায়নিকের সংস্পর্শে গিয়ে ধ্বংস হয়ে না যায়। দ্বিতীয়ত, এমআরএনএকে পরিবর্তন করার কৌশল বের করতে হয়েছে যাতে, এটি ইমিউন সিস্টেম আক্রমণাত্মক প্রতিক্রিয়া তৈরি না করে। তৃতীয়ত, রক্তের মধ্যে প্রবাহিত এমআরএনএকে গ্রহণ করার জন্য ইমিউন সিস্টেমের কোষগুলোকে উৎসাহিত করা। অবশেষে, কোষগুলোকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন তৈরির জন্য উৎসাহিত করা, যাতে এটি ইমিউন সিস্টেমকে সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত করে।
কোভিড–১৯
৩০ বছরের শ্রমসাধ্য গবেষণা ফাইজার–বায়োএনটেক এবং মডার্নার মতো কোম্পানিকে এমআরএনএ ভ্যাকসিন প্রযুক্তি বাস্তবে কাজে লাগানোর দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। কোম্পানিগুলো তাত্ত্বিকভাবে এমন কৌশল উদ্ভাবন করেছে, যা যে কোনো সংক্রামক রোগের জন্য ভ্যাকসিন তৈরিতে ব্যবহার করা যাবে।
এরপর আসে কোভিড–১৯। এই রোগের জন্য দায়ী ভাইরাস সনাক্ত করার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চীনের বিজ্ঞানীরা স্পাইক প্রোটিন তৈরিকারী জিনসহ এর সমস্ত জিনের গঠন শনাক্ত করেছিলেন এবং এই তথ্য তাঁরা ইন্টারনেটে প্রকাশ করেছিলেন।
এর কয়েক মিনিটের মধ্যে ১০ হাজার মাইল দূরের বিজ্ঞানীরা একটি এমআরএনও ভ্যাকসিনের নকশা নিয়ে কাজ শুরু করেন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তাঁরা পশু এবং পরে মানুষের শরীরে এটি পরীক্ষা করার জন্য যথেষ্ট ভ্যাকসিন তৈরি করে ফেলেন।
সার্স–কোভ–২ ভাইরাস আবিষ্কারের মাত্র ১১ মাস পর যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো নিশ্চিত করে, কোভিড–১৯–এর জন্য একটি কার্যকর এবং নিরাপদ এমআরএনএ ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে। এর আগে, চার বছরের কম সময়ে কোনও নতুন ভ্যাকসিন তৈরি সম্ভব হয়নি।
এমআরএনএ ভ্যাকসিন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে অবদানের জন্য হাঙ্গেরি ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই বিজ্ঞানী যৌথভাবে এবারের চিকিৎসাবিজ্ঞানের নোবেল জিতে নিয়েছেন। বিজয়ী হিসেবে কাতালিন ক্যারিকো ও ড্রিউ ওয়েইসম্যানের নাম আজ সোমবার বিকেলে ঘোষণা করে নোবেল কমিটি।
১৯৯০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটিতে একসঙ্গে কাজ করতেন কাতালিন ক্যারিকো ও ড্রিউ ওয়েইসম্যান। ১৯৫৫ সালে হাঙ্গেরিতে জন্মগ্রহণ করেন কাতালিন। ২০২১ সাল থেকে তিনি সিজড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। পেনসিলভানিয়ার সঙ্গেও যুক্ত আছেন। আর ওয়েইসম্যান ১৯৫৯ সালে আমেরিকার ম্যাসচুয়েটসে জন্ম নেন। তিনি আমেরিকার পেন ইনস্টিটিউট ফর আরএনএ ইনোভেশন কাজ করেন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে তৈরি হয়েছে করোনাভাইরাসের টিকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত টিকা হলো ফাইজার–বায়োএনটেক ও মডার্নার টিকা। দুটোতেই ব্যবহার করা হয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের আধুনিকতম প্রযুক্তি ‘এমআরএনএ ভ্যাকসিন’।
‘এমআরএনএ’ বা মেসেঞ্জার আরএনএ–কে এককথায় বলা যায় বার্তাবাহী রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড। কোষে প্রোটিন তৈরির বার্তা বহন করে বলেই এ নাম দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞানভিত্তিক সাময়িকী নেচার বলছে, মানবদেহে কোষের কার্যকারিতা বাড়াতে এই এমআরএনএ একজন বার্তাবাহকের মতোই কাজ করে।
মানুষের প্রতিটি কোষের নিউক্লিয়াসে জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া ট্রান্সক্রিপশনের মাধ্যমে ডিএনএ অনুসরণ করে তৈরি হয় আরএনএ বা রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড। সেখান থেকে ট্রান্সলেশন নামক প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় প্রোটিন। মূলত এসব প্রোটিনই জীবাণু বা ভাইরাসের কার্যক্রম রুখে দেয়। আর এসব প্রোটিনকে কার্যকর হিসেবে গড়ে তোলে মেসেঞ্জার রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড বা এমআরএনএ। এটি নিউক্লিয়াসে থাকা ডিএনএর কোডগুলো বহন করে প্রথমে সাইটোপ্লাজমে নিয়ে যায়। এরপর কোড অনুযায়ী একের পর এক অ্যামাইনো অ্যাসিড বসিয়ে তৈরি করে প্রোটিন। অনেকটা পুঁতির মালা, তসবি কিংবা লোহার শিকলের মতো। তাই একে চেইন বলা হয়। কোড বসানোর বার্তাটা এমআরএনএ–ই দেয়।
প্রচলিত ভ্যাকসিন কীভাবে কাজ করে
সব ধরনের ভাইরাসে প্রোটিনের আবরণে মোড়া ডিএনএ বা আরএনএ দিয়ে তৈরি জিনের একটি কোর থাকে। একটি নির্দিষ্ট সংক্রামক এজেন্টের জন্য ডিজাইন করা একটি ভ্যাকসিনের মূল লক্ষ্য, সেই ভাইরাসটি কেমন তা শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে (রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা) শেখানো। কিছু সাধারণ টিকায় সংশ্লিষ্ট রোগের দুর্বল ভাইরাস ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য টিকায় সংশ্লিষ্ট ভাইরাসের প্রোটিন আবরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ব্যবহার করা হয়। কোভিড–১৯–এর ক্ষেত্রে, স্পাইক প্রোটিন নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ রয়েছে। মানুষের ইমিউন সিস্টেম একবার এই স্পাইক প্রোটিন সম্পর্কে ধারণা পেয়ে গেলে পরবর্তীতে প্রকৃত ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করলে সেটির বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে।
পোলিও এবং হামের মতো রোগের টিকা সারা বিশ্বে কোটি কোটি মানুষকে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছে। সম্মিলিতভাবে টিকাগুলো সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় অগ্রগতির চেয়েও মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অভাবনীয় অবদান রেখেছে। কিন্তু ল্যাবরেটরিতে বিপুল পরিমাণে ভাইরাস উৎপাদন এবং পরে সেগুলোকে আবার দুর্বল করতে পারার গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করতে অনেক সময় লাগে। ফলে প্রথাগত পদ্ধতিতে টিকা তৈরি কোভিডের মতো মহামারী মোকাবিলার জন্য উপযুক্ত নয়। এ কারণেই নতুন প্রযুক্তির খোঁজে নেমেছেন বিজ্ঞানীরা।
এমআরএনও ভ্যাকসিনের প্রাথমিক পদক্ষেপ
প্রায় ৩০ বছর আগে, হাতেগোনা কয়েকজন বিজ্ঞানী ভ্যাকসিন তৈরি আরও সহজ করার বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন। দুর্বল ভাইরাস বা ভাইরাসের প্রোটিন আবরণের একটি অংশ শরীরে প্রবেশ করানোর পরিবর্তে, তাঁরা একটি বিকল্প পদ্ধতি বের করার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁরা ভেবেছিলেন, শরীরে ভাইরাসের একটি অংশ সরাসরি প্রবেশ করানোর পরিবর্তে, যদি শরীরের কোষগুলোকেই ভাইরাসের সেই প্রোটিন অংশ তৈরি দেওয়া হয় তাহলে কেমন হয়! এই পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট ভাইরাসকে চিনতে ইমিউন সিস্টেমকে প্রশিক্ষিত করা যায়। ফলে প্রকৃত ভাইরাস শরীরের প্রবেশ করানো ছাড়াই সেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে আগাম প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব হবে।
এই পদ্ধতির কয়েকটি ধাপ রয়েছে—প্রথমত, এমআরএনও তৈরি করতে হবে। দ্বিতীয়ত, শরীরে এমআরএনএ প্রবেশ করাতে হবে। এরপর সেটি শরীরের কোষে প্রবেশ করতে পারতে হবে।
একটি ভাইরাসের জিন মেসেঞ্জার আরএনএ (এমআরএনও) তৈরি করে। সেটি একাধিক প্রোটিন তৈরি করে যা এই আরএনএর আবরণ তৈরি করে। প্রতিটি এমআরএনএ প্রোটিন আবরণের একটি আলাদা অংশ তৈরি করে। একটি নির্দিষ্ট কাঠামোসহ একটি জিন নির্দিষ্ট কাঠামোর এমআরএনএ তৈরি করে। এই এমআরএনএ আবার নির্দিষ্ট কাঠামোর প্রোটিন তৈরি করে। এর মধ্যে একটি হলো—স্পাইক প্রোটিন।
নতুন প্রযুক্তিতে টিকা তৈরির প্রথম অংশ—এমআরএনএ তৈরি—অপেক্ষাকৃত সহজই ছিল। দ্বিতীয় অংশটি—নিরাপদে শরীরের কোষে সেই এমআরএনএ প্রবেশ করানো—এই পদ্ধতি বের করতে ৩০ বছর লেগে গেছে। শরীরে প্রবেশ করানো এমআরএনএকে রক্তে ইমিউন সিস্টেমের কোষগুলোতে প্রবেশ করতে হবে যা কাঙ্ক্ষিত প্রোটিনের অংশ তৈরি করতে শুরু করবে। এই প্রোটিনই ইমিউন সিস্টেমকে সেই ভাইরাস সম্পর্কে ধারণা দেবে, ফলে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে।
এমআরএনও ভ্যাকসিন তৈরিতে বাধা অতিক্রম
কোভিড কালে অবিশ্বাস্য গতিতে টিকা তৈরি হলেও এর আগে বিজ্ঞানীদের বেশ কয়েকটি বাধা অতিক্রম করতে হয়েছিল। প্রথমত, এমআরএনএকে মাইক্রোস্কোপিক (অতিক্ষুদ্র) ক্যাপসুলের ভেতর ঢুকানো যাতে এটি রক্তে রাসায়নিকের সংস্পর্শে গিয়ে ধ্বংস হয়ে না যায়। দ্বিতীয়ত, এমআরএনএকে পরিবর্তন করার কৌশল বের করতে হয়েছে যাতে, এটি ইমিউন সিস্টেম আক্রমণাত্মক প্রতিক্রিয়া তৈরি না করে। তৃতীয়ত, রক্তের মধ্যে প্রবাহিত এমআরএনএকে গ্রহণ করার জন্য ইমিউন সিস্টেমের কোষগুলোকে উৎসাহিত করা। অবশেষে, কোষগুলোকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন তৈরির জন্য উৎসাহিত করা, যাতে এটি ইমিউন সিস্টেমকে সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত করে।
কোভিড–১৯
৩০ বছরের শ্রমসাধ্য গবেষণা ফাইজার–বায়োএনটেক এবং মডার্নার মতো কোম্পানিকে এমআরএনএ ভ্যাকসিন প্রযুক্তি বাস্তবে কাজে লাগানোর দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। কোম্পানিগুলো তাত্ত্বিকভাবে এমন কৌশল উদ্ভাবন করেছে, যা যে কোনো সংক্রামক রোগের জন্য ভ্যাকসিন তৈরিতে ব্যবহার করা যাবে।
এরপর আসে কোভিড–১৯। এই রোগের জন্য দায়ী ভাইরাস সনাক্ত করার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চীনের বিজ্ঞানীরা স্পাইক প্রোটিন তৈরিকারী জিনসহ এর সমস্ত জিনের গঠন শনাক্ত করেছিলেন এবং এই তথ্য তাঁরা ইন্টারনেটে প্রকাশ করেছিলেন।
এর কয়েক মিনিটের মধ্যে ১০ হাজার মাইল দূরের বিজ্ঞানীরা একটি এমআরএনও ভ্যাকসিনের নকশা নিয়ে কাজ শুরু করেন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তাঁরা পশু এবং পরে মানুষের শরীরে এটি পরীক্ষা করার জন্য যথেষ্ট ভ্যাকসিন তৈরি করে ফেলেন।
সার্স–কোভ–২ ভাইরাস আবিষ্কারের মাত্র ১১ মাস পর যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো নিশ্চিত করে, কোভিড–১৯–এর জন্য একটি কার্যকর এবং নিরাপদ এমআরএনএ ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে। এর আগে, চার বছরের কম সময়ে কোনও নতুন ভ্যাকসিন তৈরি সম্ভব হয়নি।
এমআরএনএ ভ্যাকসিন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে অবদানের জন্য হাঙ্গেরি ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই বিজ্ঞানী যৌথভাবে এবারের চিকিৎসাবিজ্ঞানের নোবেল জিতে নিয়েছেন। বিজয়ী হিসেবে কাতালিন ক্যারিকো ও ড্রিউ ওয়েইসম্যানের নাম আজ সোমবার বিকেলে ঘোষণা করে নোবেল কমিটি।
১৯৯০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটিতে একসঙ্গে কাজ করতেন কাতালিন ক্যারিকো ও ড্রিউ ওয়েইসম্যান। ১৯৫৫ সালে হাঙ্গেরিতে জন্মগ্রহণ করেন কাতালিন। ২০২১ সাল থেকে তিনি সিজড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। পেনসিলভানিয়ার সঙ্গেও যুক্ত আছেন। আর ওয়েইসম্যান ১৯৫৯ সালে আমেরিকার ম্যাসচুয়েটসে জন্ম নেন। তিনি আমেরিকার পেন ইনস্টিটিউট ফর আরএনএ ইনোভেশন কাজ করেন।
সুস্থভাবে জীবনযাপন করার জন্য দেহের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে হয়। সাধারণত পুষ্টির কথা ভাবলে মনে করি সবটুকুই আমার খাদ্য থেকেই অর্জন করি। তবে এই ধারণাটি ভুল বললেন বিজ্ঞানীরা। নতুন গবেষণায় বলা যায়, মানুষ কিছু পুষ্টি বায়ু থেকেও শোষণ করতে পারে!
৩ দিন আগেবিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষকে প্রভাবিত করে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন। হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনির ক্ষতি এবং দৃষ্টি শক্তিসহ বেশ কিছু গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার প্রধান ঝুঁকির কারণ এটি। এই ধরনের ঝুঁকি কমানোর জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা ও বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ
৪ দিন আগেডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ১ হাজার ৩৮৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরে আজ রোববার পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলো ৭৯ হাজার ৯৮৪ জন। মারা গেছে আরও আটজন।
৪ দিন আগেএমন সময়ে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হলো, যখন ইংল্যান্ডে একটি লক্ষ্যভিত্তিক ফুসফুস স্বাস্থ্য পরীক্ষা কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এই কর্মসূচির লক্ষ্য ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে সম্ভাব্য ৪০ শতাংশ ব্যক্তিকে স্ক্রিনিং করা এবং ২০৩০ সালের মধ্যে সবাইকে এর আওতায় আনা।
৬ দিন আগে