ডা. গুলজার হোসেন
প্রতি বছরের মতো এ বছরও পালিত হচ্ছে বিশ্ব লিম্ফোমা সচেতনতা দিবস। ২০০৪ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘আমরা অপেক্ষা করতে পারি না’। পুরো পৃথিবীতে প্রতি বছর ৭ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ লিম্ফোমায় আক্রান্ত হন। অধিকাংশই ধরা পড়েন রোগ কিছুটা ছড়িয়ে যাওয়ার পর। অথচ শুরুতে ধরা পড়লে লিম্ফোমা নিরাময় সহজ।
চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার অনীহা, চিকিৎসা সুযোগের অপ্রতুলতা, সচেতনতার অভাব ইত্যাদি কারণে প্রাথমিক রোগ লক্ষণ দেখা দেওয়ার পরও আমরা অপেক্ষা করি। এই অপেক্ষাই কাল হয়ে দাঁড়ায় একপর্যায়ে। তাই এবারের প্রতিপাদ্য ‘উই ক্যান নট ওয়েট’ বা ‘আমরা অপেক্ষা করতে পারি না’।
লিম্ফোমা নিয়ে কিছু বলার আগে জানা দরকার লিম্ফোমা কী।
লিম্ফোমা হলো রক্তের বিশেষ এক ধরনের ক্যানসার। রক্তের প্রধান উপাদান দুটি। রক্তরস ও রক্তকোষ। রক্তের বিভিন্ন কোষীয় উপাদানের একটি হলো লিম্ফোসাইট, যা মূলত এক প্রকার শ্বেত রক্তকণিকা। এর প্রধান কাজ হচ্ছে রোগ প্রতিরোধ করা।
বিভিন্ন কারণে এই লিম্ফোসাইটের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হলে দেখা দেয় লিম্ফোমা নামক ক্যানসার। লিম্ফোসাইট যেসব অঙ্গে তৈরি ও বৃদ্ধি হয়, সেসব অঙ্গের মধ্যে রয়েছে লিম্ফনোড, স্প্লিন (প্লীহা), টনসিল ইত্যাদি।
শরীরের বিভিন্ন অংশে লিম্ফনোডগুলো ছড়িয়ে আছে। এরা দেহের ভেতরে থাকে। সুস্থ অবস্থায় এদের সাধারণত বোঝা যায় না। কিন্তু কোনো কারণে আকার বড় হলে তা বোঝা যায়। তবে গলার দুদিকে, ফুসফুসের দুই পাশে ও পেটের ভেতরে এর উপস্থিতি বেশি বোঝা যায়।
লিম্ফোমার লক্ষণ
শরীরের কোনো এলাকায় লিম্ফনোড বা অন্য কোনো লিম্ফেটিক অঙ্গ (যেমন প্লীহা) অস্বাভাবিক বড় হতে থাকে। ফুলে যাওয়া লিম্ফনোডগুলো রাবারের মতো নরম ও ব্যথাহীন হয়। এর সঙ্গে দীর্ঘদিনের জ্বর, ওজন কমে যাওয়া ও রাতের বেলায় প্রচুর ঘাম হয়। লিম্ফোমার জ্বর হয় সাধারণত অনিয়মিত ধরনের। আসে আবার চলে যায়। জ্বরের মাত্রা কখনো খুব বেশি হয়, কখনো সামান্য। এই লক্ষণগুলোর অধিকাংশই যক্ষ্মার সঙ্গে মিলে যায়, যা বিশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হয়।
লিম্ফোমার ধরন
লিম্ফোমা প্রধানত দুই প্রকার। হজকিনস লিম্ফোমা ও নন হজকিনস লিম্ফোমা। এদের ভেতরেও আবার নানা সূক্ষ্ম রকমফের আছে। এদের উভয়ের ধরন ও চিকিৎসায় বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। লিম্ফোমা কেন হয়, তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। অন্যান্য ক্যানসারের মতো লিম্ফোমার কারণও নানাবিধ এবং অনেকটাই অজ্ঞাত। তবে কিছু কিছু জীবাণু, যেমন হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়া, হেপাটাইটিস সি ভাইরাস, এইডস, ইবস্টেইন বার ভাইরাস ইত্যাদির সঙ্গে লিম্ফোমার যোগসূত্র প্রমাণিত হয়েছে। এর সঙ্গে রেডিয়েশনের প্রভাব এবং অন্যান্য রোগের সঙ্গে পরোক্ষ সম্পর্কও কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
লিম্ফোমা রোগ নিশ্চিত হতে হলে কিছু বিশেষ ধরনের পরীক্ষা করতে হয়। আক্রান্ত লিম্ফনোড থেকে টিস্যু কেটে নিয়ে বায়োপসি করাই হলো লিম্ফোমার প্রধান পরীক্ষা। এর চেয়ে উন্নত রোগ নির্ণয় পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে ইমিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রি পরীক্ষা, যা বাংলাদেশেই এখন সম্ভব। রোগের স্টেজ বোঝার জন্য এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, সিটিস্ক্যান, বোনম্যারো পরীক্ষা, পেট সিটিস্ক্যান ইত্যাদি করা হয়। এ ছাড়া সার্বিক অবস্থা বোঝার জন্য রক্তের রুটিন পরীক্ষার পাশাপাশি অন্যান্য কিছু পরীক্ষাও করা হয়।
চিকিৎসা
লিম্ফোমার মূল চিকিৎসা কেমোথেরাপি। স্টেজিংয়ের ওপর নির্ভর করে এবং আক্রান্ত লিম্ফনোডের আকার ও অবস্থান বিবেচনা করে রেডিওথেরাপিও দেওয়া হয়। কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপিতে ভালো না হলে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করার প্রয়োজন হয়।
অধিকাংশ লিম্ফোমা রোগী ভালো হয়ে যায়। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় হলে ৭০-৯০ ভাগ লিম্ফোমা ভালো করা সম্ভব। বাংলাদেশেই লিম্ফোমার চিকিৎসা হয়। চিকিৎসা তুলনামূলক কম ব্যয়বহুল। কেমোথেরাপির অধিকাংশ ওষুধ বাংলাদেশেই তৈরি হয়। লিম্ফোমার অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনও বাংলাদেশে বেশ কয়েক বছর ধরে সফলতার সঙ্গে চলছে।
লেখক: রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা
প্রতি বছরের মতো এ বছরও পালিত হচ্ছে বিশ্ব লিম্ফোমা সচেতনতা দিবস। ২০০৪ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘আমরা অপেক্ষা করতে পারি না’। পুরো পৃথিবীতে প্রতি বছর ৭ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ লিম্ফোমায় আক্রান্ত হন। অধিকাংশই ধরা পড়েন রোগ কিছুটা ছড়িয়ে যাওয়ার পর। অথচ শুরুতে ধরা পড়লে লিম্ফোমা নিরাময় সহজ।
চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার অনীহা, চিকিৎসা সুযোগের অপ্রতুলতা, সচেতনতার অভাব ইত্যাদি কারণে প্রাথমিক রোগ লক্ষণ দেখা দেওয়ার পরও আমরা অপেক্ষা করি। এই অপেক্ষাই কাল হয়ে দাঁড়ায় একপর্যায়ে। তাই এবারের প্রতিপাদ্য ‘উই ক্যান নট ওয়েট’ বা ‘আমরা অপেক্ষা করতে পারি না’।
লিম্ফোমা নিয়ে কিছু বলার আগে জানা দরকার লিম্ফোমা কী।
লিম্ফোমা হলো রক্তের বিশেষ এক ধরনের ক্যানসার। রক্তের প্রধান উপাদান দুটি। রক্তরস ও রক্তকোষ। রক্তের বিভিন্ন কোষীয় উপাদানের একটি হলো লিম্ফোসাইট, যা মূলত এক প্রকার শ্বেত রক্তকণিকা। এর প্রধান কাজ হচ্ছে রোগ প্রতিরোধ করা।
বিভিন্ন কারণে এই লিম্ফোসাইটের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হলে দেখা দেয় লিম্ফোমা নামক ক্যানসার। লিম্ফোসাইট যেসব অঙ্গে তৈরি ও বৃদ্ধি হয়, সেসব অঙ্গের মধ্যে রয়েছে লিম্ফনোড, স্প্লিন (প্লীহা), টনসিল ইত্যাদি।
শরীরের বিভিন্ন অংশে লিম্ফনোডগুলো ছড়িয়ে আছে। এরা দেহের ভেতরে থাকে। সুস্থ অবস্থায় এদের সাধারণত বোঝা যায় না। কিন্তু কোনো কারণে আকার বড় হলে তা বোঝা যায়। তবে গলার দুদিকে, ফুসফুসের দুই পাশে ও পেটের ভেতরে এর উপস্থিতি বেশি বোঝা যায়।
লিম্ফোমার লক্ষণ
শরীরের কোনো এলাকায় লিম্ফনোড বা অন্য কোনো লিম্ফেটিক অঙ্গ (যেমন প্লীহা) অস্বাভাবিক বড় হতে থাকে। ফুলে যাওয়া লিম্ফনোডগুলো রাবারের মতো নরম ও ব্যথাহীন হয়। এর সঙ্গে দীর্ঘদিনের জ্বর, ওজন কমে যাওয়া ও রাতের বেলায় প্রচুর ঘাম হয়। লিম্ফোমার জ্বর হয় সাধারণত অনিয়মিত ধরনের। আসে আবার চলে যায়। জ্বরের মাত্রা কখনো খুব বেশি হয়, কখনো সামান্য। এই লক্ষণগুলোর অধিকাংশই যক্ষ্মার সঙ্গে মিলে যায়, যা বিশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হয়।
লিম্ফোমার ধরন
লিম্ফোমা প্রধানত দুই প্রকার। হজকিনস লিম্ফোমা ও নন হজকিনস লিম্ফোমা। এদের ভেতরেও আবার নানা সূক্ষ্ম রকমফের আছে। এদের উভয়ের ধরন ও চিকিৎসায় বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। লিম্ফোমা কেন হয়, তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। অন্যান্য ক্যানসারের মতো লিম্ফোমার কারণও নানাবিধ এবং অনেকটাই অজ্ঞাত। তবে কিছু কিছু জীবাণু, যেমন হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়া, হেপাটাইটিস সি ভাইরাস, এইডস, ইবস্টেইন বার ভাইরাস ইত্যাদির সঙ্গে লিম্ফোমার যোগসূত্র প্রমাণিত হয়েছে। এর সঙ্গে রেডিয়েশনের প্রভাব এবং অন্যান্য রোগের সঙ্গে পরোক্ষ সম্পর্কও কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
লিম্ফোমা রোগ নিশ্চিত হতে হলে কিছু বিশেষ ধরনের পরীক্ষা করতে হয়। আক্রান্ত লিম্ফনোড থেকে টিস্যু কেটে নিয়ে বায়োপসি করাই হলো লিম্ফোমার প্রধান পরীক্ষা। এর চেয়ে উন্নত রোগ নির্ণয় পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে ইমিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রি পরীক্ষা, যা বাংলাদেশেই এখন সম্ভব। রোগের স্টেজ বোঝার জন্য এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, সিটিস্ক্যান, বোনম্যারো পরীক্ষা, পেট সিটিস্ক্যান ইত্যাদি করা হয়। এ ছাড়া সার্বিক অবস্থা বোঝার জন্য রক্তের রুটিন পরীক্ষার পাশাপাশি অন্যান্য কিছু পরীক্ষাও করা হয়।
চিকিৎসা
লিম্ফোমার মূল চিকিৎসা কেমোথেরাপি। স্টেজিংয়ের ওপর নির্ভর করে এবং আক্রান্ত লিম্ফনোডের আকার ও অবস্থান বিবেচনা করে রেডিওথেরাপিও দেওয়া হয়। কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপিতে ভালো না হলে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করার প্রয়োজন হয়।
অধিকাংশ লিম্ফোমা রোগী ভালো হয়ে যায়। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় হলে ৭০-৯০ ভাগ লিম্ফোমা ভালো করা সম্ভব। বাংলাদেশেই লিম্ফোমার চিকিৎসা হয়। চিকিৎসা তুলনামূলক কম ব্যয়বহুল। কেমোথেরাপির অধিকাংশ ওষুধ বাংলাদেশেই তৈরি হয়। লিম্ফোমার অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনও বাংলাদেশে বেশ কয়েক বছর ধরে সফলতার সঙ্গে চলছে।
লেখক: রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা
দেশে মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত রোগ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ নারী। এই রোগটি ধারাবাহিকভাবে বেড়েই চলছে। অথচ তা নিয়ে তেমন উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। সামাজিকভাবে সচেতনতা গড়ে তুলতে না পারলে রোগটির বিস্তার আরও ভয়াবহ হতে পারে।
৭ ঘণ্টা আগেরোগে-শোকে মানুষকে প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু ওষুধ খেতে হয়। নিত্যপণ্যের এই ঊর্ধ্বগতির বাজারে যেখানে সাধারণ মানুষের তিনবেলা আহারের জোগান দেওয়াই কষ্টকর, সেখানে জীবন রক্ষার জন্য দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে ওধুষ কিনতে গিয়ে জীবন আরও ওষ্ঠাগত। দেশে এখন নিম্নআয়ের ৪০ শতাংশ মানুষের মোট আয়ের ২০ শতাংশ খরচ হচ্ছে ওষুধ কিনতেই।
২ দিন আগেদেশে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা না থাকায় ও ডাক্তারের ওপর আস্থা না থাকায় বিদেশে চিকিৎসা নিতে প্রতিবছর দেশের মানুষ ৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করছে। স্বাস্থ্যেসেবার উন্নয়ন না হলে এর পরিমাণ দিন দিন আরও বাড়বে।
২ দিন আগেআমাদের দেশে শীত উপভোগ্য মৌসুম। কিন্তু অনেকের ঠান্ডা, কাশি, জ্বর, গলাব্যথা, অ্যালার্জির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা যাদের আছে, তাদের এই মৌসুমে কষ্ট বেড়ে যায়।
৩ দিন আগে