ভারতকে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন। তিনি বলেছেন, ‘ভারতকে বাংলাদেশের জনগণের সরকারের সঙ্গেই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে হবে। বর্তমানে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে যে সরকারটি আছে, সেটি নির্বাচিত সরকার না হলেও এটি আপামর জনগণের সমর্থিত সরকার। সুতরাং ভারতকে এ সরকারের সঙ্গেই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে হবে।’

আজ মঙ্গলবার দুপুরে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কুমারভোগ এলাকায় শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন আসাদুজ্জামান রিপন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নির্বাচনকেন্দ্রিক একটি সংকটের মধ্যে রয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত, যাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে পারছে না। ভারতের সরকারের পক্ষ থেকে আমরা নানা ধরনের অসহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব দেখতে পাচ্ছি। শুধু ভারত ইস্যুই নয়, জাতীয় নিরাপত্তা থেকে শুরু করে, দেশের সব ধরনের সংকট দূর করতে একটি নির্বাচিত সরকার দরকার।’

নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রস্তাব রেখে ড. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সরকার গঠন করার জন্য যত দ্রুত সম্ভব একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দরকার। সেটি অবশ্যই এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন করতে হবে। আমরা আগেই বলেছি, ২০২৫ সালের মধ্যে আমরা নির্বাচন চাই। এটি দেশের জন্য ভালো, জনগণের জন্য ভালো, অন্তর্বর্তী সরকারের জন্যও ভালো। আর নির্বাচন করার জন্য একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করারও প্রয়োজন হবে। আমরা প্রত্যাশা করব, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানও ডক্টর ইউনূস হবেন।’

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে ভারতের সেনাপ্রধানের বক্তব্য প্রসঙ্গে ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘ভারতের সেনাপ্রধান বলেছেন বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকার এলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হবে। ভারত গত ১৫ বছর কোনো নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করছে? বাংলাদেশে তো গত ১৫ বছরে কোনো নির্বাচিত সরকার ছিল না। শেখ হাসিনা বাংলাদেশে কখনো নির্বাচিত সরকার ছিল না।’

ভারতকে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সংলাপে বসতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাঁরা (ভারত) নির্বাচিত সরকার বলতে যদি শেখ হাসিনার সরকারকে বুঝিয়ে থাকেন। তাহলে বলতে চাই, হাসিনা ভোট ডাকাতির সরকার ছিলেন। তিনি (শেখ হাসিনা) দিনের ভোট রাতে দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। আমি ভারতের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, ভারত কি অনির্বাচিত সরকার এবং জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে ক্ষমতার অপদখল করেছিল, সে ধরনের সরকারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী কি না। যদি এমনটি হয়, তাহলে তাদের আমরা জানিয়ে দিতে চাই, হাসিনা এ দেশে আর আসবে না। ভারতকে বাংলাদেশের জনগণের সরকারের সঙ্গেই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে হবে। বর্তমানে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে যে সরকারটি আছে, সেটি নির্বাচিত সরকার না হলেও এটি আপামর জনগণের সমর্থিত সরকার। সুতরাং ভারতকে এ সরকারের সঙ্গেই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে যদি কোনো সংকট থেকে থাকে, সে সংকট নিরসনে ভারতে বর্তমান সরকার এবং ভবিষ্যতে জনগণের নির্বাচিত সব কটি সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। আমরা ভারতসহ পৃথিবীর কোনো দেশের সঙ্গেই সম্পর্কের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, সংশয়, সন্দেহ থাকুক, তা চাই না। তাই বর্তমানে যেসব সংকট রয়েছে, তা নিরসনের জন্য ভারত যেন বর্তমান সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে।’

শ্রীনগরে থানা থেকে আসামি ছিনিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘তারেক রহমানের নির্দেশ দলের দুর্নাম হয়, দলের গঠনতন্ত্র ও আইনবিরোধী কাজ যে-ই, করুক তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলের নেতা বা কর্মী হিসেবে তাকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না। শ্রীনগরের ঘটনার সঙ্গে জড়িত মূল দায়ী যুবদল নেতা তরিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সেদিন যারা এ ঘটনাটি ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’

পুলিশকে উদ্দেশ্য করে এই নেতা বলেন, ‘পুলিশকে আমরা বাংলাদেশের জনগণের পুলিশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। পুলিশের মনোবল যেন ভেঙে না পড়ে, আমাদের দল নিঃসন্দেহে পুলিশের পাশে আছে। জনগণ তাদের পাশে আছে।’

শেখ হাসিনা সরকারের দুর্নীতি প্রসঙ্গে ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকার ও তার লোকজন বিদেশে ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। পদ্মা সেতু নির্মাণে ১০ হাজার কোটি টাকা লাগার কথা ছিল, কিন্তু লেগেছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। গণভবনে থাকার কথা ছিল জনগণের প্রতিনিধি। কিন্তু সেখানে থাকত গণ-ডাকাত। শেখ হাসিনা ছিল গুমের রানি।’

কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে লৌহজং উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি মো. শাহজাহান ব্যাপারীর সভাপতিত্বে ও উপজেলা যুবদলের সদস্য আলামিন দেওয়ানের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সদস্য মোশাররফ হোসেন নসু ও জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক আতাউর রহমান খান।

এদিন উপজেলার কুমারভোগ ইউনিয়ন, হলদিয়া ইউনিয়ন ও মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের সহস্রাধিক শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়।