বাংলাদেশে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় বন্ধে ৮ সংস্থার বিবৃতি

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৩, ১৩: ০৩
আপডেট : ০৩ মে ২০২৩, ১৪: ১২

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস আজ। মুক্ত সাংবাদিকতা ও স্বাধীন গণমাধ্যমের দাবিতে প্রতিবছর এই দিনে বিশ্বজুড়ে নানা কর্মসূচি পালিত হয়। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে বাংলাদেশে সরকারের নীতি ও কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করায় সাংবাদিক ও অন্যদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক ধরপাকড় নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে বিভিন্ন সংস্থা। 

এ বিষয়ে ‘বাংলাদেশ: এন্ড ক্র্যাকডাউন অ্যাগেইনস্ট জার্নালিস্টস অ্যান্ড ক্রিটিকস’ শিরোনামে আটটি স্বীকৃত স্বাধীন সংস্থা স্বাক্ষরিত এক বিবৃতি প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এতে বলা হয়, ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসে সরকার ও সমর্থকদের দ্বারা ৫৬ জন সাংবাদিককে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। কঠোর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) অধীনে গ্রেপ্তারের ঝুঁকিতে রয়েছেন বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা। সেই সঙ্গে হয়রানি, নজরদারি ও হামলার শিকার হচ্ছেন সরকারসমর্থকদের দ্বারা।

সাম্প্রতিক উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, গত ৪ এপ্রিল চট্টগ্রামের দোহাজারীতে আইয়ুব মিয়াজী (৩৪) নামের এক সাংবাদিককে মারধর করে দুর্বৃত্তরা দোতলা থেকে ফেলে দেয়। তবে প্রাণে বেঁচে যান আইয়ুব। তাঁর দাবি, অবৈধ জমি দখল ও পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিষয়ে প্রতিবেদন করার প্রতিশোধ হিসেবে এই হামলা।

এর আগে গেল ৩০ মার্চ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম প্রথম আলোর সংবাদদাতা শামসুজ্জামান শামসকে গ্রেপ্তার করা হয়। দেশে জীবনযাত্রার ব্যয় সম্পর্কিত প্রতিবেদন করায় মাঝরাতে তাঁকে আটক করা হয়েছিল। শামসের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের মধ্যে ‘জাতির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন’ হয় এমন খবর প্রকাশের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরীফ এবং একজন অজ্ঞাতনামা ক্যামেরাম্যানের বিরুদ্ধেও একই প্রতিবেদনের কারণে মামলা করা হয়েছিল। বর্তমানে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন শামস। শামসের গ্রেপ্তারের কয়েক দিন পর সংসদে এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম আলোকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দল, গণতন্ত্র ও জনগণের ‘শত্রু’ বলে অভিহিত করেন। শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর একদল তরুণ প্রথম আলো কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ ওঠে।

সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে সরকারি নীতি, দুর্নীতির খবর এবং অবৈধ ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের মতো বিষয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ক্রমাগত ব্যবহারে আমরা বিরক্ত। এই আইন যারা ভিন্নমত পোষণ করে, তাদের জন্য বড় আকারের জরিমানা ও কারাদণ্ডের বৈধতা দেয়। এমনকি অনলাইনে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এমন সন্দেহের ভিত্তিতে পরোয়ানাবিহীন গ্রেপ্তারের অনুমতি দেয়।’ ঢাকাভিত্তিক থিংক ট্যাংক ‘সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ’ দ্বারা পরিচালিত জরিপ অনুসারে, ২০১৮ সালে আইনটি কার্যকরের পর থেকে ২০২৩ সালের মে মাসের শুরু পর্যন্ত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৩৩৯টি ডিএসএ মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অন্যান্য আইনকেও ব্যবহার করছে। উদাহরণ হিসেবে প্রতিবেদনে দৈনিক দিনকাল পত্রিকার ডিক্লারেশন ও মুদ্রণের ঘোষণাপত্র বাতিলের কথা উল্লেখ করা হয়। এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচন ঘিরে ‘গুজব’ ছড়ানো ঠেকাতে ৫৪টি নিউজ ওয়েবসাইট ব্লক করেছিল কর্তৃপক্ষ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর ক্রমবর্ধমান দমন-পীড়ন সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের ওপর প্রভাব ফেলছে এবং সাংবাদিকতার স্বাধীনতাকে মারাত্মকভাবে শ্বাসরুদ্ধ করছে বলে উল্লেখ করা হয়। 

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা সংস্থাগুলো হলো—
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল
সিভিকাস: ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন
কমিটি টু প্রজেক্ট জার্নানিস্টস
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত