দেশে কিশোরী ও মধ্যবয়সী নারীদের ‘ইচ্ছাকৃত গর্ভপাতে’ কন্যাশিশুর ভ্রূণ বেশি: বিবিএসের

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image
প্রতীকী ছবি

দেশে ১০ থেকে ১৪ বছর, ৩৫–৩৯ বছর এবং ৪৫–৪৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে ইচ্ছাকৃত গর্ভপাত করা ভ্রূণের মধ্যে কন্যাশিশুর সংখ্যাই বেশি। অর্থাৎ কমবয়সী এবং বেশি বয়সী নারীদের মধ্যে এই প্রবণতা দেখা গেছে। তবে মোট ইচ্ছাকৃত গর্ভপাতের ক্ষেত্রে ছেলেশিশুর ভ্রূণই বেশি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস (এসভিআরএস) ২০২৩’ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গত ২৬ আগস্ট।

বিবিএসের প্রতিবেদনে নারীদের মাসিক নিয়মিতকরণ (এমআর) প্রক্রিয়াকে ‘ইচ্ছাকৃত গর্ভপাত’ ও গর্ভাবস্থার ২৮ সপ্তাহের আগে গর্ভপাতকে ‘অনিচ্ছাকৃত গর্ভপাত’ বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অর্ধেকের বেশি ইচ্ছেকৃত গর্ভপাতের অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন নারী (৫৫.১৯ %) ভ্রূণের লিঙ্গ কী ছিল তা জানেন না বলে উত্তর দিয়েছেন। নারীদের বড় অংশের ক্ষেত্রে (১৫-৪৪ বছর বয়স পর্যন্ত), গর্ভপাতকৃত বেশির ভাগ ভ্রূণ ছিল ছেলে। অন্যদিকে, ১০-১৪ বছর ও ৪৫-৪৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে গর্ভপাতকৃত বেশির ভাগ ভ্রূণ ছিল মেয়ে।

এ ছাড়া, গর্ভপাতকৃত শিশুর লিঙ্গের ক্ষেত্রে ৪৫-৪৯ বছর বয়সী নারীদের থেকে উত্তরদানে বিরত থাকার হার সবচেয়ে বেশি (৩০.৬৫ %)। ইচ্ছাকৃত গর্ভপাত করা ১০-১৪ বছর বয়সী কিশোরীদের ক্ষেত্রে গর্ভপাতকৃত ভ্রূণের লিঙ্গের অনুপাতে উল্লেখযোগ্য ব্যবধান পরিলক্ষিত হয়েছে: ছেলে ভ্রূণ ৮.৬৪ শতাংশ বনাম মেয়ে ভ্রূণ ১৪.৪৫ শতাংশ।

অবশ্য কিসের ভিত্তিতে ভ্রূণ ছেলে বা কন্যাশিশুর বলে শনাক্ত করা হয়েছে, সেটি প্রতিবেদনে স্পষ্ট নয়। দেশের আইন অনুযায়ী, যে সময় পর্যন্ত এমআর বৈধ, সেই সময় পর্যন্ত আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। ফলে গর্ভপাতের সময় ওই মায়েরা অনিরাপদ গর্ভপাতের দিকে ঝুঁকেছিলেন বলে ধারণা করা যেতে পারে। জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রীর সুলভ না হওয়ার কারণেও অনেকে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের শিকার হন।

চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট গর্ভের সন্তানের লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ না করতে আদেশ দিয়েছেন। হাসপাতাল, ক্লিনিক ও রোগনির্ণয় কেন্দ্রগুলো যাতে গর্ভাবস্থায় লিঙ্গ পরিচয় শনাক্তকরণকে নিরুৎসাহিত করে এবং এ–সংক্রান্ত জাতীয় নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এ ছাড়া দণ্ডবিধির ৩১২ থেকে ৩১৬ ধারায় গর্ভপাত বিষয়ে বলা আছে, মায়ের জীবন রক্ষার প্রয়োজন ছাড়া গর্ভপাত করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৯ সালে এমআর বৈধ ঘোষণা করে। মাসিক বন্ধ থাকলে ১০ সপ্তাহের মধ্যে প্যারামেডিকদের দিয়ে ও ১২ সপ্তাহের মধ্যে চিকিৎসকদের মাধ্যমে এমআর করা বৈধ। এমআর ও গর্ভপাত–পরবর্তী সেবা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি জাতীয় নির্দেশনাও (গাইডলাইন) আছে।

তবে দেশে যে অবৈধভাবে গর্ভপাত করা হয় না সেটিও জোর দিয়ে বলা যায় না। বিভিন্ন গণমাধ্যমে হাসপাতালের আশপাশের ডাস্টবিনে ভ্রূণ পড়ে থাকার যেসব প্রতিবেদন আসে সেখান থেকে এটি অনুমান করা যেতে পারে। যদিও এ সংক্রান্ত কোনো বিস্তারিত গবেষণা নেই।

আরেকটি বিষয় বিবেচ্য: এশীয় সমাজে ছেলেসন্তান পছন্দের অগ্রাধিকারে থাকায় কন্যাশিশুর ভ্রূণ গর্ভপাত করানোর ঘটনা বেশি। বিশেষ করে ভারত, চীন ও নেপালে এই প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশেও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে কি না, তা পর্যবেক্ষণে রাখার কথা কয়েক বছর ধরে বলছেন প্রজননস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর থেকে গর্ভপাত বিষয়ে প্রতিবেদনে মাঠপর্যায়ের তথ্য প্রকাশ শুরু করেছে বিবিএস।

এদিকে যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য অধিকারবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ‘গাটমাকার ইনস্টিটিউট’ বাংলাদেশ বিষয়ে তথ্য দেয়। ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, ওই সময় বাংলাদেশে বছরে গড়ে ৫৩ লাখ ৩০ হাজার গর্ভধারণ হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ লাখ ৩০ হাজার গর্ভধারণই ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত। ফলে বছরে ১৫ লাখ ৮০ হাজার গর্ভপাতের ঘটনা ঘটে।

এ ছাড়া ২০১৪ সালের এমআর এবং অনিরাপদ গর্ভপাতের একটি পরিসংখ্যান দিয়েছে গাটমাকার ইনস্টিটিউট। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের প্রাক্কলিত হিসাব অনুযায়ী দেশব্যাপী স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে সম্পাদিত এমআর–এর সংখ্যা নিরূপণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার যা ২০১০ সালের তুলনায় ৩৪ শতাংশ কম।

অন্যদিকে ২০১৪ সালের প্রাক্কলিত হিসাব অনুযায়ী স্বপ্রণোদিত গর্ভপাতের সংখ্যা নিরূপণ করা হয়েছে ১১ লাখ ৯৪ হাজার এবং যার অধিকাংশই সম্পাদিত হয়েছে অনিরাপদ পরিবেশে অথবা অপশিক্ষণপ্রাপ্ত সেবা প্রদানকারীদের মাধ্যমে।

২০১৪ সালে ১৪-৪৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে এমআর–এর বার্ষিক হার প্রতি হাজারে ১০ জন যা ২০১০ সালে ছিল প্রতি হাজারে ১৭ জন।

২০১৪ সালে ১৪-৪৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে গর্ভপাতের বার্ষিক হার প্রতি হাজারে ২৯ জন। ২০১৪ সালে পরিচালিত গবেষণায় গর্ভপাতের সংখ্যা নিরূপণের জন্য পদ্ধতিগত পরিবর্তনের কারণে এই হার ২০১০ সালের সঙ্গে তুলনা করা হয়নি। গর্ভপাতের এই হার খুলনা বিভাগে সর্বোচ্চ (৩৯) এবং চট্টগ্রাম বিভাগে সর্বনিম্ন (১৮)।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত