Ajker Patrika

ডেঙ্গুর হটস্পট বাংলাদেশে টিকা আসবে কবে? 

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২৩, ২১: ১২
ডেঙ্গুর হটস্পট বাংলাদেশে টিকা আসবে কবে? 

বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ও মৃত্যু সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। জাতীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) তথ্য অনুসারে, চলতি বছর শুক্রবার (৪ আগস্ট) পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট ২৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়ে ৬১ হাজার ৪৭৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। 

সেপ্টেম্বরে বর্ষা মৌসুম শেষ না হওয়া পর্যন্ত সামনের দুই মাস এই রোগের বিস্তার আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক থাকতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। এর আগে গত বছর দেশে ডেঙ্গুতে ৬২ হাজার ৪২৩ জন আক্রান্ত হন এবং মারা যান ২৮১ জন। 

এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, ডেঙ্গুর হটস্পট বাংলাদেশে কেন রোগটির টিকা এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। ৩০–এর বেশি ওষুধ কোম্পানির নেটওয়ার্ক ফার্মাসিউটিক্যাল টেকনোলজিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাপানের তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যালসের ডেঙ্গুর টেট্রাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন কিউডেঙ্গা (Qdenga) সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে অনুমোদন হয়েছে। 

বাংলাদেশে এটি কেন অনুমোদন পাচ্ছে না—এর উত্তর এক কথায় দেওয়া সম্ভব নয়। 

২০২২ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ সরকারের সামনে কিউডেঙ্গার অনুমোদন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। ওই সময় ডিজিএইচএসের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আহমেদুল কবির ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছিলেন, জাতীয় টিকাদান পরিকল্পনায় (এনআইপি) যেকোনো নতুন টিকা চালু করা একটি দীর্ঘ এবং ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। আর এখনো টিকার বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) কোনো নির্দেশনা দেয়নি। তবে টিকাটির কার্যকারিতা ও অন্যান্য দেশে কীভাবে কাজ করে তার ওপর সরকার নজর রাখবে। 

২০২২ সালের চেয়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব এ বছর বাড়লেও সরকার এখনো টিকার বিষয়ে সক্রিয়ভাবে ভাবছে এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। 

অবশ্য বাংলাদেশে নতুন কোনো টিকার অনুমোদন পেতে দীর্ঘসূত্রতার কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে দুটি কারণ বিশেষভাবে উল্লেখ করেছে ফার্মাসিউটিক্যাল টেকনোলজি। 

প্রথমত, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) আওতায় বাংলাদেশ সরকার ডিপথেরিয়া, পারটুসিস, টিটেনাস, হেপাটাইটিস বি, হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি (Hib)–সহ অন্যান্য রোগের টিকা বিনা মূল্যের দিয়ে থাকে। 

২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশনে (এনসিবিআই) প্রকাশিত একটি প্রাথমিক গবেষণায় দেখা যায়, ২০০৯ সালে ইপিআইতে পেন্টাভ্যালেন্ট হিব ভ্যাকসিনের সংযোজনের সময় সিদ্ধান্ত নিতে দীর্ঘসূত্রতা বড় বাধা ছিল। এই প্রক্রিয়ার নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে বিভিন্ন খাতের কর্মকর্তারা জড়িত। এসব প্রক্রিয়ায় মধ্যে ছিল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, অর্থ, গবেষক, পেশাদার সমিতির প্রতিনিধি, জাতিসংঘের টিকা সহায়তা সংস্থা গাভিসহ (GAVI) অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী এবং ইপিআইয়ের বিভিন্ন কমিটির সদস্যরা। 

অন্যান্য কারণগুলোও বাংলাদেশে টিকা চালুর সিদ্ধান্তকে বিলম্বিত করতে পারে। এসবের মধ্য রয়েছে, রোগের প্রকৃতি বুঝতে ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে দীর্ঘ সময় নেওয়া, নির্দিষ্ট কিছু রোগের প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে সম্পর্কিত রাজনৈতিক সমস্যা, টিকা প্রবর্তনের সময়সূচিতে ঘন ঘন পরিবর্তন এবং বাজেট বরাদ্দে বিলম্ব। 

দ্বিতীয় কারণ হতে পারে, ডেঙ্গুর টিকার প্রতি সরকারের সীমাবদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি। বিশেষভাবে ফ্রান্সের সানোফি পাস্তুরের তৈরি প্রথম ডেঙ্গু টিকার স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিয়ে বিশ্বব্যাপী চলা বিতর্ক। ২০১৫ সাল থেকে এই টিকা বিশ্বের বেশ কয়েকটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পেয়েছে, যার মধ্যে ফিলিপাইন অন্যতম। দেশটিতে ২০১৭ সালে জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিতে টিকাটি যুক্ত করা হয়। কিন্তু সানোফি এই টিকার ঝুঁকির বিষয়টি প্রকাশ করলে ২০১৯ সালে ফিলিপাইনে এটি নিষিদ্ধ করা হয়। সানোফি জানায়, আগে সংক্রমিত হয়নি এমন ব্যক্তি এই টিকা নেওয়ার পর কখনো ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে মারাত্মক জ্বরের উচ্চ ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। 

যাইহোক, তাকেদার কিউডেঙ্গা বর্তমানে যুক্তরাজ্যের মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথ কেয়ার প্রোডাক্ট রেগুলেটরি এজেন্সি (এমএইচআরএ), ইএমএ, ব্রাজিল ও ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে অনুমোদন পেয়েছে। এ পর্যন্ত দেশগুলোতে টিকাটি সফল হয়েছে বলেই দাবি করা হচ্ছে।

ডেঙ্গু এখন শুধু বাংলাদেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। অনেক নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশেও বর্তমানে এটি বড় সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে। এর মধ্য সাব-সাহারান আফ্রিকার দেশগুলো উল্লেখযোগ্য। এসব দেশে গত তিন বছরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব উদ্বেগজনক। 

সুদানের উত্তরাঞ্চলের মতো যুদ্ধ-সংঘাতের দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আরও উদ্বেগের। কারণ যুদ্ধের কারণে দেশটিতে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে। দেশটির ওই অঞ্চল ডেঙ্গুর হটস্পট হয়ে উঠতে পারে যেকোনো সময়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত