ইসরায়েলের দ্বিরাষ্ট্র সমাধান প্রত্যাখ্যান অগ্রহণযোগ্য: জাতিসংঘ মহাসচিব 

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭: ৫৬
আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮: ৫৫

মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের ভিত্তিতে ‘দ্বিরাষ্ট্র সমাধান’ ইসরায়েলের দিক থেকে প্রত্যাখ্যান করাকে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এর ফলে গাজায় সংঘাত দীর্ঘায়িত হবে বলে মন্তব্য করেছেন। গত সোমবার গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বৈঠকে গুতেরেস বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে অস্বীকার করা কেবল উগ্রপন্থীদের উৎসাহিত করবে এবং সংঘাতকে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রসারিত করবে। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে গত সপ্তাহে দ্বিরাষ্ট্র সমাধান যেভাবে স্পষ্ট করে বারবার প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য।’ 

তিনি বলেন, ‘এই প্রত্যাখ্যান এবং ফিলিস্তিনি জনগণের রাষ্ট্রের অধিকার অস্বীকার করা অনির্দিষ্টকালের জন্য একটি সংঘাতকে দীর্ঘায়িত করবে। এ সংঘাত বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ 

গুতেরেস আরও বলেন, ভয়, ঘৃণা ও সহিংসতার অন্তহীন চক্র থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায় হচ্ছে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান। এটিকে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের বৈধ আকাঙ্ক্ষা পূরণের একমাত্র উপায় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

গুতেরেসকে উদ্ধৃত করে দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গাজার সমগ্র জনগোষ্ঠী এমনভাবে এবং গতিতে ধ্বংসের শিকার হচ্ছে, যা ইতিহাসে নজিরবিহীন। কোনো কিছুই গাজার জনগণের সম্মিলিত শাস্তিকে ন্যায্যতা দিতে পারে না।’ 

এ ছাড়া তিনি হামাস যোদ্ধাদের ইচ্ছাকৃত হত্যা, আঘাত করা, বেসামরিক নাগরিকদের অপহরণ, তাদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার ব্যবহারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। 

তিনি বলেন, ‘গাজায় পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ খাবারের অভাবে ভুগছে। ২২ লাখ মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে।’ হাসপাতালগুলোর সঙ্গে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধসে পড়ায় রোগ ছড়িয়ে পড়ছে উল্লেখ করে গুতেরেস সতর্ক করে বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত ওই অঞ্চলে ফিলিস্তিনিরা শুধু বোমা হামলায় নয়, কলেরা, আমাশয় ও হেপাটাইটিসেও মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। 

জাতিসংঘের কর্মী ও সহযোগীদের সব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, ‘গাজার ফিলিস্তিনি এবং যাঁরা তাদের সাহায্য করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন, তাঁদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া পরিস্থিতিতে কোনো কার্যকর মানবিক সহায়তা কার্যক্রম কাজ করতে পারে না।’

ছয় হাজার ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান গুতেরেস। তিনি আরও বলেন, বন্দীদের প্রতি অমানবিক আচরণের খবরে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। জিম্মিদের মুক্তি সহজতর করতে এবং মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা কমাতে, যেখানে ত্রাণ প্রয়োজন সেখানে পৌঁছানো নিশ্চিত করতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান তিনি।

লেবানন, ইয়েমেন, সিরিয়া ও ইরাকে চলমান সহিংসতার দিকে ইঙ্গিত করে গুতেরেস হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বৃহত্তর আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়ার ঝুঁকি এখন বাস্তবে পরিণত হচ্ছে।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনবিষয়ক প্রতিনিধি রিয়াদ মনসুর বলেন, কাম্পালায় জি-৭৭ বৈঠক থেকে শুরু করে ব্রাসেলসে ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং নিউইয়র্কে জাতিসংঘ পর্যন্ত বিশ্ব অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে। 

নেতানিয়াহু স্বার্থপরভাবে কেবল এক লক্ষ্যাভিমুখী রয়েছেন বলে দোষারোপ করেন তিনি বলেন, ‘যারা শান্তি চায় এবং যারা শান্তি অস্বীকার করতে চায়, তাদের মধ্যে বিভাজন রেখা টানতে হবে।’

বৈঠকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে, মধ্যপ্রাচ্যের বক্তারা অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতি এবং দ্রুত দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের দিকে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানান।

জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি বলেন, ‘এই গণহত্যা বন্ধ হোক। এখন অন্তত এই দুর্দশার অবসান ঘটাতে বাধ্য করে একটি বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব গ্রহণ করা উচিত। আপনারা সবাই দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানকে সমর্থন করেন, যা ইসরায়েল সরকার প্রত্যাখ্যান করছে।’

তিনি বলেন, ইসরায়েলি চরমপন্থীদের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ ও চরমপন্থী অ্যাজেন্ডার কাছে এ অঞ্চলের ভবিষ্যৎ জিম্মি হতে পারে না। 

লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ বউ হাবিব তাঁর দেশে (লেবাননে) যুদ্ধ সম্প্রসারণে ইসরায়েলি ফাঁদে না পড়ার জন্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। ‘আমরা কি আমাদের অতীতের ভুল থেকে কিছু শিখিনি; এটা কি আমাদের স্বীকার করার সময় নয় যে আমরা একে অপরকে অস্বীকার করতে পারি না?’

সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিনিধি লানা জাকি নুসেইবেহ বলেন, ‘আমরা ব্যর্থ স্থিতাবস্থায় ফিরে যাওয়াকে সমর্থন করব না। এর আগে, আমাদের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা নিয়ে সব পরিকল্পনা দ্বিরাষ্ট্র সমাধানে শেষ করেছিলাম। এখন দ্বিরাষ্ট্র সমাধান থেকে আমাদের সব আলোচনা শুরু করতে হবে।’

সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ালিদ এল-খেরেইজি ইসরায়েলের যুদ্ধাস্ত্রের নিন্দা জানিয়েছেন। 

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান বৈঠকে বলেন, ‘অন্যদের সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানানোর পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই ইসরায়েলি সরকারকে যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য করতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি সংঘাতে টেনে আনতে ইসরায়েলি সরকার যে ফাঁদ তৈরি করেছে, তা থেকে নিজেকে বের করে আনতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গাজায় শক্তি প্রয়োগ ও গণহত্যার অপরাধ করে নিরাপত্তা অর্জন করা যাবে না। হামাস তথাকথিত সম্পূর্ণ ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত গাজা ও পশ্চিম তীরে বেসামরিক নাগরিক হত্যা চলতে পারে না। কারণ, সেই সময় কখনই আসবে না।’

জাতিসংঘের ইসরায়েলি প্রতিনিধি গিলাদ এরদান যখন বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন তখন অনেক আরব প্রতিনিধি বৈঠক থেকে ওয়াকআউট করেন। এরদান বলেন, ‘বিশ্ব অ্যাসপিরিন দিয়ে ক্যানসারের চিকিৎসা করার চেষ্টা করছে। যুদ্ধবিরতির পক্ষে যারা সমর্থন করছে তাদের বুঝতে হবে, এর অর্থ হলো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাস ক্ষমতায় থাকবে, তারা পুনরায় সংগঠিত হবে এবং পুনরায় সশস্ত্র হবে এবং শিগগিরই ইসরায়েল আরেকটি হলোকাস্ট চেষ্টার মুখোমুখি হবে। আপনারা কি এই পরিণতি চান?’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এ যুদ্ধ ইসরায়েল বেছে নেয়নি। কিন্তু আমরা আমাদের ভবিষ্যৎকে রক্ষা করব, ঠিক যেমন আপনারা প্রত্যেকে আপনার দেশের ভবিষ্যৎকে রক্ষা করবেন।’

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে উপস্থিত থাকায় এরদান ইরানের হুমকির প্রতি জোর দেন। তিনি বলেন, ‘এভাবে সংঘাত ছড়িয়ে পড়া জাদুকরীভাবে হচ্ছে না। এটি পরিকল্পিত এবং নির্দেশিত।’

এরদান বলেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েমেনগামী অস্ত্রভর্তি নৌকা জব্দ করার ঘটনা থেকেই প্রমাণ হয়, কারা এই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী। ইরান সব সময় পর্দার আড়ালে থেকে কলকাঠি নাড়ে। এ অঞ্চলের প্রতিটি দেশই ইরানের সন্ত্রাসের আতঙ্কে প্রভাবিত হয়েছে। শিয়া আধিপত্য বিস্তারে এ দেশ কোনো কিছুতেই আটকাবে না।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আবু সাঈদকে ৪–৫ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়—শেখ হাসিনার দাবির সত্যতা কতটুকু

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

বিমানবন্দরে সাংবাদিক নূরুল কবীরকে হয়রানির তদন্তের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

ভারত ও তরুণ প্রজন্মের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রসঙ্গে যা বললেন মির্জা ফখরুল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত